পঞ্চগড়ের সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে অনুপ্রবেশ করায় সালাম (৩৫) নামে এক বাংলাদেশি যুবককে পিটিয়ে হত্যার পর তার মরদেহ দীর্ঘ ৯ মাস ভারতে আটকে রাখা হয়েছিল। অবশেষে ভারতীয় পুলিশ তার মরদেহ বাংলাদেশে ফেরত দিয়েছে।
শনিবার (২০ মে) সন্ধ্যা ৬টার সময় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ী সীমান্তের ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে মরদেহটি দেশে আনা হয়। প্রথমে তেঁতুলিয়া মডেল থানা পুলিশ গ্রহণ করে আইনি প্রক্রিয়া ও সকল ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা সম্পন্ন করে মরদেহটি পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করলে রাতেই পুলিশের কাছ থেকে মরদেহটি গ্রহণ করে পরিবারের সদস্যরা। এর আগে বাংলাবান্ধা বন্দর এলাকায় বিজিবি- বিএসএফ সদস্য, জনপ্রতিনিধি ও নিহতের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
নিহত যুবকের নাম সালাম (৩৫)। তিনি বাংলাদেশের পঞ্চগড় জেলা সদরের সাতমেরা ইউনিয়নের কাহারপাড়া এলাকার মৃত শহিদুল ইসলামের ছেলে। জুনায়িদ নামে তার একটি ছয় মাসের ছেলে সন্তান রয়েছে।
নিহতের পরিবারের সদস্যরা ও স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, ঘটনার দীর্ঘ সময় ধরে ভারত থেকে মরদেহটি দেশে আনার জন্য সকল দফতরে যোগাযোগ করা হয়। প্রায় ৯ মাস পর ভারতীয় পুলিশ তাদের সকল প্রক্রিয়া শেষে শনিবার সন্ধ্যায় দেশে পাঠায়। আমরা পুলিশের কাছ থেকে মরদেহটি গ্রহণ করেছি। তবে এই হত্যার ঘটনায় যারা সরাসরি জড়িত আছে তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির দাবি করছি। না হয় পরবর্তীতে আরও অনেকের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। সব দেশে আইন আছে। আর আইনের ওপর কেউ না। তারা এই নির্মম হত্যাকাণ্ডটি না করে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে পারতো।
নিহতের স্ত্রী জেরিন কান্নায় ভেঙে পড়ে বিলাপ করতে করতে সময় সংবাদকে বলেন, ঘটনার আগের দিন রাতে সে (স্বামী সালাম) দরজা বন্ধ করে ঘুমাতে যেতে বলে। এরপর সকালে উঠে জানতে পারি তাকে ভারতীয়রা হত্যা করেছে।
নিহতের বড় ভাই আলিম হোসেন সময় সংবাদকে বলেন, মরদেহ পাওয়ার জন্য বিভিন্ন জায়গায় আবেদন করেছিলাম। তেমন কোন সাড়া পাচ্ছিলাম না। সকলেই অপেক্ষায় ছিলাম কবে তার মরদেহ দেশে আনা সম্ভব হবে। দীর্ঘ ৯ মাস পর ভারতের সাড়া পেয়ে আমি একজন ইউপি সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে গত ১৬ মে ভারতে যাই, ছোট ভাইয়ের মরদেহ দেশে আনার জন্য। শনিবার দেশে আনা হয়েছে। তবে অবৈধ ভাবে গেলেও দেশে বিচার আছে, এভাবে হত্যা করে ভারতীয়রা আইন লঙ্ঘন করেছে। আমরা এর বিচার চাই।
এদিকে মরদেহ পাওয়ার পর সকল আইনি ব্যবস্থা শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে সময় সংবাদকে জানান পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ মিঞা।
পঞ্চগড়ের সাতমেরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম রবি সময় সংবাদকে বলেন, ঘটনার পর থেকে তার পরিবার আমার কাছে আসলে তাদের নিয়ে বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করেছি মরদেহটি পাওয়ার জন্য। প্রায় এক সময় পরিবারের সকলেই আশা ছেড়ে দিয়েছিল। তবে অবশেষে ৯ মাস পর মরদেহটি প্রশাসনের সহায়তায় দেশে ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে।
মরদেহ ফেরত দিতে দীর্ঘ সময়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা বলছে বিভিন্ন প্রসেস করতে হচ্ছে। তাই এই ৯ মাস সময় লেগেছে।
এদিকে মরদেহ দেশে ফেরত দিতে দীর্ঘ সময় নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা।
এর আগে গত ২০২২ সালের ২৩ আগস্ট (মঙ্গলবার) রাতে বাংলাদেশি যুবক সালাম কয়েকজন যুবকের সঙ্গে রাজগঞ্জ ব্লকের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকার লাগোয়া ১৯৫ ব্যাটালিয়নের চাউলহাটি সংলগ্ন বড়ুয়াপাড়া গ্রামে অবৈধ ভাবে প্রবেশ করে। সে সময় স্থানীয়রা টের পেয়ে তাদের ধাওয়া করলে লাগোয়া গ্রামে চা বাগানে লুকায়। কিন্তু, রাত থেকে গ্রামবাসীদের পাহারায় পরদিন ২৪ আগস্ট (বুধবার) সকালের সূর্যের আলোয় সালামকে ধরতে সক্ষম হয়ে গণপিটুনি দেয়, এতে তার মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে বিষয়টি তদন্তে নামে ভারতের রাজগঞ্জ থানার পুলিশ। এরপর ভারতীয় পুলিশ মরদেহটি ভারতীয় একটি হাসপাতালে হিমঘরে রেখে দেয়। অবশেষে দীর্ঘ ৯ মাস পর পরিবারের সদস্যদের চেষ্টায় সালামের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়।