২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ১২:১৯:০৯ অপরাহ্ন


বিয়ের নামে রাবি শিক্ষার্থীকে প্রতারণা ফেসবুকে অশালীন ছবি প্রকাশ
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০৩-২০২২
বিয়ের নামে রাবি শিক্ষার্থীকে প্রতারণা  ফেসবুকে অশালীন ছবি প্রকাশ বিয়ের নামে রাবি শিক্ষার্থীকে প্রতারণা ফেসবুকে অশালীন ছবি প্রকাশ


বিয়ের প্রতারণা করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সান্ধ্যকালীন এমবিএ কোর্সে অধ্যয়নরত এক শিক্ষার্থীকে (২৩) প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে আসিফ ইকবাল (২৮) নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে। সোমবার (২৮ মার্চ) দুপুর ১২টায় নগরীর সিটি গার্ডেন নামের এক রেঁস্তোরায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এমন অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী। 

অভিযুক্ত আসিফ পাবনার সাথিয়া উপজেলার চককোনাবাড়িয়া এলাকার আমিনুল ইসলামের ছেলে। বর্তমানে তিনি ঢাকার বাড্ডা লিংক রোড এলাকার শিফা গ্রুপ নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ইনচার্জ ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্বরত। 

সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী রাবি শিক্ষার্থী জানান, ২০১৮ সালে ছোটবেলার বন্ধুর মাধ্যমে পরিচয় হয় আসিফের সাথে। পাবনায় একই উপজেলায় বাড়ি হওয়ায় বাড়ে ঘনিষ্ঠতা। পরবর্তীতে পরিবারের অমতেই ২০১৯ সালের ২ মার্চে বিয়ে হয় ঢাকার নারায়ণগঞ্জে। প্রথম অবস্থায় আসিফ ঢাকায় যে চাকরি করে খুব সামান্য অর্থ উপার্জন করতো। এ কারণে সে আমাকে পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরি করতে বাধ্য করে। বিয়ের পর তার ব্যক্তিগত খরচ থেকে পড়াশোনার খরচও চালাতে হতো আমাকে। 

ভুক্তভোগীর অভিযোগ, পড়াশোনা বা হাত খরচ চালানো টা সমস্যা ছিল না। সমস্যা ছিল তার মাদক ও জুয়ায় আসক্তি। যার কারণে বিয়ের পর দফায় দফায় ৮ লাখ টাকা আমার কাছে থেকে যৌতুক নেয় সে। তার অত্যাধিক জুয়া ও মাদকাসক্তির কারণে আবারো ১০ টাকা যৌতুক দাবি করে। তার দাবিকৃত অর্থ দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় শুরু হয় নির্যাতন। 

ভুক্তভোগীর শিক্ষার্থীর ভাষ্য, সে (আসিফ) শুধু আমাকে বিয়ের নামে বছরের পর বছর প্রতারণা করেছে এবং ঢাকা ও নারায়নগঞ্জের বিভিন্ন বাসা বাড়ি ও রিসোর্টে নিয়ে গিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করেছে। রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করেও সে এখন বৈধ বিয়েকে অবৈধ ও ভুয়া বলে দাবি করছে। 

রাবি ছাত্রীর অভিযোগ বলেন, বিয়ের এক বছরের পর (২০২০) আফিস জোরপূর্বক আমার গর্ভের সন্তান নষ্ট করতে আমার ওপর শারিরীক নির্যাতন চালায়। গর্ভবতী হওয়ার পরও যৌতুকের জন্য আসিফ আমাকে কয়েক দফায় রড দিয়ে পেটায়। ফলে নষ্ট হয়ে যায় বাচ্চা। 

তিনি বলেন, আসিফ যে কোম্পানিতে চাকরি করে, সেখানেও অবৈধ কাজের সঙ্গে জড়িত। আমি অবৈধ উপার্জন করতে নিষেধ করলে আমাকে রড দিয়ে পেটাতো। বিষয়টি তার অফিসের কর্মকর্তারা জানার পরও কোনো ব্যবস্থা নেন নি। তার এমন প্রতারণা ও নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে পরে একটি নারী নির্যাতন ও যৌতুক মামলা করলে সে হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে আসে। 

হাইকোর্ট থেকে জামিন নেওয়ার পর আমাদের সাংসারিক বেশ কিছু অন্তরঙ্গ ছবি ও পোষ্ট ছড়িয়ে দেয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। এসব ঘটনার পর আমি পাবনার সাথিয়া ও আরএমপির মহিতার ও বোয়ালিয়া মডেল থানায় সাইবার ক্রাইমে মামলা করতে গেলে থানার ওসিরা তা আমলে নেয়নি বলে জানান ভুক্তভোগী। 

ভুক্তভোগী ওই রাবি শিক্ষার্থীর ভাষ্য, তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন আইনে মামলার পর বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন মহল থেকে সে আমাকে প্রাণ নাশের হুমকি ধামকি ও মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। এমনকি সাংবাদিকদের সহায়তা নেওয়ার কথা জানার পর সে আরোও বেপরোয়া আচরণ করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার বিজনেস পেজে গিয়েও অশালীন ভাষা ও ছবি পোষ্ট করছে এবং আমার নাস্বার ফেসবুকে দিয়ে অশালীন মিথ্যে কথা প্রচার করছে। এতে আমার আর্থ-সামাজিক ভাবে ভীষণ হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছি। 

মুঠোফোনে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আসিফ ইকবাল বলেন, ‘আমি এখন ব্যস্ত আছি। আপনার সাথে আমি পরে কথা বলবো।’ 

এ বিষয়ে মহিতার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আনোয়ার আলী তুহিন বলেন, যেহেতু ওই শিক্ষার্থী বোয়ালিয়া থানাধিন টিকাপাড়ার বাসিন্দা। তাই আমি তাকে বোয়ালিয়ায় গিয়ে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছিলাম এবং এ বিষয়ে ওসি বোয়ালিয়াকে মামলা নেওয়ার জন্য বলেও দিয়েছিলাম। পরের ঘটনা আমার আর জানা নেই। বিষয়টি জানার জন্য মুঠোফোনে কল করা হয় বোয়ালিয়া থানার ওসি মো. মাজহারুল ইসলামকে। তবে তিনি ফোন না ধরায় তার মন্তব্য মেলেনি। 

এ ব্যাপারে আরএমপির নগর মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এসম্পর্কিত বিষয় পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট দেখে থাকেন। সাইবার ক্রাইম ইউনিটে তিনি একটি আবেদন করে সে সম্পর্কিত বিষয়ে তথ্য প্রমাণ দিলে তারা যাচাই-বাছাই করে তদন্ত করবেন। বিষয়টি আমলে নেওয়ার মতো হলে অবশ্যই পুলিশ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

রাজশাহীর সময় / এম জি