২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার, ০৮:৫৯:১৯ পূর্বাহ্ন


মুশফিকদের হারিয়ে জয়ে ফিরলো সাকিবের বরিশাল
ক্রীড়া ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০১-২০২২
মুশফিকদের হারিয়ে জয়ে ফিরলো সাকিবের বরিশাল মুশফিকদের হারিয়ে জয়ে ফিরলো সাকিবের বরিশাল


স্কোরবোর্ডে পুঁজি খুব বেশি ছিল না। আগে ব্যাট করে ১৪১ রানেই থেমে গিয়েছিল ফরচুন বরিশাল। ম্যাচ জিতে শীর্ষে উঠতে ১৪২ রান করলেই হতো খুলনা টাইগার্সের।

তবে ব্যাটারদের ব্যর্থতা দারুণভাবে পুষিয়ে দিলেন বরিশালের বোলাররা। মুজিব উর রহমানের হাত ধরে শুরু, শেষটা করলেন মেহেদি হাসান রানা।

সবমিলিয়ে ১৯ ওভারেই মাত্র ১২৪ রানে গুটিয়ে গেলো মুশফিকুর রহিমের খুলনা। তাদেরকে ১৭ রানে হারিয়ে পরপর দুই পরাজয়ের পর জয়ে ফিরলো সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বাধীন বরিশাল।

বাঁহাতি পেসার মেহেদি হাসান রানা ১৭ রান খরচায় নিয়েছেন ৪টি উইকেট, তার হাতেই উঠেছে ম্যাচসেরার পুরস্কারটি।

খুলনার পক্ষে একাই লড়েছেন অধিনায়ক মুশফিক। দশম ব্যাটার হিসেবে আউট হওয়ার আগে ৩৬ বলে করেছেন ৪০ রান। তবে মুশফিকের তাড়াহুড়োর কারণেই মূলত ১৯ ওভারে অলআউট হয়ে গেছে খুলনা।

শেষদিকে ১ উইকেট হাতে রেখে ৭ বলে ১৮ রান প্রয়োজন ছিল খুলনার। শেষ স্বীকৃত ব্যাটার হিসেবে স্ট্রাইকে ছিলেন মুশফিক। মেহেদি হাসান রানার সেই ওভারের শেষ বলে এক রান নিলে, শেষ ওভারে ১৭ রানের সমীকরণের সামনে পড়তেন মুশফিক। স্ট্রাইকও থাকতো তার কাছে।

কিন্তু সেই পথে না হেঁটে ১৯তম ওভারের শেষ বলে বাউন্ডারির আশায় স্কুপ করেন মুশফিক। সেটি ব্যাটে-বলে ঠিকঠাক হয়নি, বল চলে যায় উইকেটরক্ষকের গ্লাভসে, অলআউট হয়ে যায় খুলনা।

অথচ শেষ বলটি বাউন্ডারি পেলেও শেষ ওভারে বাকি থাকতো ১৪ রান। কিন্তু তখন স্ট্রাইকে থাকতেন শেষ ব্যাটার কামরুল ইসলাম রাব্বি; যার পরিচয় মূলত বোলার।

সেই রাব্বি যে শেষ ওভার মুশফিককে স্ট্রাইক ফেরত দিতে পারতেন, এর কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। সে তুলনায় মুশফিক স্ট্রাইকে থেকে শেষ ওভারে ১৭ রান নেওয়ার চেষ্টা করাই হতে পারতো অধিক যুক্তিযুক্ত ভাবনা। মুশফিক সেটা করেননি।

অবশ্য শুধু শেষ ভাগের কারণে মুশফিককে কাঠগড়ায় দাঁড় করালে তা বেশ কঠোরই হয়ে যাবে। কেননা খুলনার ওপরের সারির ব্যাটাররা প্রায় সবাই হতাশ করেছেন।

স্কোরবোর্ডে মাত্র ৪০ রান হতেই সাজঘরে ফেরেন চার ব্যাটার। ইনিংসের প্রথম দশ ওভার শেষে খুলনার সংগ্রহ ছিল মাত্র ৪৮ রান। আসরে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে প্রথম ওভারেই জোড়া উইকেট নিয়েছিলেন মুজিব উর রহমান।

শুরুর ধাক্কা সামলে পঞ্চম উইকেট জুটিতে ৪৬ রান যোগ করেন ইয়াসির আলি ও মুশফিকুর রহিম। ইনিংসের ১৫তম ওভারে গিয়ে মেহেদি রানার বলে সরাসরি বোল্ড হয়ে যান ২৩ রান করা রাব্বি। এরপর খুলনার জয়ের আশা জাগিয়েছিলেন থিসারা পেরেরা। তিনি এক চার ও দুই ছয়ের মারে মাত্র ৯ বলে করেন ১৯ রান।

ইনিংসের ১৭তম ওভারে শফিকুল ইসলামের স্লোয়ার বাউন্সারে জ্যাক লিন্টটের দুর্দান্ত এক ক্যাচে সমাপ্তি ঘটে থিসারার ইনিংসের। বেশি কিছু করতে পারেননি আরেক লঙ্কান অলরাউন্ডার সেকুগে প্রসন্নাও, তার ব্যাট থেকে আসে মাত্র ২ রান। তবু একপ্রান্ত আগলে রেখে আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছিলেন মুশফিক। কিন্তু ১৯তম ওভারে ৩ উইকেট নিয়ে বরিশালের জয় নিশ্চিত করেন মেহেদি হাসান রানা।

এর আগে এবারের বিপিএলে অলিখিত নিয়মে পরিণত হওয়া টস জিতে আগে ফিল্ডিংয়ে ধারা অব্যাহত রেখে আজও সাকিবদের ব্যাটিংয়ে পাঠান খুলনার অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম।

বরিশাল একাদশে বাঁহাতি ব্যাটারদের আধিক্যের কারণে নিজেদের উইনিং কম্বিনেশন ভাঙে খুলনা। বাঁহাতি স্পিনার নাবিল সামাদকে বসিয়ে দলে নেয় অফস্পিনার মোহাম্মদ শরিফউল্লাহকে।

টস হেরে ব্যাট করতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতেই চমক দেয় বরিশাল। ক্রিস গেইলের সঙ্গে ইনিংস সূচনা করতে পাঠানো হয় লোয়ার অর্ডার ব্যাটার জ্যাকব লিন্টটকে। এ দুজনের জুটি টেকে মাত্র ২.৩ ওভার।

ইনিংসের প্রথম ওভারেই কামরুল ইসলাম রাব্বিকে তিন বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ঝড়ের আভাস দেন গেইল। শরিফউল্লাহর করা তৃতীয় ওভারে ব্যাক টু ব্যাক বাউন্ডারি লিন্টটও।

কিন্তু টানা তৃতীয় বাউন্ডারি হাঁকানোর চেষ্টায় এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান ১০ রান করা লিন্টট। দুই অফস্পিনারের বিপক্ষে সুবিধা করার জন্য সাকিবের বদলে তিন নম্বরে পাঠানো হয় জিয়াউর রহমানকে। কিন্তু তিনি খেলতে থাকেন একের পর এক ডট। একপর্যায়ে ১০ বল থেকে মাত্র ৩ রান ছিল তার নামের পাশে।

তবে অপরপ্রান্তে রানের চাকা সচল রাখছিলেন ইউনিভার্স বস। শরিফউল্লাহর ওভারে জোড়া বাউন্ডারি কিংবা শেখ মেহেদি হাসানকে ছক্কায় উড়িয়ে অফস্পিনারদের বিপক্ষে নিজের সামর্থ্যের জানান দেন গেইল। পরে ইনিংসের সপ্তম ওভারের শেষ বলে থিসারা পেরেরাকেও ছক্কায় ওড়ান তিনি। পরের ওভারের প্রথম বলে কামরুল রাব্বিকে ছক্কা হাঁকান জিয়া।

এ দুজনের জুটিতে ভালোই এগুচ্ছিল বরিশাল। তখনই পাল্টা আঘাত হানেন কামরুল রাব্বি। ছক্কা হজমের পরের বলেই জিয়াকে মেহেদির হাতে ক্যাচে পরিণত করেন তিনি।

মেরে খেলার পরিকল্পনায় প্রমোশন দেওয়া জিয়া আউট হওয়ার আগে ১৩ বল থেকে করতে পেরেছেন মাত্র ১০ রান। এরপর চার নম্বরে পাঠানো হয় আরেক ডানহাতি নুরুল হাসান সোহানকে।

বরিশালের এই পরিকল্পনাও কাজে লাগেনি। সোহানের ব্যাট থেকে আসে ১১ বলে ৮ রান। তিনি আউট হওয়ার আগেই সেকুগে প্রসন্নার বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে লংঅনে ধরা পড়েন গেইল। তার ব্যাট থেকে আসে ৬ চার ও ২ ছয়ের মারে ৪৫ রান। ইনিংসের ১২তম ওভারে চতুর্থ উইকেট পতনের পরেও ব্যাটিংয়ে নামেননি সাকিব।

পঞ্চম উইকেটে জুটি বাঁধেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও তৌহিদ হৃদয়। এ দুজন মিলে ৫.১ ওভারে যোগ করেন ৩৫ রান। ইনিংসের ১৬তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ২৩ রান করে আউট হন তৌহিদ। এরপর গিয়ে সাত নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামেন সাকিব। উইকেটে এসেই দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে বাউন্ডারি হাঁকান বরিশাল অধিনায়ক। মনে হচ্ছিল শেষের ঝড়টা তিনিই তুলবেন।

কিন্তু বিধিবাম! থিসারা পেরেরার করার পরের ওভারেই আন্দ্রে ফ্লেচারের দুর্দান্ত এক ক্যাচে সমাপ্তি ঘটে সাকিবের ৬ বলে ৯ রানের ইনিংসের। এক বল পর থিসারার দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন ১৫ বলে ১৯ রান করা শান্তও। এরপর আর কিছুই বাকি ছিল না বরিশালের ইনিংসের। শেষ পর্যন্ত তাদের ইনিংস থেমে যায় ১৪১ রানে।

খুলনার পক্ষে বল হাতে ২টি করে উইকেট নেন কামরুল রাব্বি, থিসারা পেরেরা ও ফরহাদ রেজা।

রাজশাহীর সময় / এফ কে