০৫ মে ২০২৪, রবিবার, ০৭:০১:৩০ অপরাহ্ন


ডিবি পুলিশ হেফাজতে আইনজীবী সহকারীর মৃত্যু, মামলা হয়নি চার দিনেও
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-১০-২০২৩
ডিবি পুলিশ হেফাজতে আইনজীবী সহকারীর মৃত্যু, মামলা হয়নি চার দিনেও সংগৃহিত ছবি


বগুড়া গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) হেফাজতে আইনজীবী সহকারী হাবিবুর রহমান হাবিবের (৪০) মৃত্যুর চার দিন পেরিয়ে গেলেও পরিবার থেকে মামলা করা হয়নি। স্বজনদের মানসিক অবস্থা স্বাভাবিক হলে আদালতে নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যুর মামলা করবেন।

পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর অভিযোগটি খতিয়ে দেখতে পুলিশের তিন সদস্যের তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে আগেই তদন্ত টিম প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) স্নিগ্ধ আখতার মন্তব্য করেন, ‘তাকে কোনো টর্চার করা হয়নি’। তাই তার মাধ্যমে সুষ্ঠু তদন্ত রিপোর্ট পাওয়া নিয়ে পরিবার সন্দিহান।

জানা গেছে, ডিবি পুলিশ হেফাজতে মৃত আইনজীবী সহকারী সমিতির যুগ্ম সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব বগুড়ার শাজাহানপুরের জোড়া দামোরপাড়া গ্রামের আবদুল কুদ্দুসের ছেলে। তিনি বগুড়া আদালতের সিনিয়র আইনজীবী মঞ্জুরুল হকের সহকারী ও আপন ভাগ্নে। ডিবি পুলিশের একটি দল গত ৩ অক্টোবর বিকালে আদালতের ফটক থেকে হাবিবকে তুলে নিয়ে যায়। সন্ধ্যা ৬.৫৫ মিনিটে তাকে অচেতন অবস্থায় বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাত পৌনে ৯টার দিকে তিনি মারা যান।

ডিবি ওসি মোস্তাফিজ হাসান জানান, আইনজীবী সহকারী হাবিবুর রহমান হাবিব নিজ এলাকায় গত ২০১৩ সালে বিপুল নামে এক কিশোর অপহরণ ও হত্যা মামলার প্রধান আসামি। বিপুলের সৎ মা খুকি বেওয়া ওই মামলার অন্যতম সাক্ষী ছিলেন। প্রায় দুমাস আগে খুকি বেগম নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। বাড়ির কাছে তার দুই পা বিচ্ছিন্ন বস্তাবন্দি লাশ পাওয়া যায়। নিকটেই একটি পা পাওয়া গেলেও অপর পায়ের সন্ধান পাওয়া যায়নি। গত ৩ অক্টোবর সকালে প্রতিবেশী মনোয়ারা মুন্নীর (৬০) বাড়ির পায়খানার সেফটি ট্যাংকে খুকি বেগমের ওই পা পাওয়া যায়। তখন ডিবি পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মুন্নীকে নিয়ে আসে। তার স্বীকারোক্তিতে বিকালে আদালতের ফটক থেকে হাবিবকে গ্রেফতার করে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। এ সময় হাবিব তার প্রতিবেশ মুন্নীকে দেখে বুকে ব্যথা বলে চিৎকার করতে থাকেন। তখন তাকে হাসপাতালে নিলে রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাবিবের মৃত্যু হয়।

তিনি দাবি করেন, হাবিবকে কোনো নির্যাতন করা হয়নি।

বুধবার দুপুরে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতাল মর্গে নিহত হাবিবের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। এর আগে মঙ্গলবার রাতে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সুরতহাল করা হয়। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ও ম্যাজিস্ট্রেট বলেছেন, নিহতের শরীরে কোনো নির্যাতনের চিহ্ন নেই।

এদিকে মৃতের পরিবার হত্যা দাবি করায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) স্নিগ্ধ আখতারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী। এ তদন্ত কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন- সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরাফত ইসলাম ও ডিস্ট্রিক ইনটেলিজেন্ট অফিসার-১ জিএম সামসুন নুর। কমিটিকে সাত কর্ম দিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

মৃত হাবিবের পরিবার জানায়, তদন্ত প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্নিগ্ধ আখতার মন্তব্য করেন, ‘তাকে কোনো টর্চার করা হয়নি’। তাই তার কাছে সুষ্ঠু তদন্ত রিপোর্ট পাওয়া সম্ভব নয়। আর পুলিশ সহজে পুলিশের বিপক্ষে যায় না।

তারা আরও দাবি করেন, হাবিবকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে কিশোর বিপুল হত্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে। এছাড়া তাকে বিপুল হত্যা মামলার সাক্ষী বৃদ্ধা খুকি বেওয়া হত্যা মামলাতেও জড়ানো চেষ্টা চলছে।

এদিকে হাবিবের বাবা আবদুল কুদ্দুস সাংবাদিকদের বলেন, ডিবি পুলিশের নির্যাতনে তার সুস্থ ছেলের মৃত্যু হয়েছে। মানসিক অবস্থা স্বাভাবিক হলেই আদালতে মামলা করবেন।

আইনজীবী মঞ্জুরুল হক দাবি করেন, ডিবি পুলিশের নির্যাতনে তার আপন ভাগ্নে ও সহকারী হাবিবের মৃত্যু হয়েছে। বার সমিতি ও আইনজীবী সহকারী সমিতির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করা শিগগিরই আদালতে মামলা করা হবে।