২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার, ০৪:২৩:০৮ অপরাহ্ন


চট্টগ্রামে চলন্ত বাসে তরুণীকে ধর্ষণচেষ্টা: চালক গ্রেফতার
অনলাইন ডেস্ক :
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-০৬-২০২২
চট্টগ্রামে চলন্ত বাসে তরুণীকে ধর্ষণচেষ্টা:  চালক গ্রেফতার চট্টগ্রামে চলন্ত বাসে তরুণীকে ধর্ষণচেষ্টা: চালক গ্রেফতার


চট্টগ্রাম নগরীতে চলন্ত বাসে পোশাকশ্রমিক তরুণীকে ধর্ষণচেষ্টার ঘটনায় বাসটির মূল চালক মো. গিয়াস উদ্দিন নয়ন (২১) ও তার সহযোগী সীমান্ত দত্তকে (২১) গ্রেফতার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২ জুন) রাতে নগরীর চান্দগাঁও এলাকা থেকে দুজনকে গ্রেফতার করে বন্দর থানা পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, নগরীর বন্দর থানায় দায়ের হওয়া একটি ছিনতাই মামলায় চালককে তার সহযোগীসহ গ্রেফতার করা হয়েছে। ধর্ষণচেষ্টার ঘটনার আগে একই বাসে ছিনতাইয়ের ঘটনাটি ঘটেছিল।

 এ বিষয়ে বন্দর থানার উপ-পরিদর্শক কিশোর মজুমদার বলেন, পলাশ কান্তি দে নামে এক ব্যক্তি বৃহস্পতিবার ছিনতাইয়ের অভিযোগে বন্দর থানায় একটি মামলা করেন। এতে অভিযোগ করা হয়, গত ২০ মে রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিনি ইপিজেড এলাকার বে শপিং সেন্টারের সামনে থেকে বাসে ওঠেন। নিমতলা বিশ্বরোডে বাস পৌঁছার পর তাকে নামিয়ে দেয়ার জন্য বললে চালক দ্রুতগতিতে বাসটি বড়পোলের দিকে নিয়ে যেতে থাকে। এ সময় তিনি চিৎকার করলে বাসে যাত্রীবেশে থাকা তিনজন তাকে ছুরিকাঘাত করে নগদ ১০ হাজার টাকা ও দুটি মোবাইল লুটে নেয়। 

এরপর বাসটি সিটি গেট এলাকায় নিয়ে জোরপূর্বক পিন নম্বর নিয়ে তার বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে ৪০ হাজার ৮০০ টাকা তুলে নেয়। পলাশকে বাসের ভেতর জিম্মি করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিনেমা প্যালেস মোড় এবং বহদ্দারহাটে গিয়ে তিন দফায় এসব টাকা বিকাশ সেন্টার থেকে উত্তোলন করা হয়। এরপর বাস লালখান বাজার এলাকায় ফ্লাইওভারে তুলে রাত সাড়ে তিনটার দিকে পলাশকে নামিয়ে দেয়া হয়। আহত পলাশ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে মামলা করেন। 

এসআই কিশোর মজুমদার বলেন, ‘নিমতলাসহ আশপাশের এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে আমরা দেখি, যে বাসটিতে তরুণীকে ধর্ষণের চেষ্টা হয়েছিল, সেই একই বাসে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। ছিনতাইয়ের সময় বাসটিতে চারজন ছিল। গিয়াস গাড়ি চালাচ্ছিল। সীমান্তসহ বাকি তিনজন ছিনতাই করে। গিয়াসের পরিচয় শনাক্ত করে আমরা তাকে গ্রেফতার করি। সিনেমা প্যালেস এলাকায় বিকাশের দোকান থেকে টাকা উত্তোলন করে সীমান্ত। সেখানকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজে তার ছবি শনাক্ত করে তাকে গ্রেফতার করি। সীমান্তও একজন পেশাদার গাড়িচালক। 

গিয়াস বাসটির মূল চালক হলেও ধর্ষণচেষ্টার সময় তার বদলে অন্যজন গাড়িটি চালাচ্ছিল বলে জানিয়েছেন এসআই কিশোর। 

গত ১৯ মে রাতে নগরীর বাকলিয়া থানার রাহাত্তারপুল এলাকা থেকে ২০ বছর বয়সী এক তরুণীকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয়রা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে পুলিশ এ নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে। পাঁচ দিন ধরে সংজ্ঞাহীন ছিলেন ওই তরুণী। ২৪ মে তার জ্ঞান ফেরে। পরদিন তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়।

 এরপর পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারে, পেশায় পোশাককর্মী তরুণী শ্রমিকদের জন্য নির্ধারিত কারখানার বাসে প্রতিদিন আসা-যাওয়া করেন। ১৯ মে রাত ৯টার দিকে কারখানা ছুটি হয়। তিনি বাসায় ফেরার জন্য একই কারখানার আরও ১০-১২ জন শ্রমিকের সঙ্গে বাসে ওঠেন। বাস বহদ্দারহাট এলাকায় পৌঁছার পর অন্য শ্রমিকরা দ্রুত নেমে যান। পেছনের আসন থেকে এগিয়ে নামার সময় তাকে নিয়ে বাস দ্রুত রাহাত্তার পুলের দিকে এগিয়ে যায়।

 চালকের আসনে ছিল তার সহকারী। আর চালক দরজায় দাঁড়িয়ে ছিল। বাস যখন বহদ্দারহাট থেকে রাহাত্তার পুলের দিকে যেতে থাকে, তখন চালক তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এ সময় চলন্ত বাস থেকে লাফিয়ে নিচে পড়ে জ্ঞান হারান তরুণী।

 ২৫ মে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর ওই তরুণী নগরীর বাকলিয়া থানায় মামলা করেন। এরপর পুলিশ ঘটনার সময় বাসটি যে চালাচ্ছিল সেই আনোয়ার হোসেন টিপু  এবং তার সহকারী জনি দাশকে গ্রেফতার করে। জব্দ করা হয় বাসটিও।

 এদিকে একই বাসে গত ২১ মে আরেকটি ছিনতাইয়ের অভিযোগে নগরীর পাহাড়তলি থানা পুলিশ চারজনকে গ্রেফতার করে। তাদের গ্রেফতারের পরই মূলত প্রকাশ হয়, ওই বাসটি ব্যবহার করে ধর্ষণের চেষ্টা, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ করেছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র।

 বন্দর থানার এসআই কিশোর মজুমদার বলেন, বাসের মূল চালক গিয়াস, ধর্ষণের চেষ্টার সময় যে বাস চালাচ্ছিল সেই টিপু, পাহাড়তলি থানায় গ্রেফতার হওয়া আসামিরা সবাই একই সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। তারা ওই বাস ব্যবহার করে নগরীতে বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম করছিল।