২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ০৮:০২:১৪ অপরাহ্ন


রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ: মারিওপোল নিয়ে গভীর শঙ্কা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-০৩-২০২২
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ: মারিওপোল নিয়ে গভীর শঙ্কা ফাইল ফটো


রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সারা বিশ্বের প্রধান নজর এখন বন্দর শহর মারিউপোলের দিকে। কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ শহরের দখল নিতে মরিয়া হয়ে পড়েছে রুশ সেনারা।|

সোমবার বিবিসির খবরে বলা হয়, গত প্রায় দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় সময় অবরোধ করে রাখা এ শহরে অব্যাহত গোলাবর্ষণের পর গতকাল (রোববার) রাতে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় লড়াইরত ইউক্রেনীয় সেনা এবং মাারিউপোল নগর সরকারকে সোমবার মস্কো সময় ভোর পাঁচটার মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে বলে।

পরিবর্তে শহরের বাসিন্দা এবং ইউক্রেনীয় সেনাদের দুটো নিরাপদ করিডোর দিয়ে চলে যাওয়ার সুযোগ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। কিন্তু ইউক্রেন সরকার এবং মারিউপোলের স্থানীয় প্রশাসন আত্মসমর্পণের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলে জানা গেছে। ইউক্রেনের উপ-প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে সে দেশের সংবাদ মাধ্যম ইউক্রোনিস্কা প্রাভদা বলছে, ‘আত্মসমর্পণের বা অস্ত্র সমর্পণের কোনো প্রশ্নই ওঠেনা।’ মারিউপোল শহরের মেয়রের একজন উপদেষ্টা বিবিসিকে বলেন, নিরাপদে চলে যাওয়ার যে প্রতিশ্রুতি মস্কো দিয়েছে তার ওপর বিশ্বাস করা যায় না এবং শেষ সেনা বেঁচে থাকা পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে। আত্মসমর্পণের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের পর রাশিয়া এখন কী করবে, মারিউপোল শহর এবং সেখানে আটকে পড়া বাসিন্দার কপালে কী করবে তা নিয়ে গভীর আশংকা তৈরি হয়েছে। কারণ পানি, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন এবং বোমায় বিধ্বস্ত এ শহরে এখনো তিন লাখের মত লোক রয়েছে বলে বলা হচ্ছে। আত্মসমর্পণ না করলে রুশ সেনারা কী করবে তা এখনো স্পষ্ট করেনি মস্কো। মারিউপোলে রুশ সেনাদের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকেই এখন সবাই তাকিয়ে রয়েছে।

‘পৃথিবীর বুকে নরক’: মারিউপোলের মানবিক পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে মারিউপোলের এমপি ইয়ারোস্লাভ জেলেজনিয়াক বলেন, তার শহর এখন কার্যত ‘পৃথিবীর বুকে নরক’।পুরো শহরটি ঘিরে রয়েছে রুশ সেনারা। বিদ্যুৎ নেই, পানি সরবরাহ নেই। খাবার এবং ওষুধের মজুদ খুবই কম। মানুষ খাবার কষ্টে ভুগছে এবং রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। স্থলপথ ছাড়াও আকাশ এবং সাগর থেকে দিনের পর দিন রুশ ক্ষেপণাস্ত্র এবং গোলা এসে পড়ার কারণে অধিকাংশ মানুষ এখন ঠাণ্ডা-অন্ধকার বোম-শেল্টার এবং বেজমেন্টের মধ্যে আশ্রয় নিয়ে রয়েছেন। আর রুশ সেনাদের সাথে ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের মুখোমুখি লড়াই এখন মারিউপোল শহরের কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে। ফলে শহর থেকে পালানোর সুযোগও চলে যাচ্ছে।স্যাটেলাইট এবং অন্যান্য সূত্রে মারিউপোলের যেসব ছবি এবং ভিডিও প্রকাশ পাচ্ছে তাতে দেখা যাচ্ছে পুরো শহরটি কার্যত একটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। গত সপ্তাহের শহরের মেয়র ভাদিম বোভচেঙ্কো বিবিসিকে বলেন, শহরের ৮০ শতাংশ আবাসিক ভবন হয় বিধ্বস্ত হয়েছে, না হয় পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। তিনি বলেন, রাস্তায়, রাস্তায় মরদেহ পড়ে রয়েছে। কিন্তু বোমা এবং গুলির ভয়ে সেগুলো সৎকারের ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না।

রুশ একজন জেনারেল পর্যন্ত বলেছেন, মারিউপোলের ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় দেখা দিচ্ছে। তবে রাশিয়ার পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে, এই পরিস্থিতির প্রধান দায় ইউক্রেনীয়, মস্কোর ভাষায়, কট্টর জাতীয়তাবাদীদের। তারাই বেসামরিক মানুষজনকে নিরাপদে চলে যেতে দিচ্ছে না, জিম্মি করে রেখেছে। 

কেন মারিউপোলের দখল নিতে মরিয়া রাশিয়া: সাবেক ব্রিটিশ সেনা কম্যান্ডার জেনারেল রিচার্ড ব্যারন বিবিসিকে বলেন, মারিউপোলের নিয়ন্ত্রণ রাশিয়ার জন্য কৌশলগতভাবে বড় একটি বিজয় হবে। তিনি বলেন, এই এলাকার নিয়ন্ত্রণ পেলে স্থলপথে রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডের সাথে ক্রিমিয়ার সরাসরি যোগাযোগ তৈরি হবে। ইউক্রেনে যুদ্ধরত রুশ সেনাদের সরবরাহ অনেক সহজ হবে রাশিয়ার জন্য।

রাজশাহীর সময়/এজেড