০১ জুন ২০২৪, শনিবার, ০৬:২১:২৮ অপরাহ্ন


নিউ ইয়র্কে কাজী আজমের বিরুদ্ধে 'ব্রুকলিন মেলার' অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ
ইমা এলিস, নিউ ইয়র্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০৫-২০২৪
নিউ ইয়র্কে কাজী আজমের বিরুদ্ধে 'ব্রুকলিন মেলার' অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ নিউ ইয়র্কে কাজী আজমের বিরুদ্ধে 'ব্রুকলিন মেলার' অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ


যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের প্রবাসী বাংলাদেশিদের 'ব্রুকলিন মেলা' নিয়ে বাংলাদেশি আমেরিকান ফ্রেন্ডশীপ সোসাইটি অব নিউ ইয়র্কের সভাপতি কাজী সাখাওয়াত হোসেন আজমের বিরুদ্ধে মেলা অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাংলাদেশি আমেরিকান ফ্রেন্ডশীপ সোসাইটি অব নিউ ইয়র্ক ও ৬৬ প্রেসিঙ্কট কমিউনিটি কাউন্সিলের নামে এই মেলা থেকে প্রতিবছর ৪০ থেকে ৫০ হাজার ডলার আয় হলেও কোন অর্থ সংগঠনের নামে জমা না দিয়ে সমুদয় অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গত ১০ বছরেও মেলার কোন আয়-ব্যয়ের কোন হিসাব পাননি সংগঠনের সাধারন সম্পাদক।  

বাংলাদেশি আমেরিকান ফ্রেন্ডশীপ সোসাইটি অব নিউ ইয়র্কের সাধারন সম্পাদক মাকসুদুল হক চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, ২০১৩ সাল থেকে ৬৬ প্রেসিঙ্কট কমিউনিটি কাউন্সিলের নামে তারা একত্রে মেলা করে আসছিলেন। বাংলাদেশি আমেরিকান ফ্রেন্ডশীপ সোসাইটি অব নিউ ইয়র্ক নামের এ সংগঠনটি মাকসুদুলের নিজের হাতে গড়া। ২০১৩ সাল থেকে তারা এ মেলা করে আসলেও উক্ত সংগঠনের কোন ব্যাংক একাউন্ট কিংবা কোন হিসাব ছিল না। সভাপতি কাজী আজম তার (সাধারন সম্পাদকের) অজান্তে পরবর্তিতে একটা ব্যাংক একাউন্ট করেন। কিন্তু সংগঠনের সাধারন সম্পাদক হিসেবে মাকসুদুল হক চৌধুরীর নাম ব্যাংক একাউন্টে রাখা তো দুরের কথা বিষয়টি তাকে জানানোর প্রয়োজনও মনে করেননি। ব্যাংক একাউন্ট করার প্রায় ২ বছর পর মাকসুদ জানতে পারেন কাজী আজম নিজের নামে ব্যাংক একাউন্ট করে সংগঠনের নামে লেনদেন করছেন। এই বিষয়ে জানতে চান মাকসুদ, কিন্তু আজম কোন সদুত্তর দিতে পারেন নাই। অনেক বার বলা সত্বেও ব্যাংক একাউন্টে সাধারন সম্পাদকের নামও সংযুক্তও করেননি তিনি। প্রতি বছর ৬৬ প্রেসিঙ্কট কমিউনিটি কাউন্সিলের পারমিট নিয়ে মেলা করে থাকেন। সকল স্পন্সর, স্টল এবং বিভিন্ন লেনদেন সংগঠনের একাউন্টে করে থাকেন তিনি। গত দশ বছরে কোন রকম আয় ব্যায়ের হিসাব দেননি কাজী আজম। অনেক বার অনুরোধ করেও কোন হিসাব পাননি মাকসুদুল চৌধুরী।

মাকসুদ উল্লেখ করে বলেন, ব্রুকলিন মেলা থেকে প্রতি বছর আনুমানিক ৪০ থেকে ৫০ হাজার ডলার আয় করে থাকেন। কিন্তু অদ্যাবদি আয়কৃত অর্থের কোন হিসাব সংগঠন বা অন্য কেউ পায়নি। সভাপতির কাছে হিসাব সম্পর্কে জানতে চাইলে আজম বলেন প্রতি বছর প্রিসিন্কট কাউন্সিলকে ৫ হাজার ডলার চাঁদা দিতে হয়। বাকি অর্থ সভাপতি নিজে আনন্দফুর্তি এবং অবকাশ যাপনে খরচ করেন।

২০২৩ সাল থেকে মাকসুদ হিসাবের জন্য সভাপতি আজমকে জোর চাপ দিতে থাকেন। এ বিষয়ে বিভিন্ন মানুষের দ্বারা তাকে অবহিত করা হয়। মাকসুদ বলেন, এভাবে মেলা করলে তিনি প্রতিবাদ করবেন। কোন কথাতেই কাজ হয়নি। চলতি বছরে (২০২৪ সালে) কয়েক মাস আগে থেকে এ মেলা করতে তাকে নিষেধ করেন মাকসুদ। তিনি বলেন যদি মেলা করেন তাহলে সঠিক হিসাব দিতে হবে। তখন তিনি মাকসুদকে বলেন আমি কাউকে হিসাব দিতে বাধ্য নই। এটা আমার মেলা। তখন মাকসুদ বলেন তার সংগঠন দিয়ে মেলা করলে তিনি প্রতিবাদ করবেন।

এ ব্যাপারে আজম মাকসুদকে বলেন একই সংগঠন দিয়ে তিনি মেলা করবেন না। তাহলে মাকসুদের কোন আপত্তি নেই। কিন্তু পরবর্তীতে পোস্টারে দেখা যায় সংগঠনের নাম ঠিক রেখে নিউ ইয়র্কের পরিবর্তে ইউএসএ লিখে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন। সেখানে ৬৬ প্রেসিঙ্কট কমিউনিটি কাউন্সিলের নাম কোথাও উল্লেখ করেননি। তিনি ভুলে গেছেন ওই সংগঠনও মাকসুদুলের নামে রেজিস্ট্রেশন করা। মাকসুদুল তার সংগঠনকে মানুষের সমালোচনা থেকে বাঁচাতে কমিউনিটি কাউন্সিলের সভাপতি মার্ক কার্টজ-এর সাথে যোগাযোগ করে সংগঠনের কাগজ সরবরাহ করেন। গত মঙ্গলবার(১৪ মে) রাতে কাজী আজম নতুন করে তার ফেসবুকে পোস্টার শেয়ার করেন যেখানে পুরনো সংগঠনের নাম (নিউ ইয়র্ক) ব্যবহার করেছেন। সাধারন সম্পাদক হিসেবে মাকসুদের পরিবর্তে অন্য আরেকজনের নাম ব্যবহার করেছেন। তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে শীঘ্রই উক্ত সংগঠনের পুর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষনা করার ঘোষণা দেন। পাশাপাশি মেলাতে মাকসুদুলের সংগঠনের নাম ব্যবহার না করার জন্য অনুরোধও জানান তিনি। অন্যথায় এ বিষয়ে জরুরি আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে উল্লেখ করেন মাকসুদ।

মাকসুদ বলেন, এবারে যে মেলার আয়োজন করা হয়েছে সেটার অনুমতি ওই সংগঠনের নেই। অনুমতিপত্র রয়েছে ৬৬ প্রেসিঙ্কট কমিউনিটি কাউন্সিলের নামে। যেটার কোষাধ্যক্ষ কাজী আজম। আসলে মেলা প্রেসিঙ্কট কমিউনিটি কাউন্সিলের আর পৃষ্ঠপোষকদের চেক আসে বাংলাদেশি আমেরিকান ফ্রেন্ডশীপ সোসাইটি নামে। এ বিষয়টিও এক ভিন্ন ধরণের প্রতারণা।  

কাজী আজমের কাছে মাকসুদের প্রশ্ন গত দশ বছরে প্রায় ৫ লক্ষ ডলার কোথায় গেল? একটি অলাভজনক সংগঠনের নামে চাঁদা তুলে তা কোন হিসাব দিতে পারছেন না। নিউ ইয়র্কের মানুষের মুখে মুখে কথা আছে কাজী আজম পুলিশের সাথে শখ্যতা গড়ে তুলে তাদের নামেও চাঁদাবাজী করেন আর এসব অর্থ তিনি অনৈতিক কাজে ব্যবহার করে থাকেন বলে অভিযোগ করেন মাকসুদ।

জ্যাকসন হাইটসের বসিন্দা চট্টগ্রাম সমিতির অন্যতম সদস্য আহসান হাবীব বলেন, স্থানীয় পুলিশের সাথে কাজী আজম পুলিশের সাথে শখ্যতা থাকায় পাঁচ বছর আগে চট্টগ্রাম সমিতির একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিনি এক ব্যক্তিকে দিয়ে একটি মামলা করে বেশ কিছু মানুষকে হয়রানী করেছেন। পরে মামলাটি ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে। কারণ ঐ  ব্যক্তি তার পুর্বের আঘাতকে নতুন করে দেখানোর চেষ্টা করেছিলেন। ব্রুকলিন মেলা করে তিনি প্রচুর অর্থ উপার্জন করলেও কোন হিসাব কাউকেই দেননি, এবং ব্যাংক একাউন্ট একাই নিজের নামে করেছেন এ বিষয়টি জানেন বলে উল্লেখ করেন হাবীব।      

এ ব্যাপারে সভাপতি কাজী আজমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথমেই মেলার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন, খুবই ব্যস্ততার মধ্যে আছি। কথা বলার মতো কোন সময় পাচ্ছি না। মেলা সম্পর্কে যে সব অভিযোগ পেয়েছেন সত্যতা যাচাই করে লিখবেন। এই বাংলাদেশ সোসাইটির জন্য আমার পরিবারের পক্ষ থেকে মানে আমার ভাই মিলিয়ন ডলার খরচ করা লোক আপনি সেটা জানেন। দু'চার দশ টাকার জন্য আমরা কাঙাল না। যে সংগঠনের নামে মেলা করছেন সেটা মাকসুদের নামের তালিকাভুক্ত। এ প্রশ্ন করলে তিনি বলেন এটা আমাদের নামে মানে শাহ নেওয়াজ ভাইয়ের নামে রেজিস্ট্রেশন আছে। বসে সব কাগজপত্র দেখাবেন বলে জানান তিনি।

মেলার আয়োজক সংগঠন বাংলাদেশি আমেরিকান ফ্রেন্ডশীপ সোসাইটি অব নিউ ইয়র্ক কার নামে তালিকাভুক্ত রয়েছে জানতে চাইলে চলতি বছরের মেলার আহবায়ক শাহ নেওয়াজ জানান ২০১৯ সাল থেকে ফোবানা সম্মেলন করার জন্য হোটেল বুকিং দিতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন তাদের এ সংগঠনটি ইনকর্পোরেটেড করা ছিল না। পরে এটা তার নিজের নাম ও ঠিকানায় ইনকর্পোরেটেড করেন। সেখানে তার নাম ছাড়া আর কারো ছিল না। তিনি উক্ত সংগঠনের সভাপতি। প্রমাণ হিসেবে তিনি একটি কাগজ পাঠিয়েছেন। কিন্তু সেখানে সেবা প্রদানের তারিখ রয়েছে ১২ জুলাই, ২০১৯। রেজিস্টার এজেন্ট হিসেবে তার ঠিকানা উল্লেখ রয়েছে। কারো কোন নাম বা পদ পদবির উল্লেখ নেই। ধারণা করা হচ্ছে শুধু ট্যাক্স ফাইল করার জন্য এ ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে মাত্র।

বর্তমান সাধারন সম্পাদক এসএম ফেরদৌসের সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হয়। ফোনে না পেয়ে ক্ষুদে বার্তায় বিষয়টি জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু তিনি কোন উত্তর দেননি।