২৮ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৮:২১:২১ অপরাহ্ন


পুঠিয়ায় ঢলন প্রথায় জিম্মি আমচাষিরা, অসহায় প্রশাসন
পুঠিয়া (রাজশাহী) প্রতিনিধিঃ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-০৬-২০২২
পুঠিয়ায় ঢলন প্রথায় জিম্মি আমচাষিরা, অসহায় প্রশাসন পুঠিয়ায় ঢলন প্রথায় জিম্মি আমচাষিরা, অসহায় প্রশাসন


রাজশাহীর জেলার সবচেয়ে বড় আমের হাট পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বাজারে। এখানে হাট থেকে আম কিনে বিভিন্ন মোকামে নিয়ে যান পাইকাররা। এই মোকাম গুলোতে মোট ১২৬ জন ব্যবসায়ী রয়েছেন। দীঘদিন থেকে এই ব্যবসায়ীরাই সিন্ডিকেট করে স্থানীয় আমচাষি ও বিক্রেতাদের ঠকাচ্ছে। চক্রটি কয়েক বছর ধরেই ঢলন ও শোলাপ্রথার নামে চাষিদের নানান ভাবে ঠকাচ্ছে। কিন্তু একাধিকবার সমাধানের জন্য আলোচনা করেও সিন্ডিকেটের লাগাম টেনে ধরতে পারছে না খোদ প্রশাসনও।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হলে সিন্ডিকেট আম কেনা বন্ধ রাখেন। কৃষক গাছে থেকে হাটে আম নিয়ে আসে কিন্তু পাইকারা হাটে আসে না। র্দীঘ সময় রোদে পুড়ে হাটে বসে থাকেন কৃষক। দুপুরের পরে ও বিকেলে পাইকার বাজারে এসে অল্প দামে চওড়া ঢলন প্রথায় আম নিয়ে যায় তারা। এদিকে গত বছর করোনার অজুহাতে চক্রটি প্রতি মণে ১০ কেজি বেশি আম নিয়েছে। এই নিয়মকে তারা বলছেন ‘ঢলন’। এবার আরও এক কেজি বাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে ১১ কেজি। যেখানে ৪০ কেজিতে একমণ ধরা হয় সেখানে ৫১ কেজিতে ১ মন আম কৃষকদের কাছে থেকে নিচ্ছেন এই সিন্ডিকেট।

হাটে আম বিক্রি করতে আসা চাষিরা জানাচ্ছেন, বাজারের আম ব্যবসায়ীদের কাছে আমরা জিম্মি। বিষয়টি বাজার কমিটি ও উপজেলা প্রশাসনকে একাধিকবার জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি।

চলতি মাসের কয়েকদিন বানেশ্বর হাটে গিয়ে দেখা যায়, বাজারের বেশির ভাগ ক্রেতা স্থানীয় ফঁড়িয়া ও আড়ৎদার। হাতে গোনা কয়েকজন ব্যবসায়ী বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছেন। তাঁরা আম কিনছেন মণ ও চুক্তি দুভাবেই। প্রতি মণে নেওয়া হচ্ছে গড়ে ৫০ থেকে ৫১ কেজি আম। সে হিসাবে বিক্রেতাকে প্রতি মণে ঢলন দিতে হচ্ছে ১০-১১ কেজি।

বানেশ্বর বাজারে আসা আমবাগান মালিক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাজারে আম বিক্রি করতে এসে ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে থাকতে হয়। তারা যেভাবে পারছে বিক্রেতাদের লুট করছে। কয়েক বছর আগেও ৪৫ কেজিতে এক মণ আম বিক্রি করেছি। এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০-৫১ কেজি।

মোহাম্মদ নামের আরো এক চাষী বলেন,‘অতিরিক্ত আম নেওয়ার বিষয়টি প্রতিবছরই বাজার কমিটি বা স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হয়। আর ঢলনপ্রথা বাতিল করতে বাজার কমিটি ও উপজেলা প্রশাসন ব্যবসায়ীদের নিয়ে প্রতিবছর দু-একবার বৈঠক-সমাবেশ হয়। কিন্তু বাস্তবে এর কোনো সুফল আমচাষিরা পাচ্ছেন না।

সোহানুর নামের আম বিক্রেতা বলেন,‘এই বাজারে আম বিক্রি করতে হলে চাষিদের কয়েকটি ধাপে ভর্তুকি দিতে হয়। এর মধ্যে আড়তদার ঢলন নেয় প্রতি মণে ৯ কেজি। ওজনকারী প্রতিমণ মাপার আগে শোলার নামে বড় দুটি আম আলাদা করে রাখাসহ ওজনকারীরা বাড়িতে খাওয়ার কথা বলে সব বিক্রেতার কাছ থেকে দুই-তিনটা করে আম তুলে নেয়। এরপর আম বিক্রির দাম পরিশোধ করার সময় আড়তের ক্যাসিয়ার বাটার নামে নিজের কমিশন ২০-৫০ টাকা পর্যন্ত কেটে নেয়।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বানেশ্বর বাজারের ব্যবসায়ী ও হাট ইজারদার ওসমান আলী বলেন,‘আম কাঁচামাল এটার কিছু ভতুকি তো আছে। এই অজুহাতে ব্যবসায়ীরা মণ হিসেবে অতিরিক্ত কিছু আম নেন। আর এই কারণে ঢলনপ্রথা তুলে দিতে আমরা ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করি মণে নয়, তারা যেন যত কেজি আম কেনেন তত কেজির দাম দেন। বিভিন্নভাবে বোঝানোর পরও সেটা কার্যকর হচ্ছে না।’

আম ব্যবসায়ীরা অবশ্য অতিরিক্ত আম দিতে কাউকে কাউকে বাধ্য করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁরা বলেন, এখানে কোনো বিক্রেতার কাছ থেকে জোর করে আম নেওয়া হয় না। কেনার সময় তাঁদের বলা হয় প্রতি মণে কত কেজি ঢলন দিতে হবে। তাঁদের ইচ্ছে হলে দেবেন,আর না হলে নয়। তিনি আরো বলেন, ‘অনিয়ম রোধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব সময় আমের বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে।

পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূরুল হাই মোহাম্মদ আনাস পিএএ জানান, এই সমস্যা শুধু বানেশ্বর আমের হাটেই না। চাঁপাইনবাগঞ্জ, নওঁগা জেলাতেও এই প্রথা চালু আছে। বানেশ্বরে এই সমস্যা অনেক দিনের। গত বছর স্থানীয় প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবসায়ীদের সাথে আমরা আলোচনা করেছিলাম। তাদের বলার পরে কিছুদিন ব্যবসায়ীরা মণ প্রতি কম রেখেছিলো । এইবারও তাদের বলা হয়েছে ঢলন প্রথা বাদে আম কিনতে। বিষয়টি নিয়ে আবারো বলবো আলোচনা করবো আশাকরি তাদের এই প্রথা বাদে সঠিক ভাবে আম কিনেবে।