২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ০৭:৫৬:৩৭ পূর্বাহ্ন


বাংলাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহবান মার্কিন কংগ্রেসম্যান জেমি রাসকিনের
নোমান ইবনে সাবিত/বিপি, নিউ ইয়র্ক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০৬-২০২২
বাংলাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহবান মার্কিন কংগ্রেসম্যান জেমি রাসকিনের বাংলাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহবান মার্কিন কংগ্রেসম্যান জেমি রাসকিনের


জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন কংগ্রেসম্যান জেমি রাসকিন। মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে মেরিল্যান্ডের ৮ম কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্টের প্রতিনিধি ১১৭তম কংগ্রেসের দ্বিতীয় অধিবেশনে দেয়া এক ভাষণে তিনি এই আহ্বান জানান। বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে সরকার মৌলিক মানবাধিকার এবং নাগরিক স্বাধীনতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। মার্কিন কংগ্রেসের ওয়েবসাইটে হাউস জুডিসিয়ারি কমিটির সদস্য এবং সিভিল রাইটস ও সিভিল লিবার্টিস সাব কমিটির চেয়ারম্যান রাসকিনের ওই বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে। এ খবর জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস।

হাউস জুডিশিয়ারি কমিটি, তত্ত্বাবধান ও সংস্কার কমিটি এবং হাউস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কমিটির কংগ্রেসম্যান জেমি বলেন, আজ আমি বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করছি। যে মুহূর্তে বাংলাদেশ সরকার মৌলিক মানবাধিকার এবং নাগরিক স্বাধীনতার বিপক্ষে অব্যাহত হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে ঠিক সেসময় মানবাধিকার কর্মী, সংখ্যালঘু সদস্য এবং সুশীল সমাজের পক্ষে আমার সমর্থন ঘোষণা করছি। বাংলাদেশের ‘ক্রম অবনতিশীল’ মানবাধিকার পরিস্থিতির জন্য আওয়ামী লীগ সরকার যে ব্যাপক নিন্দার মুখে পড়েছে তা বক্তব্যে উল্লেখ করেন রাসকিন। তিনি বলেন, ক্রম অবনতিশীল মানবাধিকার পরিস্থিতি, বিপদের মুখে থাকা নৃগোষ্ঠী, নারী, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, মানবাধিকার কর্মী এবং শরণার্থীদের রক্ষায় ব্যর্থতার জন্য ইতিমধ্যে ব্যাপক নিন্দার মুখোমুখি হয়েছে সরকার। বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্টেও উঠে এসেছে। মহামারির সময়ে মানবাধিকারের লঙ্ঘন আরও বেড়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

২০১৮ সালে কার্যকর হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এই আইনের অধীনে বাংলাদেশি সাংবাদিক এবং মানবাধিকারের রক্ষকরা নিয়মমাফিক নির্যাতিত হচ্ছেন কারণ, তারা সরকারের অনিয়ম কিংবা নীতির সমালোচনা করেছেন।

পাশাপাশি করোনাভাইরাস প্রতিরোধের জন্য যে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে সেগুলোকে রাজনৈতিক সভায় বাধা দেয়া এবং সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দমিয়ে রাখতে ব্যবহার করা হয়েছে। মহামারির সময় নারী এবং নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের বিরুদ্ধেও সহিংসতা বেড়েছে বলে দাবি করেন এই কংগ্রেসম্যান।

বক্তব্যে র‌্যাবের কার্যক্রম নিয়ে সমালোচনার কথাও তুলে আনেন রাসকিন। তিনি বলেন, র‌্যাব এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যায় কার্যক্রম বন্ধে ক্রমাগতভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে সরকার। ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ছয় শতাধিক গুম এবং ২০১৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ছয়শ’র কাছাকাছি বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ উঠেছে র‌্যাব এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে। মূলত বিরোধীদল, সাংবাদিক এবং মানবাধিকার কর্মীরাই টার্গেট হন।

রাসকিন বক্তব্যে আরও বলেন, আমি যে টম লেন্টস হিউম্যান রাইটস কমিশনের সদস্য, সেটি গত আগস্ট মাসে বাংলাদেশে বিপজ্জনকভাবে গুম বেড়ে যাওয়া নিয়ে একটি ব্রিফিংয়ের আয়োজন করেছিল। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের প্রতিনিধিরা তাতে যোগ দিয়েছিলেন। পাশাপাশি এতে অংশ নিয়েছিলেন ফেসবুকে সরকারের সমালোচনা করায় গ্রেপ্তার হওয়া আলোকচিত্রী শহীদুল আলম এবং গুম হওয়া বিরোধী দলের নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন। এসব সহিংসতা এবং গুম বাংলাদেশের মুক্তমত, বিরোধীদল এবং সুশীল সমাজের কার্যক্রমকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে বলে বক্তব্যে উল্লেখ করেন তিনি।

রাসকিন আরও উল্লেখ করেন, আইনের শাসন, মানবাধিকার এবং মৌলিক অধিকার অবজ্ঞা করার দায়ে গত বছরের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট। কিন্তু জাতিসংঘের রিপোর্টে বলা হয়েছে, নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর ‘পাল্টা প্রতিশোধমূলক’ জবাব হিসেবে বাংলাদেশ সরকার ভয় এবং হয়রানিমূলক কার্যক্রম বেছে নিয়েছে। গুমের শিকার অন্তত ১০ পরিবারের স্বজনদের বাসায় রাতের বেলা অভিযান চালানো হয় এবং কিছু স্বজনকে তাদের পরিবারের সদস্যদেরকে গুম করা হয়নি এই মর্মে জোর করে স্বাক্ষর দিতে বাধ্য করা হয়।

বক্তব্যের শেষে তিনি তার সহকর্মীদের বাংলাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমি আমার সহকর্মীদের বলবো বাংলাদেশের জনগণের পাশে দাঁড়ান, বিশেষ করে যারা সাহসী এবং সব থেকে বেশি ঝুঁকিতে আছেন। আমি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যাতে জনগণের ‘নাগরিক অধিকারের’ প্রতি সম্মান এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেয়া হয়।