২৮ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৭:৩৬:২২ অপরাহ্ন


যে ৩ গুণের মানুষের জন্য জাহান্নাম হারাম
ধর্ম ডেস্ক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-০৬-২০২৩
যে ৩ গুণের মানুষের জন্য জাহান্নাম হারাম ফাইল ফটো


বিশেষ তিনটি গুণ। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশেষ এই তিনগুণের অধিকারীদের জন্য জাহান্নাম হারাম বলে ঘোষণা দিয়েছেন। গুণ তিনটি কী? তিনগুণের অধিকারীই বা কারা?

জাহান্নাম থেকে মুক্তির ঘোষণা আনন্দের। যাদের জন্য এ ঘোষণা তাদের আনন্দ আরও বেশি। জাহান্নাম হারাম হওয়ার ঘোষণাটি হাদিসে পাকে এভাবে ওঠে এসেছে-

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদের সবাইকে জানিয়ে দেব না, কোন ব্যক্তির জন্য জাহান্নাম হারাম এবং জাহান্নামের জন্য কোন ব্যক্তি হারাম?

যে ব্যক্তি (ওই ব্যক্তি হলো ৩টি বিশেষ গুণের অধিকারী)-

১. মানুষের কাছাকাছি হওয়া। (কর্মগুণে মানুষের কাছে জনপ্রিয়)

২. সহজ-সরল, নম্রভাষী। (সুন্দর ও উত্তম ভাষায় কথা বলা ব্যক্তি) এবং

৩. সদাচরণকারী (আচরণে বিনয়ী হওয়া ব্যক্তি)।’ (তিরমিজি)

হাদিসে উল্লেখিত বিশেষ ৩টি গুণ বাস্তবায়ন করা সবার জন্যই সহজ। মানুষ আপন হোক কিংবা পর হোক সবার সঙ্গে এমন আচরণ করা। যার ফলে মানুষ কোনোভাবেই তাকে পর মনে না করে। তার গুণের কাছে পরস্পর এক অপরের কাছাকাছি হয়।

কথা বলার ক্ষেত্রে একেবারে নরম ও সহজ সরল হতে হবে। এভাবে কথা বলতে কোরআনের একাধিক আয়াতে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَقُولُواْ لِلنَّاسِ حُسْناً

‘মানুষের সঙ্গে (নরম ভাষায়) উত্তম কথাবার্তা বলবে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ৮৩)

আবার উত্তম আচরণ ও বিনয়ী হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করার কথা বলেছেন নবিজি। এমন অনেক দোয়া রয়েছে যেসব দোয়ায় মানুষ একে অপরের প্রতি উত্তম আচরণকারী ও বিনয়ী হবে। তাহলো-

১. اللَّهُمَّ اهْدِنِي لأَحْسَنِ الأَعْمَالِ وَأَحْسَنِ الأَخْلاقِ ، فَإِنَّهُ لا يَهْدِي لأَحْسَنِهَا إِلا أَنْتَ ، وَقِنِي سَيِّءَ الأَعْمَالِ وَسَيِّءَ الأَخْلاقِ ، فَإِنَّهُ لا يَقِي سَيِّئَهَا إِلا أَنْتَ

উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মাহদিনি লিআহসানিল আমালি ওয়া আহসানিল আখলাকি; ফাইন্নাহু লা ইয়াহুদি লিআহসানিহা ইল্লা আংতা; ওয়া ক্বিনি সায়্যিআল আমালি ওয়া সাইয়্যিয়াল আখলাকি; ফাইন্নাহু লা ইয়াক্বি সাইয়্যিআহা ইল্লা আংতা।’

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমাকে সর্বোত্তম কাজ ও উন্নত চরিত্রের পথ দেখাও। কেননা, তুমি ছাড়া এ পথের সন্ধান অন্য কেউ দিতে পারে না। আর অন্যায় কাজ ও খারাপ চরিত্র থেকে আমাকে রক্ষা কর। কেননা, তুমি ছাড়া অন্য কেউ এ থেকে রক্ষা করতে পারে না।’ (নাসাঈ)

২. اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ مُنْكَرَاتِ الْأَخْلَاقِ، وَالْأَعْمَالِ، وَالْأَهْوَاءِ والْأَدْوَاءِ

উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন মুনকারাতিল আখলাকি ওয়াল আমালি ওয়াল আহওয়ায়ি ওয়াল আদওয়ায়ি।’

অর্থ: হে আল্লাহ! তোমার কাছে খারাপ চরিত্র, অন্যায় কাজ, কু-প্রবৃত্তি এবং দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে আশ্রয় চাই।’ (তিরমিজি)

৩. اللَّهُمَّ كَمَا حَسَّنْتَ خَلْقِي فَأَحْسِنْ خُلُقِي

উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা কামা হাসসানতা খালকি ফা-আহসিন খুলুকি।’

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার দেহের অবয়ব যেমন সুন্দর করেছ তেমনি আমার চরিত্রকেও সুন্দর করে দাও।’ (মুসনাদে আহমাদ)

৪.  اللَّهُمَّ مَنْ وَلِىَ مِنْ أَمْرِ أُمَّتِى شَيْئًا فَشَقَّ عَلَيْهِمْ فَاشْقُقْ عَلَيْهِ وَمَنْ وَلِىَ مِنْ أَمْرِ أُمَّتِى شَيْئًا فَرَفَقَ بِهِمْ فَارْفُقْ بِهِ

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা মান ওয়ালিয়া মিন আমরি উম্মাতি শাইআন ফাশাক্কা আলাইহিম ফাশকুক আলাইহি ওয়া মান ওয়ালিয়া মিন আমরি উম্মাতি শাইআন ফারিফাকাবিহিম ফারফুকবিহি।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! কেউ আমার উম্মতের কোনো বিষয়ে দায়িত্বশীল হয়ে যদি তাদের সঙ্গে কঠিন আচরণ করে তবে তুমিও তার সঙ্গে কঠিন আচরণ কর । আর কেউ কোনো বিষয়ে দায়িত্বশীল হয়ে যদি তাদের সঙ্গে নম্রতা সুলভ আচরণ করে তবে তার প্রতি তুমিও দয়াশীল হও।’ (মুসলিম)

৫. اللَّهُمَّ أَلِّفْ بَيْنَ قُلُوبِنَا، وَأَصْلِحْ ذَاتَ بَيْنِنَا

উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা আল্লিফ বাইনা কুলুবিনা ওয়া আসলিহ জাতা বাইনানা।’

অর্থ: হে আল্লাহ! আমাদের সব হৃদয়ের মাঝে বন্ধুত্বপূর্ণ সুসম্পর্ক তৈরি করে দাও আর আমাদের (বিবদমান বিষয়গুলো) সমাধান করে দাও।’ (বুখারি)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, উল্লেখিত হাদিসের ওপর আমল করে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করা। পরস্পর কাছাকাছি অবস্থান, সুন্দর কথা বলা ও উত্তম আচরণ করা। তবেই তার জন্য জাহান্নাম হারাম হবে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসের আলোকে নিজেদের রঙিন করার তাওফিক দান করুন। উল্লেখি তিনটি বিশেষ গুণের অধিকারী হওয়ার তাওফিক দান করুন। জাহান্নাম থেকে মুক্তিতে আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।