১৬ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ০৮:১৮:২৭ অপরাহ্ন


পুলিশ সদস্যের কব্জি বিচ্ছিন্নের ঘটনার প্রধান আসামী কুখ্যাত সন্ত্রাসী কবির গ্রেফতার
স্টাফ রিপোর্টার :
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০৫-২০২২
পুলিশ সদস্যের কব্জি বিচ্ছিন্নের ঘটনার প্রধান আসামী কুখ্যাত সন্ত্রাসী কবির গ্রেফতার পুলিশ সদস্যের কব্জি বিচ্ছিন্নের ঘটনার প্রধান আসামী কুখ্যাত সন্ত্রাসী কবির গ্রেফতার


পুলিশ সদস্যের কব্জি বিচ্ছিন্নের ঘটনার মূল আসামী কুখ্যাত সন্ত্রাসী কবির র‌্যাবের অভিযানে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সহযোগীসহ লোহাগড়ার পাহাড়ি এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার  র‌্যাব-৭, চট্রগ্রাম। এ সময় অস্ত্র, গুলি ও মাদক উদ্ধার করা হয়। 

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে চট্রগামের লোহাগাড়া থানাধীন বড় হাতিয়ার গহীন পাহাড়ি এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। 

গ্রেফতারকৃতরা হলো: চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থানার মৃত আলী হোসেনের ছেলে  মোঃ কবির আহমদ (৪৩) ও তার সহযোগী একই থানার মৃত মোস্তাক আহম্মেদের ছেলে মোঃ কফিল উদ্দিন (৩০)। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন র‌্যাব-৭ এর মুখপাত্র সিনিঃ সহকারী পরিচালক, মোঃ নূরুল আবছার। 

তিনি জানান, রোববার (১৫ মে) সকালে চট্টগ্রামের লোহাগড়া থানার একটি মামলার এজাহার নামীয় আসামী কবির আহমদকে গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে অভিযান চালায় পুলিশের একটি আভিযানিক দল। ওই সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে কবির অস্ত্রসহ ইউনিফর্ম পরিহিত এক পুলিশ সদস্য জনিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে সন্ত্রাসী কোপ দিয়ে বাম হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন করে দেয়। একই সময় অপর পুলিশ সদস্য শাহাদত হোসেনকে শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি আঘাত করে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। 

পরে উপস্থিত অন্যান্য পুলিশ সদস্য ও স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় আহত পুলিশ সদস্যদেরকে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। সেখানে পুলিশ সদস্য জনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। 

সেখানেও তার অবস্থার অবনতি হলে মূমুর্ষ অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার জন্য র‌্যাবের হেলিকপ্টার যোগে তাকে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়। অতঃপর ঢাকার মোহাম্মদপুরে আল মানার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। 

গত সোমবার (১৬ মে) ডাঃ সাজেদুল রেজা ফারুকী দীর্ঘ ৯ ঘন্টা ৪০ মিনিট সফল অস্ত্রপচারের মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন কব্জিটি জোড়া লাগাতে সক্ষম হন। 

এ ঘটনায় লোহাগড়া থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করা হয়। যাহা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় গুরুত্ব সহকারে প্রচারিত হলে দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। 

এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।  

এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৭ এর একটি আভিযানিক দল লোহাগাড়া থানাধীন বড় হাতিয়ার গহীন পাহাড়ি এলাকা অভিযান পরিচালনা করে মোঃ কবির আহমদ (৪৩) ও তার সহযোগী মোঃ কফিল উদ্দিনকে (৩০) গ্রেফতার করে। 

অভিযান চলাকালে গ্রেফতারকৃত কবিরের কাছে থাকা অস্ত্র দিয়ে র‌্যাব সদস্যদেরকে লক্ষ করে গুলি ছুড়লে একজন র‌্যাব সদস্য আহত হয়। প্রতিউত্তরে র‌্যাবও পাল্টা গুলি চালায়। পরে ঘটনাস্থল থেকে কবিরকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এ সময় জব্দ করা হয় পুলিশ সদস্যদেরকে জখমে ব্যবহৃত ১টি দা, ১টি ওয়ান শুটার গান, ৩ রাউন্ড গুলির খোসা, ৩ রাউন্ড তাজা গুলি, ২টি হাসুয়া, ১টি ছুরি ও ১৮০ পিস ইয়াবা। 

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে জখম করা ঘটনার সাথে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।    

তারা আরও জানায়, ঘটনার পর কবির তার সহযোগী কফিলকে নিয়ে বান্দরবান এর দক্ষিণ হাংগর এলাকার একটি দূর্গম পাহাড়ে আত্মগোপন করে। সেখানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে গ্রেফতারকৃত কবির ও তার সহযোগী অবস্থান পরিবর্তন করে পুনরায় লোহাগাড়া থানাধীন বড় হাতিয়ার গহীন পাহাড়ি এলাকায় অবস্থান নেয়। অবশেষে বৃহস্পতিবার (১৯ মে) র‌্যাব-৭ এর সদস্যরা তাদের গ্রেফতার করে। 

গ্রেফতারকৃত কবির স্থানীয় এলাকার একজন চিহ্নিত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী। সে দীর্ঘদিন যাবত এলাকায় জমি দখল, মারামারিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে আসছে। কেউ তার সন্ত্রাসী কার্যকলাপে বাধা দিলে তার উপর সশস্ত্র হামলা চালিয়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করতো। তার কাছে থাকা অবৈধ অস্ত্রটি এক অস্ত্র ব্যবসায়ীর নিকট হতে ক্রয় করে বলে স্বিকার করে সন্ত্রাসী কবির। তার নামে বিভিন্ন থানায় হত্যাচেষ্টা ও মারামারির মামলাসহ ৬টি মামলা রয়েছে। 

গ্রেফতারকৃত কফিল একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। বিভিন্ন সময় সে পাশর্^বর্তী দেশ হতে মাদক নিয়ে এসে চট্টগ্রাম ও তার পাশর্^বর্তী এলাকায় মাদক সরবরাহের সিন্ডিকেট পরিচালনা করতো। 

সে তার সহযোগী কবিরের বিভিন্ন অপরাধ কর্মকা-ের সহযোগী ও প্রশ্রয়দাতা এবং এলাকায় বিভিন্ন মাদক ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সাথে জড়িত বলে স্বিকার করে। 

গ্রফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। 

শুক্রবার সকালে তাদের সংশ্লিষ্ট থানার মাধ্যমে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে বলেও জানান র‌্যাবের এই মুখপাত্র।