২৭ Jul ২০২৪, শনিবার, ০৪:০০:২০ অপরাহ্ন


অবেশেষে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে মারা গেলেন প্রসূতি সুমি, ডাক্তারদের শাস্তির দাবি
অন্তর আহমেদ নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি:
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০৫-২০২৪
অবেশেষে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে মারা গেলেন প্রসূতি সুমি, ডাক্তারদের শাস্তির দাবি অবেশেষে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে মারা গেলেন প্রসূতি সুমি, ডাক্তারদের শাস্তির দাবি


নওগাঁয় এক প্রসূতির সিজারের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও পেটে গজ রেখেই সেলাই করে দেয়ার দেওয়ার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দুই বার আইসিইউতে নিবির পর্যক্ষেনে থাকার পর আজ ( মঙ্গলবার ) সকাল ৬টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সেই প্রসূতি নারী সুমি খাতুন (৩৫)। মৃত্যূর খবর জানার পর সুমির পরিবারে ও গ্রামে বইসে শোকের মাতম। অভিযুক্ত ডাক্তার ও ক্লিনিক মালিকের বিচার দাবি করেছেন প্রতিবেশি ও স্বজনরা। এ বিষয়ে গত ২০ মে  “পেটে গজ রেখেই সেলাই, আইসিইউতে” শিরোনামে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে টনক নড়ে জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের। তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও এখনও প্রতিবেদন দাখিল করা হয়নি। এর মাঝেই না ফেরার দেশে চলে গেলেন সুমি।

সুমির পরিবার ও ক্লিনিক সূত্রে জানা যায়,  গত ১৫ মে সকালে প্রসবব্যথা শুরু হলে শহরের হাসপাতাল রোড এলাকায় অবস্থিত একতা ক্লিনিকে নেয়া হয় ওই প্রসূতি নারীকে। সেখানে ওই দিনই সিজার করান প্রসূতি বিদ্যা ও স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ সার্জন ডাক্তার তানিয়া রহমান তনি। সিজারের জন্য জেনারেল অ্যানেস্থেসিয়া প্রয়োগ করেন ডাক্তার তানিয়ার স্বামী নওগাঁ সদর হাসপাতালের অ্যানেসথেসিওলজিস্ট ডাক্তার আদনান ফারুক। সিজারের পরই ওই সুমি তার পেটে তীব্র ব্যথা অনুভব করেন এবং প্রচুর পরিমাণে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। ডাক্তার তানিয়া ক্লিনিকের মার্কেটিং অফিসার আব্দুর রউফকে দিয়ে দ্রুত রোগীর পেটে সেলাই করিয়ে নেয়। তার পর রাত ১০টার দিকে রামেক হাসপাতালে পাঠানো হয় সুমিকে। হাসপাতালে নেয়ার পর রাতেই পরিক্ষা করে জানা যায় সুমির পেটে বাড়তি কিছু একটা জিনিস রয়েছে। সেই সাথে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয় আর সেটার জন্য তাকে পর দিন বৃহস্পতিবার সকালে পরিবারের সম্মতিতে ফের অপারেশন করা হয়। এর ১৩দিন পর আজ সকালে মারা যায় সুমি। সুমির এমন মৃত্যুতে শোকের মেছে এসেছে জেলার আত্রাই উপজেলার সন্নাসবাড়ী গ্রামে। সুমির এমন মৃত্যূ কিছুতেই মেনে নিতে পারছেনা স্থানীয় প্রতিবেশিরারও।

স্থানীয় প্রতিবেশী ফারজানা খাতুন ও খালেদ বিন ফিরোজ বলেন, পেটে ব্যাথা উঠলো ভর্তি করা হলো সিজারের জন্য। আস্তা ও ভরসা নিয়েই তো ক্লিনিকে ডাক্তার কাছে যায় রোগী। কিন্তু একটি তাজা প্রাণ ঝরে গেলো। সিজার করার কারনে কিভাবে প্রসূতি মারা যায়। অবশ্যই ভুল অপারেশন বা ভুল চিকিৎসা হয়েছে।  নইলে কেন উন্নত চিকিৎসার জন্য নওগাঁ থেকে রাজশাহীতে রেফার করা হলো। আর কত মানুষ অপ-চিকিৎসার কারনে মারা যাবে। মাঝে মাঝে আমরা শুনতে পাই নওগাঁয় ভুল চিকিৎসার কারনে রোগীর মৃত্যুর ঘটনা। দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হোক এসব ডাক্তার ও ক্লিনিক মালিকদের।

সুমি খাতুনের  খালা ফাহিমা বেগম বলেন, আমার ভাগিনীকে ভুল চিকিৎসা দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। তিনটি বাচ্চার এখন কি হবে। সদ্যজাত সন্তান তো পৃথিবীর আলো দেখার পরই মাকে হারিয়ে ফেললো। ভুল সিজারিয়ানের কারনেই সুমির মৃত্যু হয়েছে। জড়িত সবার কঠিণ শাস্তি চাই আমরা।

সুমির খাতুনের মা রহিমা বেগম বেগম বলেন, অভিযুক্তরা তাদের লোকজনের মাধ্যমে টাকার অফার দিয়ে ঘটনাটি ধামাচাঁপা দেয়ার চেষ্টা করেছিল। আমরা তাতে রাজি হইনি। রাজশাহী মেডিকেল কলেজন হাসপাতালের ডাক্তাররা যখন প্রথমে সুমিকে দেখেছিল তখনই বলেছিল এই রোগীর অবস্থা খুব খারাপ নওগাঁতে প্রোপার ভাবে সিজারিয়ান করা হয়নি। তার পর যখন সেখানে অপারেশন করলো তখন ডাক্তাররা জানাই সুমির অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও পেটে সামান্য গজ ছিল। যার কারনে শারীরিক অবস্থা ভালো ছিলনা। দুই বার আইসিইউতে নেওয়ার পরও আমার মেয়েটাকে বাঁচানো গেলনা। আমার মেয়েটাকে নওগাঁর একতা ক্লিনিকে গরুকে সেলাই করার মত পায়ের হাঁটুর উপর উঠে সেলাই করেছিল। সব কিছুই তাদের ভুল চিকিৎসা ছিল। ওই ডাক্তার তানিয়াকে কাছে পেলে তার হাঁটুর উপর উঠে ওভাবেই সেলাই করে দিতাম। অভিযুক্ত ডাক্তার, ক্লিনিক মালিক ও  এর সাথে জড়িতদের দ্রুত বিচার দাবি করছি। আর যেন আমার সুমির মত কারো ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু না হয়।

অভিযুক্ত ডাক্তার তানিয়া রহমান তনি বলেন, আমি এ বিষয়ে কোন কথা বলতে চাইনা। প্রয়োজনে ডাক্তারদের সংগঠন বা সিভিল সার্জন এর সাথে কথা বলতে পারেন। আমার যা বলার আমি কিছুদিন আগে সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়ে দিয়েছি। আর রাজশাহীতে সুমিকে নিয়ে যাওয়ার পর কি হয়েছে সে বিষয়ে আমি অবগত নয়।

এ বিষয়ে কথা হলে সিভিল সার্জন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। এছাড়া রাজশাহী মেডিকেল কলেজন হাসপাতালের পরিচালক স্যারকে বিষয়টি নিয়ে চিঠিও দিয়েছি। তদন্ত প্রতিবেদন পেলেই সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।