২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১১:৪৯:২৬ অপরাহ্ন


জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় দুর্ভিক্ষের মুখে অনেক দেশ, অনাহারে সাড়ে ৩৪ কোটি মানুষ!
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-০৭-২০২২
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় দুর্ভিক্ষের মুখে অনেক দেশ, অনাহারে সাড়ে ৩৪ কোটি মানুষ! জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় দুর্ভিক্ষের মুখে অনেক দেশ, অনাহারে সাড়ে ৩৪ কোটি মানুষ!


বিশ্ব জুড়ে হু হু করে বাড়ছে জ্বালানি তেলের দাম। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে খাবারের দামও । রাষ্ট্রসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি বিষয়ক সংস্থা সূত্রে জানা গেছে বিশ্বে এখন সাড়ে ৩৪ কোটি মানুষ অনাহারের শিকার। এক বেলার খাবারের সংস্থান করার মতো অর্থ নেই তাদের হাতে।

বিশ্বের বহু দেশে আবার খাবারেরও আকাল। ফলে বেশ কয়েকটি দেশে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে বলে জানানো হয়েছে জাতি সংঘের তরফে। রাষ্ট্রসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির প্রধান ডেভিড বিশলির মতে, সাড়ে ৩৪ কোটি মানুষের অনাহার, অর্ধাহারে থাকার ঘটনা নজিরবিহীন। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, অতীতের তুলনায় অনাহার, অর্ধাহারে থাকা মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির হারও সব নজির ছাপিয়ে গিয়েছে।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূ্চির কর্তাদেরর হিসাব মতো, ২০২১-র শুরুতে অনাহারে থাকা মানুষের সংখ্যা ছিল ২৭ কোটি ৬০ লাখের কাছাকাছি, যা এখন ২৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তার আগের বছর অর্থাৎ ২০২০-র গোড়ায় কোভিড মহামারী পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আগে এমন মানুষেরা সংখ্যায় ছিল আনুমানিক সাড়ে তেরো কোটি।

চলতি পরিস্থিতির পিছনে কোভিড মহামারী জনিত আর্থিক দুরবস্থা তো আছেই, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রধান কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। দুটি দেশই বিশ্বের বহু দেশকে জ্বালানি এবং খাদ্যসামগ্রী রপ্তানি করত। যুদ্ধ শুরুর পর তা অনেকাংশেই বিঘ্নিত হয়েছে।

যেমন ভারতের প্রতিবেশী বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান জ্বালানি এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের অনেকটাই আমদানি করে। বাংলাদেশে জিনিসপত্রের আকাশছোঁয়া দাম নিয়ে জনসাধারণ রীতিমতো দিশেহারা। ডাল-ভাত জোগার করতে গিয়ে ছেলেমেয়ের পড়াশুনো বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে বহু পরিবার।

রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগে থেকেই শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ভেঙে পড়েছিল। যুদ্ধ শুরুর পর দ্বীপরাষ্ট্রের বহু জায়গায় দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। গাড়ির তেলের জন্য রেশন ব্যবস্থা চালু করতে বাধ্য হয়েছে সে দেশের সরকার। বন্ধ রাখতে হয়েছে সরকারি গণপরিবহণ। রাষ্ট্রসংঘের মতে, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশের সমস্যা ভিন্ন। সেখানে যুদ্ধ এবং দেশের অভ্যন্তরে জঙ্গি তৎপরতার কারণে খাদ্য সরবরাহে সমস্যা রয়েছে।

রাষ্টসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী, কোভিড-১৯ মহামারী, জলবায়ু পরিবর্তন, সশস্ত্র সংঘাত ইত্যাদির কারণে ক্ষুধা ও অপুষ্টি অবসানের চ্যালেঞ্জ বাড়ছে। কোভিডের কারণে বিপর্যস্ত সরবরাহ ব্যবস্থা আগের অবস্থায় ফেরার আগেই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে। বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকটের পিছনে সেটা অন্যতম কারণ।

রাষ্ট্র সংঘের খাদ্য কর্মসূচি বিষয়ক অফিসের মুখপাত্র জানিয়েছেন ভোজ্য তেলের ঊর্ধ্বমুখী দামের পিছনে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধই প্রধান কারণ। দুটি দেশেই অন্যতম শস্য হল সূর্যমুখী ফুল। যা থেকে তৈরি তেল তারা গোটা বিশ্বতে সরবরাহ করত। দুই দেশ থেকেই তা আসা বন্ধ আছে।

একইভাবে তারা বিশ্বের বহু দেশকে গম সরবরাহ করে থাকে। সেটারও জোগান দিন দিন কমছে। ফলে আটা-ময়দার দামও নাগালের বাইরে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আবার রাশিয়া এবং তার মিত্র বেলারুশ পটাশের বৃহত্তম রপ্তানিকারক, যা সারের একটি মূল উপাদান।

বিপুল পরিমানে গম সরবরাহের কারণে ইউক্রেনকে বিশ্বের রুটির ঝুড়ি বলা হয়। অনেক দরিদ্র দেশকে তারা গম দিয়ে সাহায্য করত। খাস্য কর্মসূচির প্রধান বিশলের মতে, ইউক্রেনের গম এবং অন্যান্য শস্যের রপ্তানির কথা মাথায় যুদ্ধ থামাতে একটি রাজনৈতিক সমাধান সূত্র বের করার অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে সাড়া মেলেনি। ইউক্রেনের যুদ্ধের আজ এত বিপর্যয়কর বিশ্বব্যাপী প্রভাব দেখা দিত না যদি সময়মতো রাজনৈতিক সমাধান খোঁজা হত।