২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ১১:০৯:৩১ পূর্বাহ্ন


লাইটহাউজ প্রকল্পে দুর্নীতির অনুসন্ধানে দুদক
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-০৬-২০২৩
লাইটহাউজ প্রকল্পে দুর্নীতির অনুসন্ধানে দুদক ফাইল ফটো


নৌ পরিবহন অধিদফতরের লাইটহাউজসহ বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে প্রকল্পের সাত কর্মকর্তাকে ডেকে প্রথম দফা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। দুদক সূত্র জানায়, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের এস্টাব্লিশমেন্ট অব গ্লোবাল মেরিটাইম ডিস্ট্রেস অ্যান্ড সেফটি সিস্টেম অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটেড মেরিটাইম নেভিগেশন সিস্টেম (ইজিআইএমএনএস) প্রকল্পের কাজে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। এ জন্য অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে দুদকের উপ-পরিচালক রতন কুমার দাশকে। ইতোমধ্যে অনুসন্ধান কর্মকর্তা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতজনকে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এ ছাড়া জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ক্যাপ্টেন আবু সাঈদ মো: দেলোয়ার রহমানকে খুব শিগগিরই নোটিশ পাঠিয়ে দুদকে তলব করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে। ইজিআইএমএনএস প্রকল্পের পরিচালক দেলোয়ার রহমান নৌ পরিবহন অধিদফতরের একজন স্থায়ী নটিক্যাল সার্ভেয়ার।

দুদক যাদের ইতোমধ্যে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, তারা হলেন- প্রকল্পের ডেপুটি নটিক্যাল সার্ভেয়ার (ডিএনএস) ক্যাপ্টেন ফরহাদ জলিল বিপ্লব, দুজন সহকারী পরিচালক (এপিডি) রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ ও নাজমুল হোসাইন, জুনিয়র ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ার মোবাশ্বের রহমান ফাহিম, উপ-প্রকল্প পরিচালক (ডিপিডি) ক্যাপ্টেন আবু হায়াৎ আশরাফুল আলম, এপিডি পতিত পবন দাস ও সহকারী ইলেক্ট্রিশিয়ান সাইফুল ইসলাম। এদের মধ্যে সবার আগে ফরহাদ জলিল বিপ্লবকে নোটিশ পাঠিয়ে ২২ মে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা। ১৮ মে নোটিশ পাঠিয়ে ২৩ মে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, নাজমুল হোসাইন ও মোবাশ্বের রহমান ফাহিমকে। সর্বশেষ ২৮ মে আবু হায়াৎ আশরাফুল আলম, পতিত পবন দাস ও সাইফুল ইসলামকে নোটিশ পাঠানো হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় ৩১ মে। দুদক কর্মকর্তার জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হওয়া প্রকল্পের সাত কর্মকর্তার মধ্যে ডেপুটি নটিক্যাল সার্ভেয়ার ফরহাদ জলিল বিপ্লব, এপিডি পতিত পবন দাস ও সহকারী ইলেক্ট্রিশিয়ান সাইফুল ইসলাম পিডি আবু সাঈদ দেলোয়ার রহমানের অন্যতম সহযোগী।

দক্ষিণ কোরিয়ার ঋণসহায়তা ও বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব তহবিলে চলমান ইজিআইএমএনএস প্রকল্পটি ‘লাইটহাউজ’ বা বাতিঘর প্রকল্প নামেই বেশি পরিচিত। দুই দেশের যৌথ অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে নৌ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থা নৌ পরিবহন অধিদফতর। এর আওতায় রয়েছে দেশের বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকায় সাতটি লাইটহাউজ ও সাতটি রেডিও স্টেশনসহ সেখানে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো স্থাপন এবং রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওয়ে নৌ পরিবহন অধিদফতরের ১১তলা বিশিষ্ট নিজস্ব কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল (সিএ্যান্ডসি) ভবন নির্মাণ।

তবে নৌ পরিবহন খাতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে শুরু থেকে বিভিন্ন স্তরে সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এমনকি নৌ অধিদফতরের সদ্য বিদায়ী মহাপরিচালক কমডোর মো: নিজামুল হক নিজেও পিডি ও কোরিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এলজি আল সামি কনস্ট্রাকশনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। এ দিকে নৌ মন্ত্রণালয় গঠিত উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে পিডি আবু সাঈদ মো: দেলোয়ার রহমান ও ডেপুটি নটিক্যাল সার্ভেয়ার ফরহাদ জলিল বিপ্লবসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের পাশাপাশি মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সামি কনস্ট্রাকশনের বিরুদ্ধে অনিয়মের সত্যতা পাওয়া গেছে। অধিদফতরের সদ্য সাবেক মহাপরিচালকের বিরুদ্ধেও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগের সত্যতা মিলেছে বলেও উল্লেখ করা হয় ওই প্রতিবেদনে। তবে দীর্ঘদিনেও মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি। এ ছাড়া অধিদফতরের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা প্রতিবেদনেও পিডি ও ডেপুটি নটিক্যাল সার্ভেয়ারসহ প্রকল্পের কয়েকজন কর্মকর্তা এবং সামি কনস্ট্রাকশনসহ একাধিক সহঠিকাদারের (সাব-কন্ট্রাক্টর) বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পাওয়া ৩৮২ কোটি টাকার এ প্রকল্প ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শুরু থেকেই অনিয়ম আর কালক্ষেপণের জালে আটকা পড়ে এ প্রকল্প। তিন দফা সংশোধনের মাধ্যমে সময় ও ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সর্বশেষ সময় ধরা হয়েছে ২০২৪ সালের ৩০ জুন। আর ব্যয় বাড়িয়ে করা হয়েছে ৭৭৯ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে তিনবার পিডি বদল করা হয়েছে।

দুদকের নোটিশ পেয়ে অনুসন্ধান কর্মকর্তার দফতরে হাজির হওয়ার কথা স্বীকার করে ডিপিডি আবু হায়াৎ আশরাফুল আলম দাবি করেন, তিনি কোনো দুর্নীতি অনিয়মের সাথে জড়িত নন। তিনি বলেন, প্রকল্পের যেসব বিল পরিশোধ করা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, সেসব বিলে আমার স্বাক্ষর নেই। এ ছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজে যেখানে অসঙ্গতি মনে হয়েছে, সেখানেই আমি আপত্তি দিয়েছি। এজন্য আমার বেতন ছয় মাস বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। তবে বকেয়া বেতন-ভাতা সম্প্রতি পেয়েছি।
জানতে চাইলে এপিডি নাজমুল হোসাইন বলেন, দুদক এ পর্যন্ত মোট সাতজনকে তলব করেছে। আমি ছাড়াও অন্যদের মধ্যে ডিপিডি আশরাফুল আলম ও ডিএনএস ফরহাদ জলিল বিপ্লবও আছেন। এক প্রশ্নের জবাবে নাজমুল হোসাইন বলেন, আমার যা বলার, তা অনুসন্ধান কর্মকর্তাকে বলে এসেছি। তবে আমি কোনো অন্যায় করিনি বরং অন্যায়ের বিরোধিতা করেছি। অথচ বিনা অপরাধে গত ছয় মাস আমার বেতন বন্ধ করে রাখা হয়েছে।