২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৬:৫৩:১৭ পূর্বাহ্ন


গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর সমীপে স্মারক লিপি
স্টাফ রিপোর্টার:
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-০৮-২০২২
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর সমীপে স্মারক লিপি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর সমীপে স্মারক লিপি


কমিশন গঠন করে মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক, বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ১৫ আগস্টের কাল রাত্রীতে নির্মম হত্যাকান্ডের নেপথ্যের নীল নকশা প্রণয়নকারী ও কুশীলবদের চিহ্নিত ও বিচারের দাবীতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর সমীপে স্মারক লিপি :

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর কৈশোর থেকে শুরু করে দীর্ঘ রাজনীতির পথ পরিক্রমায় শোষিত-বঞ্চিত, নির্যাতিত-নিপীড়িত বাঙ্গালীর অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নিজেকে আত্মোৎসর্গ করেন। এর ধারাবাহিকতায় ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র বাঙ্গালীর ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভূত্থ্যান, ৭০’র নির্বাচন দীর্ঘ এই রাজনীতির পথচলায় সর্বশেষে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ স্বাধীনতার ডাক দিয়ে বাঙ্গালীকে সশস্ত্র যুদ্ধের আহ্বান জানান। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। ২৫ মার্চ ১৯৭১ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে তাঁর ধানমন্ডিস্থ বাসা হতে গ্রেফতার করে। এর পূর্বেই তিনি ই.পি.আর এর ওয়্যারলেস এর মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ২৫ মার্চ রাতে অপারেশন সার্চলাইটের নামে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নিরীহ বাঙ্গালীর উপর বর্বোরোচিত হামলা ও গণহত্যা চালায়। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের এক পর্যায়ে হানাদার পাকিস্তানের সেনাবাহিনী পরাজয় বরণ করে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ ঢাকার ঐতিহাসিক (রেসকোর্স ময়দান) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আত্মসমর্পন করে। তখনও মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে অন্তরীন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপের কাছে নতি স্বীকার করে পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ স্বাধীন স্বদেশ প্রিয় বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

আত্মনিয়োগ করেন ধ্বংস বিধ্বস্ত সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ বিনির্মাণে। কিন্তু আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করলাম যে, বঙ্গবন্ধু বাঙ্গালীকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দিতে গিয়ে যৌবনের চৌদ্দটি বছর কারা প্রকোষ্ঠের অন্ধকারে অতিবাহিত করেছেন। বহুবার মৃত্যুকে করেছেন আলিঙ্গন, তাঁর ফাঁসি কার্যকর করার সকল পরিকল্পনা সম্পন্ন করেছিলো পাকিস্তান সরকার। এমনকি মিয়ান আলী কারাগারে তাঁর সেলের সামনে কবর পর্যন্ত প্রস্তুত করেছিলো বর্বর পাকিস্তান সরকার।

বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ রাজনীতির জীবনে এত ত্যাগ তিতিক্ষার পরও, সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে স্বাধীনতা বিরোধীদের অপতৎপরতা থেমে থাকেনি। তারা বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র শুরু করে। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এ দেশীয় পাকিস্তানের এজেন্ট ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীরা বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে। এমন এক সময় বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয় যখন কি না বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ভাবে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল, উন্নয়ন ও প্রগতির চাকা হচ্ছিল সচ্ছল। দেশ যখন একটি শক্তভীতের উপর দাঁড়াচ্ছিল ঠিক সেই সময় তারা বাংলাদেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি তথা বাংলাদেশকে আবারো পাকিস্তানী ভাবধারায় ফিরিয়ে নিতেই বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেই খুনীচক্র ও এর নেপথ্যের কুশীলবরা থেমে থাকেনি। তারা বঙ্গবন্ধু ও ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকান্ডের বিচার না হয় সেজন্য অবৈধ রাষ্ট্রপতি খুনী মোশতাক ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ জারি করে যা ১৯৭৯ সালের ৯ জুলাই সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান সংবিধানের ৫ম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে অন্তর্ভূক্ত করে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খুনীচক্র ৩০ লক্ষ শহীদ ও ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের পবিত্র সংবিধানকে কেটে ছিঁড়ে ক্ষত-বিক্ষত করে। অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের চরিত্র হনন করে সাম্প্রাদায়িক রাষ্ট্রে রুপ দেয়। তারা বাংলাদেশের কৃষ্টি সংস্কৃতি ধ্বংস করে “বঙ্গবন্ধু” ও “জয় বাংলা” স্লোগানকে নিষিদ্ধ করে বাঙ্গালীর হৃদয় থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলার অপচেষ্টা করে ৭৫এর ১৫ আগস্টের কুশীলবরা, যা অব্যাহত থাকে ১৯৯৬ সালের ১১ জুন পর্যন্ত।

১৯৯৬ সালের ১২ জুন বঙ্গবন্ধু কন্যা, শেখ হাসিনা’র নেতৃত্বে ২১ বছর দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসীন হয়। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধু কন্যা, শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর জাতীয় সংসদে ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ রহিত বিল পাশ হয়। বঙ্গবন্ধু ও ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকান্ডের বিচারের দ্বার উন্মোচন হয়। 

১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর একান্ত সহকারী এ.এফ.এম মোহিতুল ইসলাম থানায় বঙ্গবন্ধু ও ১৫ আগস্টের হত্যা মামলার এফ আই আর করেন। 

১৯৯৭ সালের ১৫ জানুয়ারি সিআইডি’র এসপি আব্দুল কাহার আখন্দ ২০ জনকে অভিযুক্ত করে একটি চার্জশীট দাখিল করেন ঢাকা মহানগর মুখ্য হাকিমের আদালতে একই বছরে ১২ মার্চ আসামীদের উপস্থিতিতে বিচার কার্য শুরু হয়ে ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর বিচারক গোলাম রসুল খুনী ১৫ সাবেক সেনা কর্মকর্তার ফাঁসির রায় প্রদান করে, যা পরে হাইকোর্ট ১২ জনের ফাঁসির রায় বহাল রাখে। এরপরও ষড়যন্ত্র থেমে থাকে নি। ষড়যন্ত্র গভীর থেকে গভীরতর হয়। সকল ষড়যন্ত্রে বেড়াজাল ছিন্ন করে ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি রাতে আটক ৫ জনের রায় কার্যকর হয়। জাতির কলঙ্ক মুক্তির পথে এক ধাপ এগিয়ে যায় দেশ। ২০২০ সালের ৫ মে  পলাতক আসামী মাজেদকে ভারত থেকে ফেরত এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়। বিদেশে পলাতক অবস্থায় এক ঘাতকের মৃত্যু হয়। এখন অবধি বঙ্গবন্ধু ও ১৫ আগস্ট নির্মম হত্যকান্ডের ৫ আসামী বিদেশে অবস্থান করছে। অনতিবিলম্বে তাদের ফিরিয়ে নিয়ে এসে তাদের রায় কার্যকর করা অতীব জরুরী। 

বর্তমানে বঙ্গবন্ধুর কন্যা, জননেত্রী শেখ হাসিনা’র নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জনগণের পূর্ণ সমর্থনে ৩ বার নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে অবস্থান করছে। এ সময় কালে সকল ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত, প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও বৈশ্বিক অতিমারি করোনা ভাইরাস মোকাবেলা করে দেশ আজ উন্নয়নশীল দেশে পদার্পন করে অদম্য অগ্রযাত্রায় এগিয়ে চলেছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র শ্রম, মেধা, প্রজ্ঞা ও দক্ষ নেতৃত্বের গুণে। 

প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্বে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র সহ ১৪০ টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কর্ণফুলি নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল, মেট্রোরেল, বাংলাদেশে প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে, পায়রা বন্দর, দেশের প্রতিটি জেলায় মোট ৫৬০ টি মডেল মসজিদ স্থাপন। এ সকল অবকাঠামো উন্নয়ন সহ শিক্ষা, শিল্প, সংস্কৃতি, ক্রিড়া, দারিদ্রের হার কমিয়ে আনা, মানবসম্পদের উন্নয়ন ঘটিয়ে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি গড়ে উঠেছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বর্তমানে যা চলমান। বাংলাদেশ বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে এখন রোল মডেল। 

এমন এক শুভক্ষণে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, রাজশাহী মহানগর মনে করে যে, বঙ্গবন্ধু বাঙ্গালীকে এনে দিয়েছিলো স্বাধীনতা তথা একটি স্বাধীন জাতি রাষ্ট্র। বাংলাদেশ যখন অর্থনৈতিক মুক্তির পথে অগ্রসর হচ্ছিল ঠিক সে সময় বঙ্গবন্ধু তাঁর পরিবার পরিজনকে হত্যার মধ্যে দিয়ে থামিয়ে দিয়েছিলো ৭১এর পরাজিত শক্তি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা জাতিকে অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু ইতিহাসের দায়ভার হতে জাতি এখনও পরিপূর্ণ ভাবে মুক্তি পায় নি। 

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, রাজশাহী মহানগর বিনম্র চিত্তে মনে করে যে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের যে রক্তঋনে আবদ্ধ করে গেছেন তা কখনও শোধ হবার নয়। তাই ইতিহাসের দায়মুক্তির লক্ষ্যে নতুন প্রজন্মকে একটি সম্পূর্ণ কলঙ্কমুক্ত জাতি উপহার দিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকান্ডের নেপথ্যের নীল নকশা প্রণয়নকারীরা ও কুশীলবদের মুখোশ উন্মোচন করে তাদের বিচারের মুখোমুখি করলেই কেবল জাতির পিতার হত্যার যে পাপ তা থেকে দায়মুক্তি পেতে পারে। এজন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, রাজশাহী মহানগর ৭৫এর নির্মম হত্যাকান্ডের কুশীলবদের চিহ্নিত করার লক্ষে একটি কমিশন দাবী করছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, রাজশাহী মহানগর মনে প্রাণে বিশ্বাস করে এই দায় হতে মুক্তি দিতে পারে বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।