১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ০৯:২২:২৫ পূর্বাহ্ন


হজ-কোরবানির মাসে ৬ আমল
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০৬-২০২২
হজ-কোরবানির মাসে ৬ আমল ফাইল ফটো


জিলকদ মাস শেষের পথে। আর কদিন পরেই শুরু হবে হজ ও কোরবানির মাস জিলহজ। এ মাসে রয়েছে রোজা, হজ, আরাফার দিনসহ কোরবানির মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিশেষ আমল। সেই আমলগুলো কী?

জিলহজ মাস দরজায় কড়া নাড়ছে। মাসটির শুরু থেকে প্রথম ১০ দিন রোজা পালনের ফজিলত অনেক বেশি। এ দিনগুলোতে অনুষ্ঠিত হবে, হজ, রোজা, আরাফার দিন ও কোরবানিসহ গুরুত্বপূর্ণ ৬টি আমল। তাহলো-

১. হজ পালন: আল্লাহ তাআলা যাদেরকে হজ পালন করার মতো সামর্থ্য দিয়েছেন তাদের কর্তব্য, এ গুরুদায়িত্বটি আদায় করা। হজ নিয়ে কোনো ধরনের অহেতুক ওজর-আপত্তি দেখিয়ে অবহেলা না করা। জাগতিক অন্যান্য প্রয়োজন পেছনে রেখে হজ আদায়কে অধিক গুরুত্ব দেওয়া। কেউ যদি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ না করে থাকে, তাহলে আল্লাহ তাআলার দরবারে তার অনুতপ্ত হওয়া উচিত এবং এখনই দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা জরুরি যে, পরবর্তী মৌসুমে যেন কোনোভাবেই তার হজ অনাদায় থেকে না যায়।

২. অস্বচ্ছলদের হজের আগ্রহ রাখা: যাদের আর্থিক স্বচ্ছলতা নেই, তাদের উচিত, হজের তাওফিক অর্জনে আল্লাহর কাছে দোয়া করা। কেননা একমাত্র আল্লাহ তাআলাই মানুষের তাওফিকদাতা। নিঃস্ব ব্যক্তিকে সামর্থ্যবান করা তাঁরই গুণ। তাই একজন মুসলমান হিসেবে সবারই হজ আদায়ের আগ্রহ থাকা দরকার।

অতীতে নেককার মানুষদের এমন বহু ঘটনার ইঙ্গিত পাওয়া যায়; যাদের শুধু কাবা শরিফ জিয়ারতের অদম্য আগ্রহই ছিল; বাহ্যিক সামর্থ্য বলতে কিছুই ছিল না। আল্লাহ তাআলা তাঁদের সে আগ্রহ ও তামান্না পূর্ণ করেছেন। ঘরে দুবেলা খাবারের ব্যবস্থা না থাকা সত্ত্বেও কাবা শরিফ জিয়ারত তাঁদের নসিব হয়ে গেছে।

৩. কোরবানি দেওয়া: কোরবানি দেওয়ার মতো আর্থিক স্বচ্ছলতা যাদের রয়েছে তাদের কোরবানি দেওয়া উচিত। যাদের উপর কোরবানি ওয়াজিব নয়, তাদেরও সাধ্যমত তা আদায়ের চেষ্টা করা উচিত। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোরবানির দিনে আল্লাহর নামে পশু জবাই করার চেয়ে উত্তম কোনো আমল নেই। তাই এ ফজিলতপূর্ণ আমলে সবারই শরিক হওয়া দরকার।

অন্য হাদিসে এসেছে, জবাইকৃত পশুর গায়ের পশম পরিমাণ সওয়াব আল্লাহ তাআলা বান্দাকে দান করবেন। এমন একটি পুণ্যময় কাজে অবহেলা দুঃখজনক।

তবে মনে রাখতে হবে, এ কোরবানি যেন কখনো লোক দেখানোর জন্য বা নিজের বাহাদুরি প্রকাশের জন্য না হয়। এমনকি দুনিয়ার প্রতিযোগিতায় জেতার জন্যও না হয়।

৪. জিলহজ মাসের প্রথম দশক রোজা রাখা: জিলহজ মাসের প্রথম দশক অর্থাৎ ঈদের দিন ছাড়া বাকি ৯ দিনে রোজা রাখার বিশেষ ফজিলতও হাদিসের বর্ণনায় প্রমাণিত। হাদিসে পাকে এসেছে-

হজরত হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, 'নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আশুরার রোজা, যিলহজের প্রথম দশকের রোজা এবং প্রত্যেক মাসের তিন রোজা (আইয়ামে বিজ) কখনো ছাড়তেন না।' (মুসনাদে আহমদ)

৫. তাকবিরে তাশরিক পড়া: জিলহজ মাসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আবশ্যকীয় আমল হলো ‘আইয়ামে তাশরিকে' ফরজ নামাজের পর তাকবির বলা। যিলহজ মাসের ৯ তারিখ ফজরের ফরজ নামাজের পর থেকে ১৩ তারিখ আসর নামাজ পর্যন্ত ২৩ ওয়াক্ত নামাজের ফরজের পর তাকবির পড়া।

তাকবিরে তাশরিক

اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ لَا إلَهَ إلَّا اللَّهُ وَاَللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ وَلِلَّهِ الْحَمْدُ

উচ্চারণ : ‘আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর; লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু; ওয়াল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর; ওয়ালিল্লাহিল হামদ্।’

অর্থ : ’আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান; আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই; আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান; সব প্রশংসা মহান আল্লাহ জন্য।’

প্র্যত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক নারী-পুরুষ, মুকিম-মুসাফির (স্থায়ী বাসিন্দা বা ভ্রমণকারী), গ্রামবাসী-শহরবাসী সবার জন্য একাকি কিংবা জামাআতে ফরজ নামাজ আদায়ের পর একবার তাকবিরে তাশরিক আদায় করা ওয়াজিব। পুরুষরা উচ্চস্বরে বলবে আর নারীরা নিম্নস্বরে। নামাজ কাজা হয়ে গেলে কাজা আদায় করার পরও তাকবির বলবে।

৬. ইয়াওমে আরাফা: হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে, ‘ইয়াওমে আরাফা' অর্থাৎজিলহজের ৯ তারিখের বিশেষ ফজিলত রয়েছে। আল্লাহ তাআলা এই দিনে এত অধিক পরিমাণে মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন যা আর কোনো দিন দেন না।

আরাফার ময়দানে উপস্থিত হাজীদের কথা উল্লেখ করে আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের সামনে গর্ব করেন; তাদের জীর্ণশীর্ণ অবস্থার ওপর আল্লাহ তাআলা সন্তুষ্ট হয়ে যান। তাই যে কোনো দোয়া কবুলের উত্তম সময় হলো আরাফার দিন। তাই এ দিনটিকে বিশেষভাবে মূল্যায়ন করা উচিত।

তাকবিরে তাশরিকের পাশাপাশি হজের মাসে এ দোয়াগুলো বেশি বেশি পড়া-

১. رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنْتَ الْوَهَّابُ

উচ্চারণ : রাব্বানা লা তুযেগ কুলুবানা বাদা ইজ হাদাইতানা ওয়া হাবলানা মিল্লাদুংকা রাহমাতান ইন্নাকা আংতাল ওয়াহহাব।'

অর্থ : ‘হে আমাদের রব! আপনি আমাদের যে হেদায়াত দান করেছেন, তারপর আর আমাদের অন্তরে বক্রতা সৃষ্টি করবেন না। আর একান্তভাবে আপনার পক্ষ থেকে আমাদের রহমত দান করুন। নিশ্চয়ই আপনি অসীম দানশীলতার অধিকারী।' (সুরা আল ইমরান : আয়াত ৮)

২. হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধিক পরিমাণে এ দোয়াটি পড়তেন-

يَا مُقَلِّبَ القُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِينِكَ

উচ্চারণ : ‘ইয়া মুকাল্লিবাল কুলুবি, ছাব্বিত কালবি আলা দ্বীনিকা।’

অর্থ : ‘হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী! আপনি আমার অন্তরকে আপনার দ্বীনের ওপর অবিচল রাখুন।’

৩. اللَّهُمَّ مُصَرِّفَ القُلُوبِ صَرِّفْ قُلُوبَنَا عَلَى طَاعَتِكَ

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা মুসাররিফাল কুলুবি সাররিফ কুলুবিনা আলা ত্বাআতিকা।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! হে অন্তরসমূহের নিয়ন্ত্রক! আপনি আমাদের অন্তরকে আপনার ইবাদতের ওপর অবিচল রাখুন।’ (মুসলিম)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হজ ও কোরবানির মাসে বিশেষ ৬ আমলে অতিবাহিত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

রাজশাহীর সময়/এ