২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ০৩:১৪:৫০ অপরাহ্ন


পুঠিয়ার ফুলবাড়ি কৃষি জমিতে পুকুর খনন করা যাবে না, জেলা প্রশাসক
মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী:
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-০৪-২০২২
পুঠিয়ার ফুলবাড়ি কৃষি জমিতে পুকুর খনন করা যাবে না, জেলা প্রশাসক পুঠিয়ার ফুলবাড়ি কৃষি জমিতে পুকুর খনন করা যাবে না, জেলা প্রশাসক


রাজশাহীর পুঠিয়া ভাল্লুকগাছী ইউনিয়নে কান্তার বিলের ৬০বিঘা ফসলি জমিতে পুকুর খনন সম্পন্ন শেষে জমি খাদকদের নজর এখন ফুলবাড়ি বিলে।

এমন অভিযোগ স্থানীয় কৃষকদের। তারা জানান, পুঠিয়া থানার ফুলবাড়ি গ্রামের ৯০ভাগ মানুষ কৃষি কাজ করে জিবিকা নির্বাহ করে থাকে। কিন্তু একের পর এক ফসলি জমিতে পুকুর খনন করছে এক শ্রেণীর অসাধু লোকজন। এতে বিলিন হতে চলেছে ফসলি জমি। বেকার হচ্ছে কৃষক। এমন চিত্র দেখা মিলবে রাজশাহীর উপজেলা, ইউনিয়ন ও থানা অঞ্চলগুলিতে। আর পবা উপজেলাতে ফসলি জমি থাকবে না সেই লক্ষ্যে প্রভাবশালী নেতা ও ভুমিদস্যূরা পুকুর খনন অব্যাহত রেখেছেন। ভাবখানা এমন তাদের কাছে সবাই বিক্রি। তারাই পবা উপজেলার রাজা, বাদশা।

পুঠিয়া থানার ২নং ইউনিয়ন পালোপাড়া গ্রামের কৃষক মৃত ইয়াসিন আলীর ছেলে কৃষক মো. নজরুল ইসলাম জানান, আমাদের গ্রামের ৯০ভাগ মানুষ কৃষি কাজ করে জিবিকা নির্বাহ করে থাকে। তাছাড়া এই গ্রমের লোকজন ছেলে বেলা থেকেই কৃষি কাজের সাথে জড়িত। ফলে তারা অন্য কোন কাজ করতেও পারবেনা। বর্তমানে ফুলবাড়ী মৌজায় তার ৬৬শতক জমিতে ইরি ধান লাগানো রয়েছে। যাহা আগামী বাংলা জৈষ্ঠ মাসে কাটা হবে। তার জমির পশ্চিম পাশে রয়েছে আইনাল নামের এক কৃষকের প্রায় দুই বিঘা জমি, দক্ষিন পাশে রানা, বাটুল নামের দুই কৃষকের ২বিঘা জমি, পূর্ব পাশে ১০ কাঠা জমি জব্বারের, উত্তর পাশে খোকার রয়েছে ১০কাঠা জমি এবং ওই মাঠে অন্যান্য কৃষকের মিলে প্রায় ৭০বিঘা জমির পুরো মাঠজুড়ে ইরিধান লাগানো রয়েছে। এই সকল জমিতে যেতে সামনে রয়েছে বাটুল ও রানার ২বিঘা জমি। 

কৃষকদের অবরুদ্ধ ও ব্ল্যকমেইল করকে সেই জমিতে উপজেলার চেয়ারম্যানের আপন ভাতিজা মো. আলম (৪২) তার সহযোগী মো. হাশেম আলী (৪০), মো. শফিকুল ইসলাম (৭০) মো. হাকিম (৩৮) ও মো. শাহা আলম অরফে টুটু (৩৯)। গত (৮জানুয়ারী ২০২২) জোর পূর্বক বাটুল ও রানার ২বিঘা জমিতে ভেকু মেশিন নামিয়ে পুকুর খনন কার্যক্রম শুরু করে। ওই দিন গ্রামের সকল কৃষকরা মিলে তাদের বাধা দেয়। বাধার মুখে তারা তাদের পুকুর খনন কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হয়। এরই জেরে গত (৮ জানুয়ারী) সন্ধা ৭টায় ফুলবাড়ী বাজারে অবস্থিত সম্্রাট-সু নামের একটি দোকানে ঢুকে কৃষক নজরুলকে এলাপাথাড়ীভাবে কিল, ঘুষি, লাথি মেরে আহত করে ভুমিদস্যূরা। এ ব্যাপারে ওই দিনই রাতে কৃষক নজরুল বাদী হয়ে পুঠিয়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। 

বুধবার (২০ এপ্রিল) ভূমি দস্যুরা পূণরায় পুকুর খননের লক্ষ্যে ফুলবাড়ি ফসলী জমিতে ভেকু মেশিন নামিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, তারা ফসলি জমির যে স্থানে পুকুর খনন করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। সেখানে পুকুর খনন করলে এই মাঠের সকল কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। বর্ষা মৌসুমে পানিবন্দি হয়ে পড়বে তিন ফসলি কৃষি জমি। সেই সাখে জমিতে জলবদ্ধতা সৃষ্টি হলে কৃষি চাষ করাও প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। ভূমি দস্যুদের মূল লক্ষ্যই হলো পুরো জমিটা পুকুরে পরিনত করা।

এর আগে, (১৮এপ্রিল ২০২২) চেয়ারম্যানের আপন ভাতিজা মো. আলমের নেতৃত্বে ভাল্লুকগাছী ইউনিয়নের কান্তার বিলে প্রায় ৬০বিঘা ফসলি জমিতে পুকুর খনন সম্পন্ন হয়েছে। এবার তাদের নজর ফুলবাড়ি বিলে।

এ ব্যপারে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের নিকট একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগী কৃষক নজরুল ইসলাম। জেলা প্রশাসক তার দেয়া আবেদনটি আমনে নেন এবং ইউএনও পুঠিয়াকে সাংবাদিকের উপস্থিতিতে ফোন করেন। তিনি বলেন ফুলবাড়ি বিলে কোনভাবেই পুকুর খনন করা যাবে না। সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য ইউএনওকে নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক। 

এই মর্মে বৃহস্পতিবার ইউএনও পুঠিয়াকে জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে একটি লিখিত চিঠি প্রেরণ করা হয়।

এ ব্যপারে যোগাযোগ করা হলে, রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর), মো. ইফতেখার আলম। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আমলে নেন। এ সময় তিনি পুঠিয়া থানার ওসিকে ফোন দিয়ে কৃষকদের সহযোগীতার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করেন। 

এদিকে, প্রশাসকের দারস্ত হওয়ায় কৃষক নজরুলকে অব্যাহতভাবে হুমকি দিচ্ছেন ভুমিদস্যু আলম। অভিযোগ না তুল্লে তাকেই দুনিয়া থেকে তুলে দেয়ার কথা বলছেন তিনি। আর এই কাজে তার যত লক্ষটাকা খরচ হবে করবেন বলেও দাম্ভিকতা প্রকাশ করছেন এই সন্ত্রাসী।

রাজশাহীর সময় / জি আর