২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ০৪:১২:৩৯ অপরাহ্ন


মাদকের অভিযানে উদাসীন মতিহার থানা পুলিশ !
স্টাফ রিপোর্টার :
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-০৩-২০২২
মাদকের অভিযানে উদাসীন মতিহার থানা পুলিশ ! মাদকের অভিযানে উদাসীন মতিহার থানা পুলিশ !


পদ্মানদী তীরবর্তী এলাকা মতিহার থানা। এই এলাকাজুড়ে রয়েছে ভারতের সীমান্ত এলাকা। যার কারণে এসব এলাকায় মাদকের ব্যবসা চলে বেশ রমরমা। কিন্তু এসব মাদক সমৃদ্ধ এলাকাগুলোতে পুলিশি অভিযান পরিচালনায় উদাসীন মতিহার থানা পুলিশ। 

স্থানীয়দের ভাষ্য, রাজশাহী নগরীতে মতিহার থানা এলাকা হচ্ছে এক নম্বর মাদক প্রবণ অঞ্চল। এ অঞ্চলকে প্রশাসনিকভাবেও রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। গত ১৩ ফেব্রুয়ারিতেও তালাইমারিতে নগরীর গোয়েন্দা পুলিশের মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনাকালে দুই পুলিশ সদস্যকে এক মাদক কারবারি আঘাত করে। তার মধ্যে এক গোয়েন্দা পুলিশের কন্সটেবল মাথায় ও হাতে হাসুয়ার কোপ খেয়েছেন। এছাড়াও এই মতিহার এলাকায় বছর চারেক আগে এক পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে গুরুতর যখম করে চান্দু বাবু, তার ছেলে বাচ্চু ও তার জামাই। এরা সকলেই মাদক ব্যবসার সিন্ডিকেটের সাথে সম্পৃক্ত। তবে বিগত কয়েক মাস ধরে এ মাদক প্রবণ এলাকায় মাদক বিরোধী অভিযান না পরিচালনা করার জন্য মাদকের সহজলভ্যতা ব্যাপক হারে বেড়েছে।

এদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় (রুয়েট) অভ্যান্তরে ফেনসিডিলের কারবার চালাচ্ছে পলাশ। তাকে সহয়োগিতা করছে রুয়েটের মাদকাশক্ত কয়েকজন কর্মচারী। পলাশ মহানগরীর বোয়ালিয়া থানাধিন বালিয়া পুকুর এলাকার বাসিন্দা ও একাধিক মাদক মামলার আসামী।

মতিহার থানাধীন তালাইমারী, কাজলা ফুলতলা, জাহাজঘাট, মহব্বতের ঘাট, ডাসমারী স্কুল মোড়, মালেকের মোড়, সাত বাড়িয়া, সুরাপানের মোড়, অবদা, চরশ্যামপুর এলাকায় প্রায় আড়াই শতাধিক মাদক কারবারি রয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছে শতাধিক পাইকারী মাদক কারবারী। প্রকাশ্যেই তারা  মাদকের কারবার চালাচ্ছে। 

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, মতিহারের আলোচিত ও একাধিক মাদক মামলার আসামী ডাসমারী স্কুল মোড় এলাকার মৃত মুক্তারের ছেলে ফেন্সি ডিলার পালা ও তার পার্টনার পদ¥া চরের ইমরানের ছেলে আক্কাস ও নাজিমের ছেলে জামাল। এছাড়াও রয়েছে ডাসমারী স্কুল এলাকার জাকা, ডাসমারি স্কুলের পূর্বের মাদক ব্যবসায়ী মিলন, মালেকের মোড় এলাকার মালেকের দুই ছেলে কাবিল ও হাবিল, জাহাজঘাট এলাকার মোয়াজ্জেমের তিন ছেলে সজিব, আলামিন, রাজিব। কাজলা এলাকার জলিলের জামাই ইয়াবার ডিলার মুরগী রানা। অন্যদিকে ভাসানের ছেলে আলিম, লিয়াকতের ছেলে জাব্বার (জেলে), ডাসমারী ফিল্ড এলাকার জিল্লুর ছেলে মাদক ডিলার পিন্টু। রাবি হরিজন কলোনির পারভেজের ২ ছেলে বিপু ও দিপু। হরিজন পল্লী এলাকায় ফেনসিডিল, ইয়াবা, হেরোইন ও গাঁজার রমরমা হাট বসিয়েছে তারা। 

তালিকায় আরো রয়েছেন মিজানের মোড় এলাকায় রবিউল, আকতার, মিঠু, শহিদ, আসলাম, শাহীন, কামরুল, আলিম, কাদো, চাম্পাসহ আরো শতাধিক ব্যবসায়ী। আমজাদের মোড় এলাকায় বিলুর ছেলে আকতার ও তার দুই ভাই। ডাসমারি এলাকার আব্দুস সালামের ছেলে সজিব। মতিহার থানাধীন তালাইমারি বাদুড়তলার কমেলা।

স্থানীয় ও সুশীল সমাজের অভিযোগের প্রেক্ষিতে মাঝে মধ্যে নগরীর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ অভিযান করলেও মতিহার থানার অভিযানে মাদকের ব্যবসায় ভাটা পড়ে। তবে কিছুদিন পর আবারো রমরমা চলে মাদকের আসর। এতে অনেকটায় ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে এলাকাবাসীর মধ্যে। এলাকাটি রাজশাহী ইউনিভারসিটির (রাবি) ও রুয়েটের পাশ্ববর্তী হওয়ায় এ অঞ্চলে বসবাস করেন এসব প্রতিষ্ঠানের শতাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। মাদক উচ্ছেদে উদাসীনতার কারণে মতিহারের সচেতন সমাজ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। 

এবিষয়ে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের (রাবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর জুলফিকার আলী ইসলাম বলেন, আমি এলাকার স্থানীয় ও পরিচিত কয়েকজনের মুখে প্রায়ই শুনি এলাকায় কোনো মাদক কারবারির বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালালে মাদক কারবারিরা আগেই খবর পান। এতে করে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে কিছুই পান না। সুতরাং এসব অভিযান করে আশানুরূপ কোনো লাভও হয় না। পক্ষান্তরে এই্ মতিহার এলাকাটিতে দুটি বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকায় এসব এলাকায় প্রচুর শিক্ষাথীর বসবাস। তারা কিন্তু বেশ ঝুকির মধ্যে রয়েছে। তাদের অনেকেই আজ মাদকাসক্ত। একারণে অনেক পরিবারই আজ খুব বিপদের মধ্যে রয়েছে। 

উত্তরণেই উপায় সম্পর্কে তিনি বলেন, মাদক ও তার প্রভাব থেকে উত্তরণ পেতে হলে প্রথমত পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সমাজের সুশীলদের এগিয়ে আসতে হবে। পরিবারের কিশোর-তরুণ ও যুবকদের মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। এছাড়াও বড় পরিসরে আইন প্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠান যেমন পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা ও বিচারিক বিভাগকে আরো এগিয়ে কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন এ শিক্ষক ও সমাজচিন্তাবিদ।

এর আগে মতিহার থানার ওসি তদন্ত মেহেদী হাসান স্বীকার করে বলেন, বাস্তবেই মতিহার থানায় মাদকের বিরুদ্ধে তেমন কোনো অভিযান দীর্ঘদিন ধরে নেই। তবে এবিষয়ে আমি তেমন কিছু বলতে পারবো না। আমি কিছুদিনের মধ্যেই শাহমুখদুম থানায় স্থানান্তর হয়ে যাবো, আমার কিছুই বলার নেই। 

জানতে চাইলে অফিসার ইনিচার্জ (ওসি) মো. আনোয়ার আলী তুহিন বলেন, প্রত্যেকটা দিনই মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে, থেমে নেই। তাছাড়া সীমান্তবর্তী চরাঞ্চল এলাকা আমার না। ওই বিশাল এলাকাটি কাটাখালী থানাধীন। দিন-রাত চেষ্টা করে যাচ্ছি মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে মাদক ব্যবসা বন্ধ করার।

মাদক থেকে না থাকার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এই এলাকায় শতাধিক মাদক ব্যবসায়ীরা আছে এটা সত্য। কিন্তু এসব মাদক ব্যবসায়ীদের ধরার পর তারা আবার জেল থেকে বের হয়ে আবার মাদক ব্যবসা করে। আবার তাদের ধরা হয়। এভাবেই চলে ইদুর-বিড়াল খেলা। তারপরও চেষ্টা চলছে এটি উচ্ছেদের।  

রাজশাহীর সময় / জি আর