২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ০৬:০৯:৪৪ পূর্বাহ্ন


রাজশাহীতে অগ্নিঝরা গরম, জনজীবন কাহিল
মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী:
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-০৪-২০২২
রাজশাহীতে অগ্নিঝরা গরম, জনজীবন কাহিল রাজশাহীতে অগ্নিঝরা গরম, জনজীবন কাহিল


প্রচন্ড তাপদাহে ও দুঃসহ গরমে রাজশাহীতে জনজীবন কাহিল হয়ে পড়েছে। ব্যাহত হয়ে পড়েছে দৈনন্দিন জীবনযাত্রা। রোববার দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও গরমের দাপট কমেনি। আট বছর পর গত শুক্রবার রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস; যা ছিল সারাদেশের মধ্যেও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। শনিবার বেলা ২টায় এবং ৩টায় রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮ দশমকি ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে শুক্রবারের চেয়ে পরদিন শনিবার তাপমাত্রা ২ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম। তীব্র তাপপ্রবাহ এ দিন মাঝারি তাপপ্রবাহে রূপ নেয়। আর রোববার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে 

অনুভূতি ছিল ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার হিসাবে মরুভূমিতে দিনের গড় তাপমাত্রা সাধারণত ৩৬ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। তবে রাতে তা প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে।

এ ব্যাপারে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহিনুর রহমান বলেন, অল্প সময়ের জন্য তাপমাত্রা কমলেও দিনের বাকি সময়জুড়ে গরম অব্যাহত থাকতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে, বর্তমানে দেশের রাজশাহী, যশোর ও পাবনায় এলাকার তাপমাত্রা গড়ে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি থাকছে।

গরম না কমায় রমজানের মধ্যভাগে বৈরি আবহাওয়ায় জনজীবনে স্থবিরতা নেমে এসেছে। সকাল থেকে দুপুর গড়াতে সড়কে যানবাহন চলাচল কমে আসে। পথচারীদের স্বাভাবিক চলাচল সীমিত হয়ে পড়ে। মানুষ বাইরে বের হলেও কিছুটা সময় দাঁড়িয়ে স্বস্তির শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করেন। প্রচ- তাপদাহের কারণে খালি মাথায় কোনোভাবেই বাইরে বের হওয়া যাচ্ছে না। হাঁপিয়ে উঠেছে পশু-পাখিরাও। প্রখর রোদে মাটি ফেটে চৌঁচির হয়ে যাচ্ছে। একটু শীতল প্রশান্তির জন্য শিশু-কিশোররা পুকুরের পানিতে নেমে দাপাদাপি করছে। পথের ধারে ড্রেন বা ডোবা-নালা পেলে তাতে নেমে পড়ছে প্রাণিকূল।  

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার জানায়, ভারী বৃষ্টিপাত না হওয়া পর্যন্ত চলমান তাপমাত্রা প্রশমিত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আপাতত নেই। তাই ভারী বর্ষণের জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া বিকল্প নেই।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত দুই দিনের তীব্র গরমের কারণে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। হাসপাতালে ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি-কাশি, হৃদরোগ ও স্ট্রোকসহ বিভিন্ন উপসর্গে আক্রান্ত হয়ে রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসছে। এসব রোগে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তদের সংখ্যাও বাড়ছে।

রামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা: আবুল কালাম আজাদ জানান, হঠাৎ করে রাজশাহীতে তাপমাত্রা বাড়ায় ঘরে ঘরে ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন উপসর্গে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এসব রোগে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তদের দুর্ভোগ বেড়েছে। এসময় বৃদ্ধ ও শিশুদের রোদে বের না হয়ে ঠা-া পরিবেশের মধ্যে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। এছাড়া বিশুদ্ধ পানি, ডাব ও দেশি ফলমূল বেশি খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্র জানায়, রাজশাহীতে শনিবার বেলা ২টায় এবং ৩টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ২৭ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন সকাল ৬টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯২ শতাংশ এবং বেলা ৩টায় ৫২ শতাংশ। শুক্রবারের চেয়ে তাপমাত্রা শনিবার কিছুটা কমেছে। তবে রাজশাহীর ওপর দিয়ে এখনো মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। সে কারণে গরমের তীব্রতা কমছে না। 

সূত্রটি আরো জানায়, তাপমাত্রা সাধারণত ৩৬ থকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলা হয়। আর ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা থাকলে তাকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বলা হয়। এছাড়া তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে উঠলেই তাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়ে থাকে। আর তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি পার করলে তাকে বলা হয় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।

আট বছর পর শুক্রবার রাজশাহীতে তাপমাত্রার পারদ ৪১ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যায়। এর আগে ২০১৪ সালের ২৫ এপ্রিল রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। 

তারও আগে ১৯৭২ সালের ১৮ মে দেশে স্মরণকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল রাজশাহীতে ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটিই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে রেকর্ডকৃত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এরপর তাপমাত্রা বাড়লেও এখন পর্যন্ত পুরোনো সেই রেকর্ড ভাঙেনি বলে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার জানিয়েছে। 

রাজশাহীর সময় / এম আর