২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ০২:৫২:৫৭ পূর্বাহ্ন


পুরুষ সেজে আরেক মেয়েকে বিয়ে করে একত্রে বসবাস, এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি
মঈন উদ্দীন:
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৫-২০২২
পুরুষ সেজে আরেক মেয়েকে বিয়ে করে একত্রে বসবাস, এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি পুরুষ সেজে আরেক মেয়েকে বিয়ে করে একত্রে বসবাস, এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি


কয়েক দিন আগে  বাড়ি থেকে পালিয়ে আত্মগোপন করে মেয়ে হয়েও পুরুষ সেজে আরেক মেয়েকে বিয়ে করে একসঙ্গে থাকছিল তারা। বিষয়টি দুই পরিবারের কেউই আগে জানতে পারেননি।

বৃহস্পতিবার (২৬ মে) এক মেয়ের পরিবার রাজশাহীর গোদাগাড়ী থানাধীন প্রেমতলী পুলিশ ফাঁড়িতে একটি অভিযোগ দেন।

শুক্রবার সকালে পুলিশ গোদাগাড়ী পৌর এলাকার একটি বাড়ি থেকে দুই মেয়েকে উদ্ধার করে নিজ নিজ অভিভাবকের জিম্মায় পাঠিয়ে দিয়েছেন। এক মেয়ের কাছ থেকে একটি কৃত্রিম পুরুষাঙ্গ উদ্ধার করেছে পুলিশ। দুই মেয়ের একত্রে বসবাসের ঘটনাটি এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার এক মেয়ের (২৩) প্রায় দুই বছর আগে বিয়ে হয় পৌর এলাকায়। তাদের একটি মেয়েসন্তান আছে। পারিবারিক ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ওই মেয়ের সঙ্গে একই গ্রামের আরেকজনের স্ত্রীর এক ধরনের বিশেষ সম্পর্ক গড়ে উঠে। তাদের এ সম্পর্ক গভীর হয়ে উঠলে মেয়েটি স্বামীর বাড়িতে যাওয়া বন্ধ করে দেন। সেই থেকে তিনি বাপের বাড়িতে থাকছিলেন।

এদিকে গত বছর নভেম্বরে মেয়েটি হঠাৎ করে তার পরিবারকে জানান, তিনি প্রকৃতির নিয়মে মেয়ে থেকে ছেলেতে রূপান্তরিত হয়েছেন। তিনি মেয়েদের পোশাক ছেড়ে ছেলেদের মতো জিন্স প্যান্ট ও টিশার্ট পরা শুরু করেন। ছেলেদের মতো করে চুল কাটেন। গত ২ নভেম্বর কাজী অফিসের মাধ্যমে তার স্বামীকে তালাক দেন।

একই সঙ্গে তার সঙ্গে অপরজনের স্ত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক আরও গভীর হয়। তারা পরস্পর নিজেদের মধ্যে দেখা সাক্ষাৎ ছাড়াও মোবাইল ফোনে গল্প করতেন গভীর রাত পর্যন্ত। মেয়েটি ছেলেদের মতো করে গ্রামে চলাফেরা করতেন। পরিবার ও পাড়াপ্রতিবেশীরা বিষয়টি তেমন গুরুত্বের সঙ্গে নেননি। বরং তারা তার পুরুষালি চলাফেরার ঘটনা উপভোগই করতেন। ঠাট্টা মজা করতেন এ নিয়ে।

এলাকাবাসী আরও জানান, গত ১৭ মে অপর মেয়ে স্বামীকে তালাকনামা পাঠান। পরে রাতের বেলা মেয়েটির সঙ্গে গৃহত্যাগ করে আত্মগোপনে চলে যান। তারা ঢাকায়  গিয়ে এক আত্মীয়র বাড়িতে উঠেন। সেখানে এক কাজী অফিসে গিয়ে তারা বিয়ে করেন। বিয়ের কাবিননামায় মেয়েটির নাম দেওয়া হয় ফাহিম হোসেন।

ঢাকায় এক আত্মীয়র বাড়িতে অবস্থান শেষে বৃহস্পতিবার রাতে ফাহিম ও অপর মেয়েটি গোদাগাড়ীর মাদারপুর এলাকার আত্মীয় জুয়েল রানার বাড়িতে উঠেন। এলাকায় ফেরার পরপরই লোকজনের মাধ্যমে ঘটনাটি জানাজানি হয়। শুক্রবার সকাল থেকেই এলাকার লোকজন জুয়েল রানার বাড়িতে ভিড় করেন তাদের একনজর দেখার জন্য। ঘটনা শুনে দূরের লোকজনও ভিড় করেন সেখানে।

অন্যদিকে গত বৃহস্পতিবার রাতে ছেলে বলে পরিচয় দেওয়া মেয়েটির চাচা গোদাগাড়ী থানায় একটি অভিযোগ করেন। এ অভিযোগে তিনি দাবি করেন- তার ভাতিজি ছেলেতে রূপান্তরিত হয়েছে কিছুদিন আগে। আর তাকে অপহরণ করে গুম করেছে অপর মেয়েটি ও তার পরিবার। পুলিশ অভিযোগের সূত্র ধরে শুক্রবার সকালে মাদারপুর মহল্লার জুয়েল রানার বাড়ি থেকে জিন্স প্যান্ট ও টি-সার্ট পরা ছেলেরূপী মেয়ে ও অপর মেয়েকে উদ্ধার করে।

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে গোদাগাড়ী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামরুল ইসলাম জানান, মেয়েটি নিজের নাম ফাহিম উল্লেখ করে অপর মেয়ের সঙ্গে ঢাকার কোনো এক কাজী অফিসে বিয়ে করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। কিন্তু কাবিননামাটি পুলিশ উদ্ধার করতে পারেনি। বিষয়টি স্পর্শকাতর। দুই মেয়ের বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ অথবা একসঙ্গে বসবাস কোনোটারই আইনি বৈধতা নেই। আর এমন ব্যতিক্রমী ঘটনা সামাজিকভাবেও গ্রহণযোগ্য নয়। ফলে তাদের নিজ নিজ অভিভাবকের জিম্মায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।