২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ১১:২৭:০৫ পূর্বাহ্ন


রাজশাহীতে কমেছে গমের আবাদ
মঈন উদ্দীন
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-০৪-২০২২
রাজশাহীতে কমেছে গমের আবাদ ফাইল ফটো


খাদ্যশস্য উৎপাদনে উদ্বৃত্তের জেলা রাজশাহীতে চলতি মৌসুমে গমের আবাদ কমেছে। বিগত বছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৬০০ হেক্টর কম জমিতে এবার গমের চাষ করা হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজশাহীতে ২৬ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে গম আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলো কৃষি বিভাগ। কিন্তু চলতি মৌসুমে গমের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি। অর্জন হয়েছে ২৫ হাজার ৪৯৭ হেক্টর জমি।

কৃষক ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজশাহীতে প্রতিবছরই গমের আবাদ ভালো হয়। কিন্তু গম চাষে খরচ ও শ্রম বেশি লাগে। এরমধ্যে ইঁদুরসহ পোকা-মাকড়ের আক্রমণ বেশি হয়। কিন্তু লাভ কম। এরচেয়ে কম শ্রম ও খরচে সবজি চাষ করে বেশি লাভবান হওয়া যায়। তাই সম্ভাবনাময় অন্যান্য ফসল আবাদের দিকে বেশি ঝুঁকছে কৃষক। ফলে কমছে গমের আবাদ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যে দেখা যায়, গত ২০২০-২১ অর্থ বছরে জেলায় ২৫ হাজার ৪৯৭ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়েছিলো। ওই বছর ফলন ছিলো হেক্টর প্রতি ৩ দশমিক ৭৩ মেট্রিকটন। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বোর মৌসুমে এখন পর্যন্ত ২৪ হাজার ২৩৬ হেক্টর জমিতে গম চাষ করা হয়েছে। ফলন ধরা হয়েছে ৩ দশমিক ৬২ মেট্রিকটন।

কৃষক ও সংশ্লিষ্টরা গমের আবাদ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে বলছেন, করোনাকালীন সবজি ও মসলা জাতীয় ফসলের বেশ ভালো দাম পেয়েছেন চাষিরা। ফলে ধান ও গমের আবাদ কিছুটা কমিয়ে দিয়েছেন।

কৃষি বিভাগ আরও জানায়, ২০২০-২১ মৌসুমে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় ৬ হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও তা এখন পর্যন্ত অর্জন হয়নি। এছাড়া বাঘায় ৫ হাজার ৫২৫ হেক্টর, চারঘাটে ৫ হাজার ৪০০ হেক্টর, পবায় ২ হাজার ১৯৫ হেক্টর, তানোরে ১ হাজার ৫৫০ হেক্টর, পুঠিয়ায় ২ হাজার ৫১৫ হেক্টর, বাগমারায় ১ হাজার ৫৬০ হেক্টর, দূর্গাপুরে ১ হাজার ১০ হেক্টর, মোহনপুরে ৮৫ হেক্টর, মতিহারে ৩০ এবং বোয়ালিয়ায় ৫০ হেক্টর জমিতে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজশাহীর পবা, মোহনপুর, বাঘা, চারঘাট ও তানোর উপজেলায় বেশি গম চাষ হয়। পবা উপজেলার মধুপুর এলাকার চাষি নিরাস হোসেন বলেন, এ বছর ৯ বিঘা জমিতে গমের চাষ করেছি। তবে গমের গমের বীজ ও সারের দাম বেড়েছে। ইদুরের উপদ্রবও বেশি। অন্য বছরের চেয়ে গম চাষে খরচ বেশি।

একই এলাকার চাষি আব্দুস সাত্তার বলেন, গত চার বছর আগে বাড়িতে খাওয়ার জন্য এক থেকে দেড় বিঘা জমিতে গম চাষ করতেন। গত দুই বছর থেকে ৪-৫ বিঘা জমিতে গম চাষ করছেন। বিঘা প্রতি ১৬ মণ হারে গমের ফলন হয়। হাজার টাকা মণ বিক্রি করলেও ১৬ হাজার টাকা পাওয়া যায়। তবে, এক বিঘা জমিতে সবজির আবাদ করলে ৪-৫ গুণ বেশি লাভবান হওয়া যায়। তাই গমের আবাদ কমিয়ে দিয়েছেন।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মোজদার হোসেন জানান, চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে গমের আবাদ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কিছুটা কমেছে। কৃষকরা যখন যে ফসলে ভালো লাভ দেখেন সেটাই আবাদ করেন। এবছর হয়তো গমে লাভ কম হবে ভেবে অন্য আবাদ করছেন।

জেলায় বারি-২৫, ২৮, ২৯, ৩০, ৩১ ও ৩২ জাতের গম বেশি চাষ হয়। তবে, বারি- ৩৩ জাতের গম চাষে চাষিদের আগ্রহ বেশি রয়েছে।

রাজশাহীর সময়/এএইচ