২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ০২:২৪:১৫ পূর্বাহ্ন


রাজশাহীতে সনদ জালিয়াতি করে ধরা খেলেন মসজিদের ইমাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-০৪-২০২২
রাজশাহীতে সনদ জালিয়াতি করে ধরা খেলেন মসজিদের ইমাম রাজশাহী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি) মসজিদের ইমাম আবু তালহা। ছবি-রাজশাহীর সময়


রাজশাহী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি) মসজিদের ইমাম আবু তালহা। বিদেশগামী এক ব্যক্তির বিদেশ গমনের তিন দিনের সনদ জাল করে রাজশাহী জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ে অন্তর্ভূক্তি করার সময় ধরা পড়েন তিনি। তবে এ ঘটনায় কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে, নাম মাত্র চিঠি দিয়েছেন অধ্যক্ষ এবং মৌখিক ক্ষমা করছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। 

গত বুধবার (১৩ এপ্রিল) ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট করাতে গিয়ে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহা. আব্দুল হান্নান বিষয়টি আঁচ করেন। পরে ইমাম আবু তালহার প্রার্থীর কাগজাদি পর্যালোচনা করার পর তিনি জাল সনদের বিষয়টি ধরে ফেলেন। অত:পর তিন দিনের পি ডি পার্চার সনদ জালের বিষয়টি অবগত করেন রাজশাহী টিটিসির অধ্যক্ষ মো. ইমদাদুল হককে। তারপরও তিনি এ বিষয়ে কোনো প্রকার ব্যবস্থা না নিয়েই মৌখিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার প্রেক্ষিতে মসজিদের ইমাম আবু তালহাকে মাফ করে দেন।

টিটিসির অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অভিযোগ, অধ্যক্ষের সাথে ইমামের রয়েছে ঘনিষ্ট সম্পর্ক। ইমামের হাত দিয়েই চলত বিদেশ গমনের তিন দিনের ট্রেনিং সার্টিফিকেট বিক্রয়ের রমরমা বাণিজ্য। ১৫০০ থেকে ৩০০০ টাকায় বিক্রি হতো এসব সার্টিফিকেট। আর এ কাজে খুব বেশি বেগ পেতে হতো না মসজিদের ইমাম আবু তালহাকে। কারণ, টিটিসির একটি দোকান রয়েছে মেইন গেটের পাশেই। ওই দোকানটি আবু তালহা নিয়েছেন ২০১৬ সালে। এর আগে ২০১৪ সালে তিনি টিটিসির মসজিদে ইমাম হিসেবে নিয়োগ পান। টিটিসি লাগোয়া কম্পিউটার-ফটোকপির দোকান ও টিটিসির ইমাম হওয়ায় লোকেদের কাছে আস্থা অর্জনও করেন তিনি। আর এটিকেই কাজে লাগিয়েই গোপনে সনদ বাণিজ্য চালিয়ে গেছেন ইমাম আবু তালহা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিন দিনের বিদেশ গমনের পিডি পার্চার সনদের ট্রেনিং এ ভর্তি হন প্রায় ৯৫ জন প্রার্থী। আর এ কারণে শুধু সার্টিফিকেট বাণিজ্য করেই ইমামের দিনে আয় হয় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। তবে রাজশাহী জেলার বাইরে ট্রেনিং করা ব্যক্তিদের বেগ পেতে হয় সার্টিফিকেট পেতে। এই সুযোগটিই নেন টিটিসির মসজিদের ইমাম আবু তালহা। ট্রেনিং সনদে ডিজির স্বাক্ষর ও টিটিসির অধ্যক্ষের স্বাক্ষর জাল করে তৈরি করেন রাজশাহী টিটিসির সনদ। সেই সনদই প্রদান করা হয় বিদেশগামী অভিবাসীদের। অবৈধভাবে উপার্জনে ইতিমধ্যে অভিযুক্ত আবু তালহা হয়েছে জমি ও অগাধ সম্পদের মালিক। তবে টিটিসির অধ্যক্ষের উদাসীনতার কারণে তিনি রয়েছেন অধরা।

জানা গেছে, এ ঘটনায় একটি মুচলেকাও প্রদান করেছেন ইমাম আবু তালহা। জাল সনদ গ্রহণকারী বিপ্লবের সার্টিফিকেট সহ অন্যান্য কাগজাদিও করেছে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশিক্ত কার্যালয়। পরে তা হস্তান্তর করা হয় অধ্যক্ষ ইমদাদুল হকের নিকট। এ সমস্ত বিষয় নিশ্চিত করেছেন অভিযুক্ত ইমাম ও কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক।

জাল সনদ ধরার ঘটনাটি স্বীকার করে অধ্যক্ষ ইমদাদুল হক বলেন, বিষয়টি সত্য। কিন্তু এ ঘটনায় ইমাম কোনো মুচলেকা দেয়নি। মৌখিকভাবে তিনি ক্ষমা চেয়েছেন। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে তাকে আমরা ক্ষমাও করেছি।

আইন ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই ইমাম আমার প্রতিষ্ঠানের আওতাভুক্ত নয়। তার অথোরিটি হচ্ছে মসজিদ কমিটি। তার ব্যবস্থা মসজিদ কমিটি নিতে পারে, সেটা আমার দায়িত্ব নয়। সে ভুল করে ক্ষমা চেয়েছে তাকে মাফ করেছি। এর বেশি কিছু বলার নেই।

তবে এবিষয়ে রাজশাহী জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহা. আব্দুল হান্নান বলেন, এক সময় আমাদের দপ্তর থেকেও যে কোনো বিদেশগামী প্রার্থীর আইপি নাম্বার বা পিনটি সার্ভারে দিলেই তার তথ্য পাওয়া যেতো। কিন্তু সেই কর্তৃত্বটিও কেড়ে নেওয়া হয়েছে যার কারণে এসমস্ত সনদ যাচাইয়ে বেশ ভোগান্তিতে পড়ি। তবে যে সনদটি ধরা পড়েছে তা দেখেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম। কারণ, তাতে ঢাকার কিছু তথ্য লেখা ছিল যা গ্রাফিক্রে এডিট করেনি। যার কারণে ওই সনদটি ধরা পড়ে।

তিনি বলেন, বিষয়টি বুধবারই ওই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষকে জানানো হয়েছে। তিনি সব কাগজাদি জব্দ করেছেন। ব্যবস্থা গ্রহণ করার এখতিয়ারও তার, আমার নয়। সুতরাং, এবিষয়ে আমার তেমন কিছু বলার বা করার নেই।

রাজশাহীর সময়/এএইচ