০৭ মে ২০২৪, মঙ্গলবার, ০৩:১৮:১৩ অপরাহ্ন


খুনিদের গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে ফরিদপুরে বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ
অনলাইন ডেস্ক :
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৪-২০২৪
খুনিদের গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে ফরিদপুরে বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ খুনিদের গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে ফরিদপুরে বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ


মন্ত্রীর অনুরোধে পাত্তা দেয়নি ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন। হিন্দু খুনিদের গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে ফরিদপুরে বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। বাংলাদেশ ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন ফরিদপুর জেলা শাখার উদ্যোগে মধুখালীতে উগ্রবাদী হিন্দু কর্তৃক মুসলিম হত্যা ও মানববন্ধন কর্মসূচিতে তাওহীদি জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি বর্ষণের প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবার বেলা পৌনে ২টায় শহরের জনতা ব্যাংকের মোড়ে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন ফরিদপুর জেলা শাখার সভাপতি মুফতি মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক মাওলানা লোকমান হোসেন জাফরী। অন্যন্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মাগুরা থেকে আগত জেলার শত্রুজিতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওসমান গনি মুসাফিরী, সংগঠনের সহ-সভাপতি হযরত মাওলানা শামসুল হক, খেলাফত মজলিস ফরিদপুর জেলা শাখার সভাপতি আমজাদ হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক মুফতি আবু নাসির আইয়ুবী, উপদেষ্টা কমিটির সদস্য আলহাজ্ব শামসুদ্দিন মোল্লা, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন ফরিদপুর জেলার সম্পাদক হাফেজ মিজানুর রহমান, শ্রমিক আন্দোলনের সভাপতি খন্দকার ওহিদুজ্জামান, ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি মোহাম্মদ মিরাজুল ইসলাম, ভাঙ্গা উপজেলা শাখার সভাপতি আব্দুল হান্নান মাতুব্বর, ইসলামী আন্দোলনের অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী, মুফতি মাহবুবুর রহমান, মধুখালী থানার সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম, হাফেজ মাওলানা জিয়াদুল ইসলাম প্রমুখ।

এ সময় সমাবেশের সভাপতি মুফতি মোস্তফা কামাল বলেন, এদেশের হিন্দুরা আমাদের মাথায় উঠে বসেছে। মনে হচ্ছে ৯৮ ভাগ মুসলমানের দেশে আমরাই ভাড়াটিয়া। গত ১৮ এপ্রিল মধুখালীতে দুই মুসলিম সহোদর কোরআনের হাফেজকে হিন্দুরা ৫ ঘণ্টা পিটিয়ে হত্যাকাণ্ডের মিশন বাস্তবায়ন করলো মধুখালী থানার ওসিসহ বহু পুলিশের সামনে। ওই হিন্দুদের কাছে এমন কী ভারী অস্ত্র আছে যে, তাদের পুলিশ দুটি মুসলমান হাফেজ সন্তানকে হিন্দু সন্ত্রাসীদের হাত থেকে বাঁচাতে পারলো না। তবে পুলিশ একটি বীরত্বের পরিচয় দিয়েছেন। হত্যাকারীদের বিচার চাইতে গিয়ে মধুখালীর হাজার হাজার মানুষের মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে বিনা উস্কানিতে এবং বিনা কারণে তৌহিদী জনতার ওপর নির্বিচারে পাখির মত গুলি চালিয়ে হত্যার মিশনে ব্যর্থ হলেও ৬/৭ জন গুলিতে আহত হয়েছে। খুশী হয়েছে দাদারা। আহতরা পুলিশের অত্যাচারে বাড়ীতে ঘুমাতে পারেনি। রাতের মধ্যে ৫ জন আটক হলো, আর হিন্দু খুনিদের খুঁজে পায় না পুলিশ। তারা রাতের মধ্যে আটক হলেও ঘটনার ১০ দিন অতিবাহিত হলেও হিন্দু খুনিদের খুঁজে পাচ্ছে না। এটা বড় লজ্জার বিষয়। ডিজিটাল সরকারের পুলিশ প্রতিবাদকারীকে খুঁজে পায়, কিন্তু খুনি পায় না।

তিনি আরো বলেন, দৈনিক ইনকিলাব, মানব জমিন, যুগান্তর, প্রথম আলো ব্যাতীত অন্য কোনো মিডিয়া যথাযথভাকে সংবাদও পরিবেশন করেনি। প্রশাসন মিডিয়াকে ভয় দেখিয়ে অনুরোধ করে সিংহভাগ সাংবাদিককে সংবাদ পরিবেশনে বিরত রাখছেন বলে আমরা খবর পেয়েছি। তিনি এ কথাও বলেন, ‘গুম ধামাচাপা দেয়া যায়, কিন্তু রক্ত ধামাচাপা দেয়া যায় না।

অপরদিকে, সমাবেশের প্রধান অতিথি কেন্দ্রীয় কমিটির দফতর সম্পাদক লোকমান হোসেন জাফরি বলেন, প্রশাসনকে খুনিদের আটকের বিষয় জানতে চাইলে তারা বলেন, খুনীরা পালিয়েছে। পালিয়ে গেছে কোথায়? ভারতে গেছে, না বাংলাদেশ আছে? সীমান্তে কি পুলিশ নাই? বাংলাদেশ আজ কোথায় যাচ্ছে? এটা কি এখন বাংলাদেশ আছে, নাকি ভারতের অঙ্গরাজ্য হয়ে গেছে? ৯৮ ভাগ মুসলমানের দেশ। ২ শতাংশ হিন্দু, তাদের হাতে আজ আমরা জিম্মি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে তিনি আরো বলেন, ভাইয়েরা, আপনারা আমাদের সেবক। যে বন্দুক ও রাইফেল দিয়ে আমাদের ওপর গুলি করে মারেন, আহত করেন ওটা আমাদের টাকায় কেনা। আপনার আইনের তছরূপ করলে আমরা শয়তান সোজা করব। খুনিদের আটক করে মিডিয়ায় প্রকাশ করতে হবে। ধামাচাপা দিলে কোনো ছাড় দেয়া হবে না।

সভায় বক্তারা এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হিসেবে ফাঁসি দাবি করেন। তা না হলে আগামী দিনে আরো ব্যাপক কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান। একই সাথে এদের পরিবারে ক্ষতিপূরণ দেবার জন্য সরকারের নিকট দাবি জানান। তারা এঘটনায় জড়িত প্রত্যেককে গ্রেফতার করে তাদেরকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তাদের প্রকৃত চেহারা জনগণের সামনে উন্মোচিত করার আহ্বান জানান। এ ঘটনায় জড়িত মদদদাতাদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়।

এর আগে বিভিন্ন স্থান থেকে একাধিক বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ স্থলে এসে উপস্থিত হলে বিশাল সমাবেশ পরিণত হয়। এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে ফরিদপুর জেলা সদরের প্রত্যেকটি মোড়ে মোড়ে ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। জেলা পুলিশ, ডিবি পুলিশ, থানা পুলিশ, এপিবিএনসহ বিজিবিও মোতায়েন ছিল।

পাশাপাশি মুন্সিগঞ্জের জেলা সদর থেকে পানি কামান এনেও প্রস্তুত রাখা হয়েছিল সমাবেশস্থলে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক ভীতি কাজ করছে, এমনটাই দেখা গেছে। নিñিদ্র নিরাপত্তা চাদরে ঢাকা ছিল পুরো শহর। এমন পরিবেশ ছিল, একদিকে প্রচণ্ড গরম, অপরদেকে মিছিল মিটিং। পুরো শহর ছিল থমথমে।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার মধুখালীর স্থানীয় এমপি প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আব্দুর রহমান, মধুখালী উপজেলার হল রুমে ৫ ঘণ্টাব্যাপী ১০ ইউনিয়নের নির্ভরযোগ্য হাজার খানেক লোক নিয়ে রুদ্ধদ্বার মিটিং করে কাউকে কোনো মিছিল সমাবেশ না করে শান্তি-সম্প্রতি বজায় রাখার অনুরোধ করেন। এছাড়া গতকাল বিকেল ৫টায় মধুখালী উপজেলা সদরে খুনীদের গ্রেফতার দাবিতে স্থানীয় প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা মানববন্ধন করেন। অপরদিকে সরকারের পক্ষের লোকেরও একটি শান্তির পক্ষে মানববন্ধন করেন এবং সবাইকে অনুরোধ করেন, কেউ বিশ্বাস ভঙ্গ করবেন না। মজার বিষয় হলো, মন্ত্রীকে উপেক্ষা করে গতকাল মধুখালীর সমাবেশ ও মিছিলটি ছিল বিশাল।