২৩ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ১২:১২:৩৬ অপরাহ্ন


বশেমুরবিপ্রবি ছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-০২-২০২২
বশেমুরবিপ্রবি ছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ বশেমুরবিপ্রবি ছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা।


গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) এক ছাত্রী (২২) দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৬টা থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ঘোনাপাড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অবস্থান করে অবরোধ ঘোষণা করেন। বিকাল ৫টায় ১১ ঘণ্টার অবরোধ শেষে ধর্ষকদের শনাক্ত ও আটকের জন্য ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন শিক্ষার্থীরা। এসময়ে অজ্ঞাতরা শিক্ষার্থীদের উপরে হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে বলে তারা জানান।

এ ঘটনায় দোষীদের আটক ও শাস্তির দাবিতে থানা ঘেরাও এবং ১১ ঘণ্টা ধরে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। তবে অবরোধ চলাকালে শিক্ষার্থীদের উপরে দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।  

এদিকে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘসময় অবরোধের ফলে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এসময় কয়েক হাজার গাড়ি যানজটে পড়ে। বিকাল পাঁচটায় শিক্ষার্থীদের উপরে হামলার পরে অবরোধ ভেঙে গেলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এর আগে ধর্ষণের সাথে জড়িতদের আটকের দাবিতে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে গিয়ে বুধবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত গোপালগঞ্জ সদর থানা ঘেরাও করে রাখেন। পরে সকাল ৬টায় ঘোনাপাড়া গিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করেন। এছাড়া এ ঘটনায় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ভবন তালাবদ্ধ করে দেয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষাসহ সকল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

বশেমুরবিপ্রবি ছাত্রী ধর্ষণের প্রতিবাদে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধবশেমুরবিপ্রবি ছাত্রী ধর্ষণের প্রতিবাদে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ

অবরোধকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, ধর্ষকদের দ্রুত আটক করে তাদের পরিচয় প্রকাশের জন্য আমরা ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছি। এর মধ্যে জড়িতদের খুঁজে বের করা না হলে আমরা কঠিন আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবো। এসময় শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এলাকাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেখানে অবস্থান করে সেসব জায়গায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও নিরাপত্তা বলয় তৈরিসহ আমরা চার দফা দাবি জানিয়েছি। এছাড়া আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে যারা হামলা চালিয়েছে তাদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

ধর্ষণের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নিজে বাদী হয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানায় মামলা করেছেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে নয়টার দিকে ভুক্তভোগী ছাত্রী তার এক বন্ধুর সাথে গোপালগঞ্জ সদরের নবীনবাগ হেলিপ্যাডের সামনে থেকে হেঁটে যাচ্ছিলেন। এসময় ৫ থেকে ৭ জন বখাটে এসে বন্ধু সহ তাকে গোপালগঞ্জ জেলা স্কুলের নির্মাণাধীন ভবনে তুলে নিয়ে যায়। সেখানে বন্ধুকে আটকে রেখে মারধর করা হয় ও ওই ছাত্রী দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন। 

ভুক্তভোগী ছাত্রী তার সহপাঠীদের ঘটনা জানানোর পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।

এদিকে দুপুর আড়াইটায় অবরোধকারী শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলার জন্য ঘোনাপাড়া ঘটনাস্থলে যান জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা, পুলিশ সুপার আয়েশা সিদ্দিকা, গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খান, ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও প্রশাসনের কর্মকতারা। তারা অভিযুক্তদের আটকের আশ্বাস দিয়ে শিক্ষার্থীদের অবরোধ তুলে নেওয়ার অনুরোধ করেন। এসময় জেলা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়ার সাথে সহমত পোষণ করা হয়। এছাড়া দোষীদের আটক ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি, কর্মচারী সমিতিসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন বিবৃতি দিয়েছে।

গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পিয়াস সিকদার (২২), অন্তর (২১) ও জীবনকে (২০) আটক করে থানায় আনা হয়েছে। এছাড়া ভিডিও ফুটেজ দেখে আসামিদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।

গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) নিহাদ আদনান তাইয়ান বলেন, 'তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে অভিযান চালানো হয়েছে। আমাদের টিম অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে তিনজনকে জড়িত সন্দেহে আটক করা হয়েছে। আশা করছি খুব শিগগিরই জড়িত সকলকে আটক করা হবে।'

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. রাজিউর রহমান বলেন, 'আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলেছি এবং আমি নিজে এ ঘটনায় বাদী হয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানায় মামলা দায়ের করেছি।'

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. একিউএম মাহবুব বলেন, 'আমরা সকাল থেকেই ঘোনাপাড়া অবরোধস্থলে আছি। যে ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক ও ঘৃণ্য। জড়িতদের দ্রুত আটকের জন্য প্রশাসনের সাথে আমরা বারবার কথা বলে যাচ্ছি।'

রাজশাহীর সময় /এএইচ