২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ১১:৪৯:৫৬ পূর্বাহ্ন


স্ত্রীর খুশির জন্য দাড়ি কাটা যাবে কি?
Rajshahir Somoy Desk
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০১-২০২২
স্ত্রীর খুশির জন্য দাড়ি কাটা যাবে কি? ফাইল ছবি


ইসলামীক ডেস্কদাড়ি ইসলামের নিদর্শন। মুসলিম উম্মাহ ইসলামের এ নিদর্শন বহন করে। দাড়ি রাখা নবিজীর নির্দেশ ও ফরজ কাজ। যদিও অনেকে দাড়ি রাখাকে সুন্নাত ও ওয়াজিব বলে বিতর্ক করে থাকেন। কিন্তু স্ত্রীকে খুশি করার জন্য দাড়ি কেঁটে কি বৈধ?

দাড়ি রাখা ফরজ। দাড়ি কাটা, ছাটা, মুণ্ডন করা এবং দাড়ি কেঁটে ফ্যাশন করাও হারাম এবং কবিরা গুনাহ। এমনকি স্ত্রীকে খুশি করার জন্য দাড়ি কাটাও বৈধ নয়। ইসলাম স্ত্রীর খুশির জন্য দাড়ি কাটাকে অনুমোদন দেয়নি।

দাড়ি রাখার বিধান
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘দশটি বিষয় সব নবি-রাসুলগণের সুন্নাত। তন্মধ্যে গোঁফ ছোট করা এবং দাড়ি লম্বা করা অন্যতম।’ (মুসলিম)

মুসলিম উম্মাহর জন্য দাড়ি রাখা আবশ্যক। দাড়ি রাখার বিষয়ে অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশ পালন সম্পর্কে কোরআনের ঘোষণা হলো-

وَ مَا کَانَ لِمُؤۡمِنٍ وَّ لَا مُؤۡمِنَۃٍ اِذَا قَضَی اللّٰهُ وَ رَسُوۡلُهٗۤ اَمۡرًا اَنۡ یَّکُوۡنَ لَهُمُ الۡخِیَرَۃُ مِنۡ اَمۡرِهِمۡ ؕ وَ مَنۡ یَّعۡصِ اللّٰهَ وَ رَسُوۡلَهٗ فَقَدۡ ضَلَّ ضَلٰلًا مُّبِیۡنًا

‘আল্লাহ ও তাঁর রাসুল কোনো বিষয়ে নির্দেশ দিলে কোনো বিশ্বাসী পুরুষ কিংবা বিশ্বাসী নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন সিদ্ধান্তের অধিকার থাকবে না। কেউ আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের অবাধ্য হলে সে তো স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে।’ (সুরা আহজাব : ৩৬)

দাড়ি রাখা ফরজ। কোরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশ মেনে চলাও ফরজ। তিনি দাড়িকে লম্বা করার নির্দেশ দিয়েছেন। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ মর্মে নির্দেশ দিচ্ছেন-

خَالِفُوا الْمُشْرِكِينَ أَحْفُوا الشَّوَارِبَ وَأَوْفُوا اللِّحَى

‘মুশরিকদের বিরোধিতা করো, দাড়ি লম্বা করো, আর গোঁফ ছোট করো।’ (বুখারি, মুসলিম)

সুতরাং দাড়ি রাখার আবশ্যকতাকে কোনোভাবেই অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কারণ নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা করতেন এবং যা বলতেন তার সবকিছুই মহান আল্লাহর তরফ থেকে নির্ধারিত ছিল। মহান আল্লাহ আদেশ ব্যতীত তিনি কোনো সিদ্ধান্ত নিতেন না আর নিলেও তা কোরআনের নির্দেশনার ভিত্তিতেই গ্রহণ করতেন। আল্লাহ তাআলা আরো বলেন-

وَ مَاۤ اٰتٰىکُمُ الرَّسُوۡلُ فَخُذُوۡهُ وَ مَا نَهٰىکُمۡ عَنۡهُ فَانۡتَهُوۡا ۚ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ شَدِیۡدُ الۡعِقَابِ ۘ

‘আর রাসুল তোমাদের যা দেন, তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা থেকে তোমাদের নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি দানে কঠোর।’ (সুরা হাশর : আয়াত ৭)

সুতরাং দাড়ি রাখার নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশ। তিনি নিজে দাড়ি রেখেছেন। দাড়ি কাটেননি। দাড়ি রাখা সম্পর্কে হাদিসের কয়েকটি দিকনির্দেশনা তুলে ধরা হলো-
১. হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মোচ কাটার এবং দাড়ি লম্বা করার আদেশ করেছেন।’ (মুসলিম)
২. একই রাবির বর্ণনায় নবিজী নির্দেশ দিয়েছেন, ‘মুশরিকদের বিরোধিতা করো। দাড়ি বড়ে করো এবং মোচ কাটো।’ (বুখারি)
৩. তিনি আরও নির্দেশ দিয়েছেন, ‘মুশরিকদের বিরোধিতা করো, মোচ কাটো এবং দাড়ি পূর্ণ করো।’ (মুসলিম)
৪. নবিজী সাল্লা্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশ, ‘গোঁফ উত্তমরূপে ছোট করো এবং দাড়ি লম্বা করো।’ (বুখারি)
৫. হজরত আবু হরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনায় নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্দেশ দেন-

ﺟﺰﻭﺍ ﺍﻟﺸﻮﺍﺭﺏ ﻭﺍﺭﺧﻮﺍ ﺍ ﻟﻠﺤﻰ، ﺧﺎﻟﻔﻮﺍ ﺍﻟﻤﺠﻮﺱ

‘তোমরা গোঁফ কাট ও দাড়ি ঝুলিয়ে দাও আর অগ্নি পূজারীদের বিরোধিতা করো।’ (মুসলিম)

উল্লেখিত হাদিসগুলোতে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাড়ি রাখার ব্যাপারে ৪টি শব্দ ব্যবহার করে নির্দেশ দিয়েছেন। তাহলো- ﺍﺭﺧﻮﺍ ـ ﺍﻋﻔﻮﺍ ـ ﺃﻭﻓﻮﺍ ـ ﻭﻓﺮﻭﺍ। এসব শব্দ দ্বারাই পূর্ণ দাড়ি রাখার নির্দেশ করা হয়েছে। সুতরাং মানুষের জন্য দাড়ি রাখা ফরজ।

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়অ সাল্লামের এ নির্দেশ কোনো সাহাবায়ে কেরাম পালন করেননি; এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। নবি-সাহাবা ও পরবর্তী সব উৎকৃষ্ট মানুষই দাড়ি রেখে ফরজ আদায় করেছেন।

মনে রাখতে হবে
কারো মনোরঞ্জন বা খুশির জন্য দাড়ি কাটা, ছাঁটা কিংবা মুন্ডন করা; কোনোটিই বৈধ নয়। বরং দাড়ি কাঁটা, ছাটা কিংবা মুন্ডন করা হারাম ও কবিরাগুনাহ।
এমনকি দাড়িকে কটাক্ষ করা পাপ। ইসলামের কোনো বিধান, ইসলামের সঙ্গে সম্পর্কিত সাধারণ কোনো বিষয়, নবীজির কোনো সুন্নত, এমনকি প্রমাণিত কোনো মুস্তাহাব আমলের প্রতি অবজ্ঞাসূচক বাক্য ব্যবহার করা বা কোনো আচরণ করাও কুফরি। ফতোয়ায়ে আলমগিরিতে এসেছে-
‘ব্যঙ্গবিদ্রুপকারী যদি ইসলামের কোনো বিধানকে হালকা মনে করে উপহাস করে এবং অস্বীকারমূলক শব্দ ব্যবহার করে, তাহলে সে কাফের হয়ে যাবে, যদিও আন্তরিক বিশ্বাস এর বিপরীত হয়।’ (ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দাড়ি রাখার মাধ্যমে নবিজীর প্রকৃত অনুসারি হওয়ার তাওফিক দান করুন। কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।