১২ মে ২০২৪, রবিবার, ০১:৪৩:০৫ অপরাহ্ন


নদী ভাঙন: আতঙ্কে যমুনা পাড়ের মানুষ
অনলাইন ডেস্ক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-০৬-২০২৩
নদী ভাঙন: আতঙ্কে যমুনা পাড়ের মানুষ যমুনায় তীব্র ভাঙন। ছবি: সময় সংবাদ


জামালপুরের ইসলামপুরে যমুনার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। চোখের পলকেই যেন সবকিছু লন্ডভন্ড করে দিয়েছে আগ্রাসী যমুনা। এতে নদীগর্ভে ভিটেমাটি হারিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন এলাকার মানুষ। কোরবানির ঈদকে ঘিরে আনন্দ নেই তাদের। সামর্থ্য নেই ছোট সন্তানদের নতুন জামার আবদার পূরণের; বহু কষ্টে দিন কাটছে তাদের।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নদী ভাঙন এতই তীব্র যে নদীর পাড়ের মানুষ তাদের ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার সময়টুকুও পাচ্ছেন না। ইতোমধ্যে কাঠমা পশ্চিমপাড়া নদী ভাঙনের কবলে।


যমুনায় তীব্র ভাঙন

যমুনার পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে বিপদ সীমার ৮৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানি কমে যাওয়ায় ইসলামপুর উপজেলার নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের কাঠমা এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে উপজেলার নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের কাজলা, কাঠমা, ব্রহ্মউত্তোর ও তারতাপাড়া গ্রামের দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি ও কয়েকশত বিঘা ফসিল জমি যমুনা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনে চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন অনেক পরিবার।

হুমকির মুখে স্থাপনা

সরকারি-বেসরকারি অসংখ্য স্থাপনা ‍হুমকির মুখে রয়েছে। রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, মাদ্রাসা, অর্ধশত বাড়িঘর ও শত শত হেক্টর ফসিল জমি যেকোনো সময় যমুনার কড়াল গ্রাসে পড়তে পারে। ওই এলাকার খেটে খাওয়া মানুষ ঘরবাড়ি-জিনিসপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। কেউ কেউ নিজের ভিটেমাটি হারিয়ে অন্যের জমির ওপর আশ্রয় নিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

কাটমা গ্রামের আবদুল কাদের জানান, দুদিন হলো যমুনার পানি কমতে শুরু করেছে। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র ভাঙন শুরু হয়। পানি কমলে পাড় জেগে উঠে। ওই সময় নদী ভাঙন আরও তীব্র আকার ধারণ করে।

হুমকির মুখে আশ্রয়ণ প্রকল্প

কুলকান্দী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান বলেন, আমার ইউনিয়নের জিগেতলা গ্রামে যমুনার তীব্র ভাঙন চলছে। হুমকির মুখে পড়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্প ও প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। এ ছাড়া নদী ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বকশিগঞ্জ উপজেলা নিলক্ষিয়া ইউনিয়নে কুশলনগর গ্রামে ঘরবাড়ি ও ইসলামপুর উপজেলার গাইবান্ধা  ইউনিয়নের আগুনের চরগ্রাম।

ভাঙন রোধে স্থানীয়দের চাওয়া

নোয়ারপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী রোমান হাসান বলেন, আমার ইউনিয়নে বেশিভাগ মানুষ খেটে খাওয়া। তারা ত্রাণ বা অন্য কোনো সাহায্য চান না। তারা চান নদী ভাঙন রোধে একটি স্থায়ী সমাধান ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ; যেন তারা নিজ বাড়িতে বসবাস করে নিজের জমি চাষবাস করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারেন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান টিটু জানান, যমুনার ভাঙন প্রতিরোধে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করা হয়ে থাকে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা চিহ্নিত করে তালিকা জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠিয়েছি।

স্থানীয় প্রশাসনের আশ্বাস

ইসলামপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তানভীর হাসান রুমান বলেন, বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। বন্যা ও নদী ভাঙন মোকাবেলায় সরকারের সব রকমের প্রস্তুতি রয়েছে।

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, ভাঙন প্রতিরোধে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অর্থ বরাদ্দ পেলে দ্রুত সময়ের মধ্যে জিও ব্যাগ ফেলা হবে। জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেললে অনেক স্থাপনা রক্ষা সম্ভব। এই এলাকাটির ভাঙন ঠেকাতে  প্রকল্প হাতে নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।