২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ০৩:৩১:০৩ অপরাহ্ন


চাঁপাইনবাবগঞ্জে 'ফজলী' আমের জি আই স্বীকৃতির দাবী
চাঁপাইনবাবগঞ্জ‌ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-০৫-২০২২
চাঁপাইনবাবগঞ্জে 'ফজলী' আমের জি আই স্বীকৃতির দাবী ফাইল ফটো


ফজলী আম জি আই পন্য হিসেবে রাজশাহী জেলার পক্ষে নিবন্ধনের বিরোধীতা করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার পক্ষে নিবন্ধনের দাবীতে গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিল্প মন্ত্রনালয়ের  ডিজাইন, পেটেন্ট  ও ট্রেডমার্কস বিভাগে একটি আপত্তি দাখিল করা হয়  । প্রেক্ষিতে পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমর্কস বিভাগ এই আপত্তির যৈক্তিকতা বিবেচনা করেই আগামী ২৪ মে তারিখে উভয় পক্ষের শুনানির দিন ধার্য্য করেছে ।

ইতোপুর্বে ফজলী আমের জি আই স্বীকৃতির দাবীতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও শিবগঞ্জে বাগান মালিক , আম ব্যবসায়ী  চেম্বার অফ কমার্স ,সাংবাদিক সহ জেলার বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষ  মানববন্ধন,জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি প্রদান সহ আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে ।

জাতীয় এমনকি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আম বলতে চাঁপাইনবাবগঞ্জকেই বুঝায় এবং সেটা প্রায় ১০০ বছরেরও অধিক সময় ধরে । দেশ বিভাগের  প্রায় দেড়শত বছর আগে থেকেই মালদহ তথা গৌড়ের ফজলী আমের সুখ্যাতি রয়েছে । গৌড়ের অংশ হিসেবে সেই সুখ্যাতির পরিপুর্ন অধিকারী চাঁপাইনবাবগঞ্জ ।  ১৮০০ সালের দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত সংলগ্ন গৌড়ে ফজলবিবি নামে এক বৃদ্ধা বাস করতেন । সে সময় মালদহ জেলা কালেক্টর রাজভেনশ সরকারী কাজে গৌরে আসেন ও ব্ররুদ্ধার বাড়ীর কাছে শিবির স্থাপন করেন । কালেক্টরের আগমন বার্তা শুনে বৃদ্ধা কালেক্টরের  জন্য উপঢৌকন হিসেবে তার বাড়ীর আঙ্গিনার আমগাছের আম উপহার দেন । কালেক্টর আম খেয়ে তৃপ্ত হয়ে  বৃদ্ধাকে সেই আমের নাম জানতে চান । বৃদ্ধা কথা বুঝতে না পেরে  তার নিজের নাম বলেন । সেই থেকে আমটির নামকরন হয় ‘ফজলী’। রাজশাহীতে ফজলী বা অন্য কোন আমের ঐতিহাসিক স্বীকৃতি নেই । স্বাধীনতা পরবর্তি সময়ে যেহেতু  চাঁপাইনবাবগঞ্জ রাজশাহী জেলার অন্তর্ভুক্ত হয় সেই সুবাদেই চাঁপাইনবাবগঞ্জের ইতিহাস ঐতিহ্যকে তাদের ইতিহাস ওঐতিহ্য বলে দাবী করে । যেমনটা  চাঁপাইনবাবগঙ্গের ভোলাহাট থানা হচ্ছে রেশমের সুতিকাগার এবং সমগ্র দেশের ৬০ শতাংশ রেশম সুতা সেখানে উৎপাদিত হয় । শধু তাই নয় শিবগঞ্জ হরিনগর লাহারপুর এর তাঁতে বোনা রেশম বস্ত্র  দেশখ্যাত । কিন্তু রাজশাহী শহরে পাওয়ারলুম বসিয়ে রেশম নগরী করে রেশমের জি আই স্বীকৃতি লাভ করেছে । 

কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে উৎপাদিত মোট আমের এক চতুর্থাংশ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাতেই উৎপাদিত হয় । এ জেলায় ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ৪ লাখ টন আম উৎপাদিত হয়  যার ২৩% বা প্রায় ৮৫ হাজার টন ফজলী আম উৎপাদিত হয় । যেখানে রাজশাহী জেলায় ফজলী আম উৎপাদন হয় মাত্র ২৮ হাজার টন । দেশভাগের পর থেকে সিংহ ভাগ আমের বিপনন হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকেই । চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মত বিশাল পরিমানের আম বাগান আজও অন্য কোন জেলায় নেই । আমের জন্য লাগসই ভুপ্রকৃতি , আবহাওয়া  ও তাপমাত্রা প্রয়োজন তা চাঁপাইনবাবগঞ্জ শতভাগ নিশ্চিত করে বলেই কৃষি বিভাগ গবেষণা বিভাগ বলে।

পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস বিভাগ যে সকল শর্তের প্রেক্ষিতে জি আই পন্যের স্বীকৃতি প্রদান করে {অর্থাৎ ঐতিহাসিক,ভৌগলিক , উৎপাদন , বিপনন }সবই ফজলী আমের ক্ষেত্রে পুরন করেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ। শুধু তাইনয় বাস্তবে একটি প্রমান দিলে আরও স্পষ্ট হবে । যে কোন ভোক্তার সামনে যদি চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীর ফজলী আম রাখা যায় তাহলে ভোক্তা প্রথমেই চাঁপাইনবাবগঞ্জের  ফজলী আমই বেছে নেবে । এর চেয়ে বড় প্রমান আর কি হতে পারে । চাঁপাইনবাবগঞ্জ -৩ আসনের সংসদ সদস্য সংসদেই ফজলী আমের স্বীকৃতির দাবী জানিয়েছেন । এছাড়া অন্য দুজন সংসদ সদস্য চাঁপাইনবাবগঞ্জের পক্ষেই ফজলী আমের স্বীকৃতির কথা জানিয়েছেন।

রাজশাহীর সময়/এএইচ