২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ০৫:১৩:১৬ অপরাহ্ন


দক্ষিণ আফ্রিকাকে তাদের মাঠে দাপটের সাথে হারালো টাইগাররা
ক্রিড়া ডেস্ক :
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৩-২০২২
দক্ষিণ আফ্রিকাকে তাদের মাঠে দাপটের সাথে হারালো টাইগাররা দক্ষিণ আফ্রিকাকে তাদের মাঠে দাপটের সাথে হারালো টাইগাররা


দাপটের সাথে দক্ষিণ আফ্রিকাকে তাদের মাঠে হারালো বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের টাইগাররা। 

এবার দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে মাঠের লড়াইয়ের আগে বারবারই উঠে আসছিল সেই প্রসঙ্গ। খেলোয়াড়দের মুখেই শোনা যায় সেই আত্মবিশ্বাস জাগ্রত থাকার কথা। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতেও কোনো ফরম্যাটেই জয়ের স্মৃতি ছিল না বাংলাদেশের। আর টাইগাররা এবার সফরের শুরুতেই চমক দেখালো প্রোটিয়াদের। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৩৮ রানে হারালো বাংলাদেশ। সেঞ্চুরিয়নে ৩১৫ রানের টার্গেটে ২৭৬ রানে অলআউট হয় প্রোটিয়ারা।

এদিন নিজের ভিন্ন দুই রূপ দেখালেন অফস্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ। আর ম্যাচের বোদ্ধা বিশ্লেষক ধারাভাষ্যকাররা পেলেন আরেক অভিজ্ঞতা।

নিজের প্রথম স্পেলে মার খান মিরাজ। চার ওভারে ৩৮ রান দেন উইকেটশূন্য মিরাজ। অধিনায়ক তামিম ইকবাল মিরাজকে আক্রমণ থেকে সরিয়ে দেন। আর মিরাজের অবশিষ্ট ৬ ওভার বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক কাকে দিয়ে পূরণ করবেন সে হিসাব কষতে থাকেন ধারাভাষ্যকাররা। পরে বল হাতে ম্যাজিক দেখালেন মিরাজ। নিজের দ্বিতীয় স্পেলে পাঁচ ওভারে ২৩ রানে চার উইকেট নেন টাইগার স্পিনার। ম্যাচের শেষ দিকে একাধিক ক্যাচ মিস ও ঢিলেঢালা ফিল্ডিং না হলে আরেকটু উজ্জ্বল থাকতো মিরাজের বোলিং ফিগার। এদিন বল হাতে উইকেট না পেলেও ব্যাটিংয়ের জন্য ম্যাচসেরার পুরস্কার পান সাকিব আল হাসান। ১০ ওভারের স্পেলে ৫৪ রান দেন সাকিব। 

সেঞ্চুরিয়নে নিজের স্পেলে আগাগোড়া আগুনঝরা বোলিং নৈপুণ্য দেখান তাসকিন আহমেদ। ১০ ওভারের স্পেলে মাত্র ৩৬ রানে তিন উইকেট নেন এ টাইগার পেসার। দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের নবম ওভারে বল হাতে জোড়া আঘাত হানেন তাসকিন। পরে তিনি সাজঘরে ফেরান ব্যাট হাতে টাইগারদের জন্য ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা রাসি ভ্যান ডার ডুসনকে। এর পরও ডেভিড মিলারের ব্যাটে আশা জেগেছিল প্রোটিয়াদের। তবে দলীয় ২৪২ রানে মিরাজের বলে মিলার স্টাম্পিং হয়ে গেলে সম্ভাবনাও শেষ হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার। ৫৭ বলে ৭৯ রান করেন মিলার। এদিন উজ্জ্বল নৈপুণ্য দেখান শরীফুল ইসলামও। ৮ ওভারের স্পেলে ৪৭ রানে দুই উইকেট নেন তরুণ বাঁহাতি পেসার।

৪৫.৩তম ওভারে ২৪২ রানে নবম উইকেটের পতন হয় স্বাগতিকদের। এসময় মনে হচ্ছিল খুব বড় ব্যবধানেই জয় পাবে বাংলাদেশ। কিন্তু এরপরই যেন মমুঠো আলগা হয় টাইগারদের। ক্যাচ ফেলেন ইয়াসির আলী, আফিফ হোসেনরা। বাংলাদেশ দলের ঢিলেঢালা ফিল্ডিং-বোলিংয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর বোর্ডে রান যোগ হতে থাকে দ্রুতই। ৪৮.৫তম ওভারে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ প্রোটিয়া টেইল এন্ডার কেশব মহারাজকে এলবিডাব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলার আগে দক্ষিণ আফ্রিকার শেষ উইকেট জুটিতে আসে ৩৪ রান।

আরো আগেই সাজঘরে ফিরতে পারতেন তিনি। কিন্তু থার্ড আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তে তিনি বেঁচে যান রান আউট থেকে। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় ফিল্ডারের থ্রোতে যখন স্টাম্প ভাঙে রাসি ভ্যান ডার ডুসন ক্রিজে পৌছলেও তার ব্যাট শূন্যে ছিল। তবে এর পর টাইগাররা বেশি সময় ক্রিজে থাকতে দেয়নি তাকে। নিজের শেষ ওভারে ভ্যান ডার ডুসনকে সাজঘরে ফেরান তাসকিন আহমেদ। সীমানার কাছে দারুণ ক্যাচ তালুবন্দি করেন ইয়াসির আলী। ৩৭.১তম ওভার শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৯১/৫-এ। ব্যাট হাতে ৯ চার ও এক ছক্কায় ৯৮ বলে ৮৬ রান করেন ভ্যান ডুসন।

ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা জুটি ভাঙলেন শরীফুল ইসলাম। প্রোটিয়া অধিনায়ক তেম্বা বাভুমাকে সাজঘরে ফিরিয়ে ৮৫ রানের জুটি ভাঙলেন তরুণ টাইগার পেসার। ২৬.৩তম ওভারে উইকেটরক্ষক মুশফিকের গ্লাভসে ধরা পড়েন বাভুমা। সাজঘরে ফেরার আগে ৫৫ বলে ৩১ রান করেন তিনি। আর ৩২ ওভার শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৫৮/৪-এ।

চতুর্থ ওভারে দলীয় ১৮ রানে প্রোটিয়া ওপেনার ইয়ানেমান মালানকে সাজঘরে ফেরান বাঁহাতি পেসার শরীফুল ইসলাম। শুরুর ধাক্কা সামলানোর চেষ্টায় ছিল প্রোটিয়ারা। তবে বল হাতে এবার আঘাত হানেন তাসকিন আহমেদ। নবম ওভারে জোড়া আঘাত হানেন ডানহাতি টাইগার পেসার। ওভারের প্রথম বলে প্রোটিয়া আরেক ওপেনার কাইল ভেরাইনকে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে ফেলেন তাসকিন। আর চতুর্থ বলে এইডেন মার্করামের ক্যাচ দারুণ দক্ষতায় লুফে নেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এতে ৮.৪তম ওভার শেষে ৩৬/৩ সংগ্রহ নিয়ে শঙ্কায় পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা।

ব্যাটাররা ৩১৪ রানের পুঁজি এনে দেয়ার পর বল হাতে সাফল্য পেতেও দেরি করেনি টাইগার বোলাররা। দলীয় ১৮ রানে প্রোটিয়া ওপেনার ইয়ানিমান মালানকে সাজঘরে ফেরান শরীফুল ইসলাম। ১০ বলে ৪ রান করে উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহীমের গ্লাভসে ক্যাচ দেন মালান।

এদিন ব্যাট হাতে একের পর এক আত্মবিশ^াসী শট খেলে প্রোটিয়াদের গলদঘর্ম করে তুলছিলেন সাকিব আল হাসান। শুক্রবার সেঞ্চুরিয়নে ৬৪ বলে ৭৭ রান করেন সাকিব। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে অর্ধশতকের ‘৫০’ পূর্ণ করলেন সাকিব। ২১৯ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এটি সাকিবের পঞ্চাশতম অর্ধশতক। মারকুটে ইনিংসে সাকিব হাঁকান ৭ চার ও তিনটি ছক্কা।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডেতে সাকিবের এটি টানা তৃতীয় অর্ধশতক। ২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে সিরিজের শেষ ম্যাচে করেছিলেন ৬৩, মাঝখানে ২০১৯ বিশ্বকাপে ৭৫ রান। পঞ্চাশ ওভারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাকিবের পঞ্চাশতম পঞ্চাশ করতে সাকিব বলও খেলেছেন ৫০টি। সেই পঞ্চাশও আসে বোলারের মাথার উপর দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে।

ধারাভাষ্যকক্ষ থেকে সাকিবের ব্যাটিং মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে দেখছিলেন বাংলাদেশ দলের সাবেক ব্যাটিং কোচ নিল ম্যাকেঞ্জি। সাকিবের দাপুটে ব্যাটিংয়ের প্রশংসা করতে করতে যেন বিশেষণই হারিয়ে ফেলছিলেন সাবেক এই প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান। চাপের মুখে ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা সাকিবকে কতটা সাহায্য করছে, সেটাই বলছিলেন ম্যাকেঞ্জি। তিনি বলেন ‘সাকিব যখন ক্রিজে এসেছিল, তখন কিন্তু পরিস্থিতি সহজ ছিল না। এখন দেখুন, সে যখন অর্ধশত রানে, তখন খেলাটাই পাল্টে গেছে। বাংলাদেশ এখন দাপট দেখাচ্ছে। অভিজ্ঞতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা দেখা যাচ্ছে। সাকিবের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে আসা নিয়েও তিনি মজা করছিলেন, সাকিবের জন্য বিমানের টিকিট কেটে সবচেয়ে ভালো করেছে বিসিবি।

মানসিক ও শারীরিকভাবে ফিট নন জানিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকে সরে যেতে চেয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। তবে শেষ পর্যন্ত দলে সঙ্গে যোগ দেন তিনি। সবাই দক্ষিণ আফ্রিকা চলে যাবার পর বাংলাদেশ দলের সর্বশেষ যাত্রী হিসেবে একা বিমান ধরেন সাকিব।

রাজশাহীর সময় / জি আর