২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ১২:৩৭:০৬ পূর্বাহ্ন


কুড়িগ্রামে আরও বাড়ছে বন্যার পানি
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৬-২০২২
কুড়িগ্রামে আরও বাড়ছে বন্যার পানি ফাইল ফটো


কুড়িগ্রামের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ায় জেলার ৯টি উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় প্লাবিত হয়ে পড়েছে আরও নতুন নতুন এলাকা।

রোববার (১৯ জুন) সকালে পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস সূত্রে জানা গেছে, ধরলার পানি বিপৎসীমার ২৭ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার ও নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি কমে গিয়ে বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

নদ-নদীর অব্যাহত পানি বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন জেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলগুলোর মানুষজন। দুর্গম চরাঞ্চলের অনেক পরিবার নৌকা ও বাঁশের মাঁচায় আশ্রয় নিয়ে দিন পার করছে। পানির তোড়ে ঘরবাড়ি ভেসে যাওয়ার আতঙ্কে অনেকেই ঘর-বাড়ি ভেঙে নিয়ে উঁচু স্থানে তুলে রাখছেন।

অনেকের বসতবাড়ি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় রান্না করে খেতে পারছেন না তারা। শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পনির সংকট দেখা দিয়েছে এসব এলাকায়। নিজেদের পাশাপাশি গবাদি পশুরও খাদ্য সংকট নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। পানি বৃদ্ধির ফলে এসব এলাকার অনেক পরিবারই তাদের গবাদি পশু নিয়ে উঁচু জায়গায় আশ্রয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বন্যা কবলিত এসব এলাকার বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য আনোয়ার হোসেন জানান, আমার ওয়ার্ডের আরাজী পিপুলবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অপর একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এ স্কুল দুটির পাঠদান বন্ধ রয়েছে।

উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাবলু মিয়া জানান, আমার ইউনিয়নের মশালের চর ও পূর্বমশালেরসহ সবমিলে প্রায় ৫ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। এরমধ্যে কিছু পরিবার ফকিরের চরে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিলেও আশ্রয়কেন্দ্রটিও ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো ত্রাণ সহায়তা পাইনি।

বন্যা কবলিত এলাকার বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের নিকট খোঁজ নিয়ে জানা গেছে সবমিলে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি জীবনযাপন করছে।

রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, ভারী বর্ষণে ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের বেশীরভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মনিটরিং টিম ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ সমন্বয় কক্ষ চালু করা হয়েছে।

অন্যদিকে পানির তোড়ে নাগেশ্বরী উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নে দুধকুমার নদীর তীররক্ষা বাঁধের ১শ মিটার ভেঙে প্লাবিত হয়ে পড়েছে কয়েকটি গ্রাম। এতে করে কয়েকশ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। তারা দুর্ভোগ নিয়ে চলাচল করছেন।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্ল্যাহ আল মামুন জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি আরও বৃদ্ধি পেয়ে সবগুলো পয়েন্টে বিপৎসীমার আরও ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে তিস্তার পানি কমে কিছুটা উন্নতি হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, বন্যা কবলিতদের জন্য ৯ উপজেলায় ২৯৫ মেট্রিক টন চাল, নগদ ১১ লাখ টাকা, শুকনো খাবার ১ হাজার প্যাকেট, ১৭ লাখ টার শিশু খাদ্য ও ১৯ লাখ টাকার গো-খাদ্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জেলার রৌমারী, রাজিবপুর ও কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায় ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বাকি উপজেলাগুলোতেও দ্রুত শুরু হবে।

রাজশাহীর সময়/এ