০৫ মে ২০২৪, রবিবার, ১১:০৫:৪৪ পূর্বাহ্ন


বিধবা নারীদের পুনঃবিবাহে ইদ্দত পালন ও করণীয়
ধর্ম ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-০৯-২০২৩
বিধবা নারীদের পুনঃবিবাহে ইদ্দত পালন ও করণীয় ফাইল ফটো


ইসলাম মানব জীবনে সুস্পষ্ট ও উন্নত জীবন বিধান প্রণয়ন করেছে। মানুষের দুনিয়ার জীবনে এমন কোনো দিক নেই যে বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো দিক-নির্দেশনা দেয়নি ইসলাম। মানুষের জীবনের বিয়ে-শাদী, সংসার, পরিবার প্রতিপালন, দাম্পত্য কলহের সমাধান, তালাক, পুনঃবিবাহ, বিধবার বিধানসহ বিস্তারিত বিষয়ে আল্লাহ তাআলা সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন কুরআনে।

স্বামী জীবতাবস্থায় স্ত্রীকে তালাক প্রদান করলে স্ত্রীদের ইদ্দত তথা অপেক্ষা বিধান ইতোপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। যদি এমনটি হয় যে, বিবাহের পর স্বামী মারা গেছে; সেক্ষেত্রে স্ত্রী কতদিন ইদ্দত পালন করবে। চাই স্বামীর সঙ্গে স্ত্রীর সহবাস হোক কিংবা না হোক।

স্ত্রী যদি সন্তান সম্ভবা হয় তবে সে ক্ষেত্রেই বা কতদিন অপেক্ষা করবে; তারও বিবরণ ওঠে এসেছে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসে। স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীর ইদ্দত পালনের সুনির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন-

আয়াত পরিচিতি ও নাজিলের কারণ

সুরা বাকারার ২৩৪ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা বিধবা নারীর ইদ্দত পালন তথা অপেক্ষার সময় সম্পর্কে সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন। বিধবা মহিলা পুনরায় বিবাহ করতে চাইলে তাকে অবশ্যই ৪মাস ১০ দিন ইদ্দত পালন (অপেক্ষা) করতে হবে। যা একটি জটিল সমস্যা আল্লাহ তাআলার সুস্পষ্ট ঘোষণা।

বিধবার ইদ্দতের বিধান: স্বামীর সঙ্গে সহবাস হোক চাই না হোক স্বামীর মৃত্যুর পর ওই স্ত্রীকে ৪ মাস ১০ দিন অপেক্ষা করতে হবে। আল্লাহ তাআলা নির্ধারিত এ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরই কেবল ওই নারী পুনরায় অন্যত্র বিবাহের বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে। এ সময়ের ব্যাপারে কোনো ইমামের মতভেদ নেই।

হাদিসে এসেছে- হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, এক ব্যক্তি বিবাহ করেছিল। স্ত্রীর সঙ্গে সহবাসও করেনি এবং দেনমোহরও ধার্য করেনি; এ অবস্থায় স্বামী মারা গেল। এখন স্ত্রীর ইদ্দতের ব্যাপারে কিরূপ ফয়সালা হবে?

যখন কয়েকবার এ প্রশ্ন নিয়ে লোকটি তাঁর কাছে আসে, তখন তিনি বললেন, ‘আমি নিজ বিবেচনায় ফয়সালা দিচ্ছি। যদি ফয়সালাটি শুদ্ধ হয় তবে আল্লাহর তরফ থেকে হয়েছে মনে করবে। আর যদি ফয়সালাটি ভুল হয় তবে তা আমার পক্ষ থেকে অথবা শয়তানের পক্ষ থেকে হয়েছে মনে করবে। আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল ভুল থেকে মুক্ত।

আমার প্রদত্ত সমাধান হলো- ওই স্ত্রীলোকটিকে তার বংশ-মর্যাদা অনুযায়ী পূর্ণ মোহরানা দিতে হবে; কোনোরূপ কম বেশি করা যাবে না। অতঃপর স্ত্রীলোকটি পূর্ণ সময় (৪ মাস ১০ দিন) ইদ্দত পালন করবে এবং সে যথা নিয়মে (স্বামীর সম্পদের) উত্তরাধিকার পাবে।

এ ফয়সালা শুনে- হজরত মাকাল ইবনে ইয়াসার আশজায়ী উঠে দাঁড়ালেন এবং বলতে লাগলেন, ‘বারাও বিনতে ওয়াশেক রাদিয়াল্লাহু আনহার ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও এমন সিদ্ধান্তই দিয়েছিলেন। তাঁর এ কথা শুনে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ অত্যন্ত খুশি হলেন।

গুরুত্বপূর্ণ জানার বিষয় হলো- স্বামীর মৃত্যুর সময় যে সব স্ত্রী গর্ভবতী থাকবে; তাদের উল্লেখিত ইদ্দত পালন (অপেক্ষা) করতে হবে না। তাদের জন্য অপেক্ষা সময় হলো গর্ভস্থিত সন্তান প্রসবকাল পর্যন্ত। স্বামীর মৃত্যুর ‍মুহূর্তকাল পরেও এ সময় উপস্থিত হতে পারে।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘গর্ভবতী নারীর ইদ্দতকাল (অপেক্ষার সময়) হলো সন্তান প্রসব পর্যন্ত।’

জটিল সমস্যার সমাধান হলো- সন্তান প্রসব এবং ৪ মাস ১০দিন- এ দুটি সময়ের মধ্যে যে সময়টি বিলম্বে আসবে সেটি হবে গর্ভবতী নারীর ইদ্দতের (অপেক্ষার) সময়। অর্থাৎ হতে পারে স্বামীর মৃত্যুর সময় স্ত্রী গর্ভবতী হয়েছে। তাহলে তাকে সন্তান প্রসব পর্যন্ত পুরো ১০ মাস সময় অপেক্ষা করতে হবে।

হজরত সাবঈয়া আসলামিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহা’র স্বামীর ইন্তেকালের সময় তিনি গর্ভবতী ছিলেন। মাত্র কয়েক রাত অতিবাহিত হওয়ার পরেই তিনি সন্তান প্রসব করেন। অতঃপর গোসল করে উত্তম পোশাক পরিধান করেন।

তা দেখে হজরত আবুস সানাবুল বিন বালাবাক্কা বলেন, ‘আপনি কি বিবাহ করতে ইচ্ছা করেন? আল্লাহর কসম! তাহলে আপনাকে ৪ মাস ১০ দিন অপেক্ষা করতে হবে। এ ছাড়া আপনি বিবাহ করতে পারবে না।’

এ কথা শুনে তিনি নিরব হয়ে গেলেন এবং সন্ধ্যার সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে উপস্থিত হয়ে মাসআলা (বিধান) জানতে চাইলেন-

তিনি তখন ইরশাদ করলেন, ‘যখন সন্তান প্রসব হয়েছে তখনই তুমি ইদ্দতের (অপেক্ষার) সময় সীমা অতিক্রম করেছ। এখন যদি তুমি চাও তবে নিঃসন্দেহে বিবাহ করতে পার।’

পরিষেশে...

বিধবা নারীরা স্বামীর মৃত্যুর পর সম্পদের উত্তরাধিকারই নয়; যদি স্বামী তার মোহরানা পরিশোধ না করে থাকেন তবে মোহরানার অর্থও পাবেন। এ ক্ষেত্রে স্বামীর সঙ্গে তাদের সংসার জীবন হোক আর না হোক। আর তারা পুনরায় বিবাহ করতে চাইলে পূর্ণ সময় ৪ মাস ১০ দিন ইদ্দত অতিবাহিত করতে হবে। আর গর্ভবতী হলে সন্তান প্রসবের সঙ্গে সঙ্গেই ইদ্দতকাল অতিবাহিত হবে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব বিধবা নারীকে কুরআনের বিধান যথাযথ মেনে চলার তাওফিক দান করুন। স্বামীর ওয়ারিশদেরকেও বিধবা নারীর প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।