২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ১১:০৮:৩৬ পূর্বাহ্ন


ভাষাসৈনিক মনোয়ারা রহমানের ১৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত
স্টাফ রিপোর্টার:
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০৪-২০২২
ভাষাসৈনিক মনোয়ারা রহমানের ১৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত ভাষাসৈনিক মনোয়ারা রহমানের ১৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত


দেশের নারীমুক্তির অন্যতম পথিকৃৎ আজীবন আত্মত্যাগী বিশিষ্ট ভাষাসৈনিক মনোয়ারা রহমানের ১৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করেছে রাজশাহী প্রেসক্লাব ও জননেতা আতাউর রহমান স্মৃতি পরিষদ। শুক্রবার (৮ এপ্রিল) বিকেলে নগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট রাজশাহী প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা এবং সন্ধ্যায় ইফতার ও দোয়া মাহফিলের মধ্য দিয়ে এ মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়।

সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রয়াত ভাষাসৈনিকের সন্তান ও সংগঠন দুটির সভাপতি সাইদুর রহমান। সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মো. আসলাম-উদ-দৌলার সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন রাজশাহী প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধ প্রশান্ত কুমার সাহা। সভায় জননেতা আতাউর রহমান স্মৃতি পরিষদের সহ: সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার ইকবাল বাদল, রাজশাহী প্রেসক্লাবের সহ: সভাপতি আবু সালে মোহাম্মদ ফাত্তাহ, শিশু সংগঠক সুখেন মুখোপাধ্যায়, জননেতা আতাউর রহমান স্মৃতি পরিষদের সহ: সভাপতি সালাউদ্দিন মিন্টু, রাজশাহী বারের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এডভোকেট শিরাজী শওকত সালেহিন এলেন, মহিলা পরিষদের সভানেত্রী কল্পনা রায়, পাদুকা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শফিকুর রহমান রিপনসহ আরো অনেকে বক্তব্য রাখেন।

সভায় মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংগ্রাহক ওয়ালিউর রহমান বাবু, রাজশাহী প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক জামাল উদ্দিন, দৈনিক সংবাদের রিপোর্টার সুব্রত সরকার, জননেতা আতাউর রহমান স্মৃতি পরিষদের প্রচার সম্পাদক আমানুল্লহ আমান, সিনিয়র সদস্য শরিফ উদ্দিন, সদস্য জামিল হোসেন জনি, আলামিন হোসেন, ইকবাল হাসান টাইগার, আব্দুল হাকিম রাজাসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। 

আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের প্রখ্যাত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব গণমানুষের নেতা বঙ্গবন্ধুর বাকশাল সরকারের রাজশাহী জেলা গভর্নর জননেতা এম আতাউর রহমানের সহধর্মিণী হিসেবে গণমানুষের মুক্তি সমৃদ্ধির জন্য নিজের জীবনকে বিলিয়ে গেছেন মনোয়ারা রহমান। তাঁদের মতো আত্মত্যাগী সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মানবমুক্তির ইতিহাসে বিরল। অনন্ত মাতৃত্বের গৌরবধন্য মাদার বখশের স্নেহময়ীরূপ ভাষাসৈনিক মনোয়ারা রহমানের চরিত্রে পূর্ণতা পেয়েছে। ভাষা আন্দোলনের সময় তিঁনি ছিলেন ১০ম শ্রেণীর ছাত্রী। রাজশাহীর সচেতন নারী ও পিএন গার্লস স্কুৃলের ছাত্রীদের নিয়ে মনোয়ারা রহমান অগ্নিশিখা মিছিল বের করেন। ছাত্রী জীবনে তিঁনি ছিলেন অধিকার সচেতন। তৎকালীন মুসলিম লীগ সরকারের অন্যায় অত্যাচার ও দমন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। রাজশাহী কলেজে ভর্তি হওয়ার পরে তিনি প্রগতিশীল ছাত্ররাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন।

তারা বলেন, গণমানুষের মুক্তির রাজনীতি মানবপ্রেম ছিলো তাঁর জীবনের মূলমন্ত্র। ৫২, ৫৩, ৫৪ সালে বেগম মনোয়ারা রহমান সারাদেশে এক আলোচিত নাম। স্বাধীনতা পরবর্তী দেশ ও জাতি গঠনে সমাজসেবার ক্ষেত্রে তিঁনি বিগত ৪০ বছর ধরে নারী সমাজের উন্নয়ন, নারী মুক্তি, নারী স্বাধীনতা, শিক্ষা ও নিরক্ষরতা দূরীকরণসহ নিঃস্বার্থভাবে অনন্য অবদান রেখে গেছেন। রাজশাহী মহিলা শিল্প প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিঁনি পবা, মোহনপুর, চারঘাট, তানোর, গোদাগাড়ীসহ অত্র অঞ্চলের গবাদিপশু ও মৌমাছি পালন কর্মসূচি, বৃক্ষরোপনসহ বিভিন্ন গঠনমূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে তিঁনি ১০ হাজারেরও অধিক নারীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেন। অসহায় নারীদের সেলাই, বুটিক, এম্ব্রোডারি ও চামড়ার উপর কারুকাজ, তাঁতশিল্পে বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বনির্ভরতা অর্জনে তিঁনি একক ভূমিকা পালন করেন।

আজীবন আত্মত্যাগী মনোয়ারা রহমানের জীবন ও কর্মের আজো কোনো মূল্যায়ন হয়নি। মহান ভাষাসৈনিক দেশ ও জনগণের একবুক কাছের এমন মানবিক ব্যক্তিত্বকে যদি মূল্যায়ন করা না হয়- তাহলে এটি জাতির জন্য দূর্ভাগ্যজনক। মানুষের ভালবাসাকে অস্বীকার করে মানুষ কোনো অবস্থাতে এগিয়ে যেতে পারেনি। মানুষের ভালবাসাই মানুষকে বিজয়ী করে, প্রতিষ্ঠিত করে। বাঙ্গালী জাতীয় জীবনে অনন্ত সলিলা ফাল্গুনধারার মতো এমন আত্মত্যাগী মানব ব্যক্তিত্ব আছে বলেই, জাতি আজো টিকে আছে। মানুষের কোনো আত্মত্যাগই বৃথা যায়নি, বৃথা যাবে না।

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের এই দিনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন দেশের মানবতাবাদী এ সমাজসেবী। তাঁর মৃত্যুর ২ ঘণ্টা পূর্বে বড় মেয়ে মাহফুজা রহমান পুতুল পাড়ি জমান পরপারে। বাংলাদেশের জাতীয় মুক্তি আন্দোলনে রাজশাহী তথা উত্তরাঞ্চলে বেগম মনোয়ারা রহমান একজন অনুসরণীয় নারীনেত্রী। রাজশাহীর প্রখ্যাত আইনজীবী ভাষাসৈনিক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা এ্যাডভোকেট মাদার বখশ্রে প্রথম সন্তান হিসেবে মনোয়ারা রহমান আজীবন নিজ পিতাকে অনুসরণ করেছেন।

রাজশাহীর সময় / এম আর