২৮ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১১:০৩:৫৬ অপরাহ্ন


‘দুনিয়া অনর্থক, মরেই তো যাবো’- এগুলো মারাত্মক ফেতনা!
ইসলামীক ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩১-০১-২০২২
‘দুনিয়া অনর্থক, মরেই তো যাবো’- এগুলো মারাত্মক ফেতনা! ফাইল ফটো


পরকালের অনন্ত জীবনের পরীক্ষা ক্ষেত্র হলো- দুনিয়া। যারা দুনিয়ার সব কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে; তারাই পরকালে সফলতা পাবে। পক্ষান্তরে দুনিয়ার জীবন খেল-তামাশা ছাড়া কিছুই না- এ কথাটি ওইসব ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য; যারা পরকালকে বাদ দিয়ে দুনিয়াকে আসল ধরে নেয়। দুনিয়ার মোহে জীবন কাটিয়ে দেয়। তাই বলে, ‘দুনিয়া কিছুই না, একদিন তো মরেই যাবো’ এসব কথা বলে অগুছালো জীবন-যাপন করে বেড়ানো ঠিক নয়; এগুলো শয়তানের মারাত্মক ফেতনা ছাড়া আর কিছুই নয়।

পরকালকে বাদ দিয়ে দুনিয়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাওয়া মানুষকে উদ্দেশ্য করে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন-

کُلُّ نَفۡسٍ ذَآئِقَۃُ الۡمَوۡتِ ؕ وَ اِنَّمَا تُوَفَّوۡنَ اُجُوۡرَکُمۡ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ ؕ فَمَنۡ زُحۡزِحَ عَنِ النَّارِ وَ اُدۡخِلَ الۡجَنَّۃَ فَقَدۡ فَازَ ؕ وَ مَا الۡحَیٰوۃُ الدُّنۡیَاۤ اِلَّا مَتَاعُ الۡغُرُوۡر

‘প্রতিটি প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আর অবশ্যই কেয়ামতের দিনে তাদের প্রতিদান পরিপূর্ণভাবে দেয়া হবে। সুতরাং যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে সে-ই সফলতা পাবে। আর দুনিয়ার জীবন শুধুই ধোঁকার সামগ্রী।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৮৫)

দুনিয়া ধোকার সামগ্রী ছাড়া আর কিছুই নয়

এ আয়াতে মহান আল্লাহ বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন এভাবে-

وَ مَا الۡحَیٰوۃُ الدُّنۡیَاۤ اِلَّا مَتَاعُ الۡغُرُوۡ

‘আর দুনিয়ার জীবন শুধুই ধোঁকার সামগ্রী ছাড়া আর কিছু নয়।’

অবিশ্বাসীদের চিরস্থায়ী ঠিকানা হবে জাহান্নাম। কাজেই তারা যদি সামান্য কয়েকদিনের পার্থিব সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের কারণে গর্বিত হয়ে ওঠে; তবে সেটা একান্তই ধোঁকা। সেজন্যই আয়াতে বলা হয়েছে- ‘দুনিয়ার জীবন তো হলো ধোঁকার উপকরণ।’ তার কারণ এই যে, সাধারণত এখানকার ভোগ-বিলাসই হবে আখেরাতের কঠিন যন্ত্রণার কারণ।

পক্ষান্তরে এখানকার দুঃখ-কষ্ট হবে আখেরাতের সঞ্চয়। বুদ্ধিমানের জন্য এ দুঃখ-কষ্ট গ্রহণ করাই উচিত। এ পরিপ্রেক্ষিতে সে লোকই সত্যিকার কৃতকার্য, যে জাহান্নাম থেকে অব্যাহতি লাভ করবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করবে। সমস্ত মুসলিমই শেষ পর্যন্ত জাহান্নাম থেকে অব্যাহতি লাভ করে অনন্ত কালের জন্য জান্নাতের আরাম-আয়েশ ও সুখ-শান্তির অধিকারী হবে।

কিন্তু এসব কথা কীভাবে ফেতনা?

এসব কথায় অনেক তরুণ-যুবক ও বয়স্করা মারাত্মক ফেতনায় নিমজ্জিত হচ্ছে। কারণ তরুণ-যুবকরা যখনই পড়াশোনায় রেজাল্ট খারাপ করে বসে, স্কুল-কলেজ-ভার্সিটির এডমিশন কিংবা প্রমোশনাল টেস্টে খারাপ করে; তখনই শয়তান তাদের প্ররোচনা দেয়; অন্তরে ফেতনার সৃষ্টি করে।

প্রথমত শয়তান এটা বুঝায় যে-‘রেজাল্ট খারাপ হয়েছে তো কী হয়েছে? এডমিশন-প্রমোশন হয়নি তো কী হয়েছে? দুনিয়া তো এমনিতেই অর্থহীন। দুনিয়া খেল-তামাশার জায়গা। সুতরাং এগুলো নিয়ে ভাবার কিছু নেই। কারণ কোরআন-হাদিসেই দুনিয়াকে অর্থহীন বলা হয়েছে। তুচ্ছ, ধোঁকার জায়গা বলা হয়েছে।

তখন তরুণ-যুবকরা ভাবতে থাকে-

ঠিকই তো, দুনিয় তো অর্থহীণ, ধোঁকার জায়গা ছাড়া আর কিছুই নয়; একদিন তো মরেই যাবো; তাহলে অর্থহীণ দুনিয়ায় এসব পড়ালেখা, রেজাল্ট, এডমিশন-প্রমোশনের প্রয়োজন কী? এসবই অর্থহীন। আর তরুণ-যুবকদের জন্য এটিই শয়তানের সবচেয়ে বড় ফেতনা। যারাই এমনটা ভাবে তারাই শয়তানের ফেতনায় পড়ে গেছে।

মনে রাখতে হবে কোরআন-সুন্নায় দুনিয়াকে এসব অর্থে ফেতনা বলা হয়নি বরং তরুণ-যুবক, বয়স্করা তাদের নিজ নিজ কাজ যথাযথ নীতিনৈতিকতার সঙ্গে মেনে চলবে; ঠিক মতো পড়াশোনা করবে। সুন্দর জীবন গঠন করবে; পরকালের জবাবদিহিতায় জীবন গঠন ও পরিচালনা করবে। কোনোভাবেই দুনিয়ার জীবনকে চূড়ান্ত সফলতার স্থান ভাবা যাবে না। যারাই এমনটি ভাববে, তাদের জন্য-

وَ مَا الۡحَیٰوۃُ الدُّنۡیَاۤ اِلَّا مَتَاعُ الۡغُرُوۡ

‘আর দুনিয়ার জীবন শুধুই ধোঁকার সামগ্রী ছাড়া আর কিছু নয়।’

পক্ষান্তরে মানুষের চূড়ান্ত সফলতা হবে পরকাল। আর তা পাওয়ার জন্য দুনিয়াতেই সঠিকভাবে জীবন পরিচালনা করে পরকালের জন্য সম্পদ উপার্জন করতে হবে।

শয়তানের ফেতনার ধরণ

অনেক উচ্চশিক্ষিত তরুণ-যুবক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার পর প্রাকটিক্যাল বা ইণ্টার্ন সময়ে এসে শযতানের প্ররোচনায় বিপথগামী হয়ে যায়। কারণ তারা দ্বীনের দাওয়াতে নিজেকে জাড়িয়ে ফেলে আর ভাবে আর উচ্চশিক্ষা বা ডিগ্রি নেওয়ার দরকার নেই। দাওয়াত ও তাবলিগের কাজে সময় দিলেই হবে। কিন্তু প্রতিযোগিতার এ সময়ে ইণ্টার্ন করার সঙ্গে সঙ্গে কিছু ডিগ্রিও জীবন গঠনের জন্য প্রয়োজন। যা না হলে জীবনের সব শিক্ষাই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।

শয়তানের প্ররোচনায় দ্বীনি জজবা দেখিয়ে এসব ছোট ছোট ডিগ্রি অর্জন থেকে বিরত থাকা যাবে না। হ্যাঁ, দ্বীনি কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করা দোষের কিছু নয়। বরং দ্বীন মেনে জীবন গঠনের ডিগ্রিগুলো করে কর্মক্ষেত্রে এসে দ্বীনের জন্য সময় দিলে তা হবে পরিপূর্ণ দাওয়াত ও তাবলিগ।

সুতরাং শিক্ষাজীবনের মাঝ পথে এসে দ্বীনি জজবায় নিজেদের বিপথগামী হওয়ার মতো ফেতনায় না জড়াতে সতর্ক থাকা জরুরি। নতুবা পরে আফসোস করতে হবে।

মনে রাখতে হবে

প্রাথমিক শিক্ষা জীবন শেষ হওয়ার পর তরুণ-যুবকদের মধ্যে যতটা দ্বীনি আবেগ থাকে। কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর কিংবা ডিগ্রি করার সময় শেষ হয়ে যাওয়ার পর তাদের জীবনে নেমে আসে হতাশা। তখন তারা ভাবতে থাকে, যদি ৫-৭-১০-১৫ বছর আগে এই কাজগুলো শেষ করতাম তবে কতই না ভালো হতো!

তখনও শয়তান এই ধোঁকা দেবে; হ্যাঁ, তাইতো যদি ডিগ্রিগুলো শেষ করা হয়ে যেতো তবে এখন আর কষ্ট করতে হতো না। হতাশায় ভুগতে হতো না। জীবনে সফলতা পেতাম।

এ কারণেই নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন-

'যদি' শব্দটা শয়তানের কাজের দরজা খুলে দেয়। তাকদিরের উপর অনাস্থা তৈরি করে।’

যার কারণে দুনিয়ার জীবনে ভালো ফলাফল বা ডিগ্রি করা, ভালো ক্যারিয়ার গড়া দ্বীনদারিতার খেলাফ নয়। বরং এসব বিষয়ে কোনোভাবেই নিজেকে পরীক্ষার মধ্যে ফেলা যাবে না।

মুমিনের গুণ হলো-

‘মুমিন সব সময় সচেতন সতর্ক। শয়তানের জন্য সে কোনো সুযোগই রাখবে না। তাই উঠতি বয়সে কুফরি চিন্তা আসার চেয়ে কিছু দিন নিজেকে দুনিয়ার জীবন পরিচালনায় প্রস্তুত করে নেওয়াই উত্তম। তারপর বাকি জীবন দ্বীনদারিতার মাধ্যমে জীবন অতিবাহিত করে পরকালের প্রস্তুতি গ্রহণ করাই জরুরি।’

খুব সাবধান এমনটি করা যাবে না!

শয়তান প্ররোচনা দেবে- দুনিয়াবি পড়াশোনা অর্থহীন। তাই বড় আলেম হতে হবে। তাই সব পড়াশোনা বাদ দিয়ে দ্বীনের কাজে দিনরাত সময় দাও। এটাও শয়তানের মারাত্মক ফেতনা।

কারণ দ্বনিদারির জন্য বড় আলেম হওয়া যেমন শর্ত নয়; তেমিন বড় আলেম হওয়ারও প্রয়োজন নেই। বরং দ্বীন মেনে চলার জন্য যতটুকু ইলম প্রয়োজন; ততটুকু শেখা ফরজ। আর সব সময় দ্বীনদার আলেম-ওলামাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখাই যথেষ্ট। সব কিছু বাদ দিয়ে সব সময় দ্বীনি কাজে লেগে থাকার এ মানসিকতাই শয়তানের মারাত্মক ফেতনা।

তাই মুমিন মুসলমানের উচিত

জীবনের বড় কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার আগে অবশ্যই বয়স্ক জ্ঞানী ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপ-পরামর্শ করে নেওয়া। যে যেখানে পড়াশোনা, চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য করছে তা ঠিক রেখেই ইসলামের কাজে আত্মনিয়োগ করা। দ্বীনদারির কাজ করা। এসব কাজ করেই দ্বীনদারি পালন করা ও দ্বীনের খেদমত করার সুযোগ রয়েছে।

সুতরাং যারা পড়াশোনা করছে তারা সঠিকভাবে পড়াশোনায় জোর দেওয়া। যারা চাকরি করছেন, চাকরিতে যথাযথ দায়িত্ব পালন করা। যারা ব্যবসা করছেন, তারা যথাযথভাবে ব্যবসা বাণিজ্য করাও দ্বীনি কাজ। হক আদায় করে যার যার যথাযথ দায়িত্ব পালনেই রয়েছে হালাল রিজিকের ফয়সালা।

কোনোভাবেই শয়তানের ফেতনায় পড়া যাবে না। শয়তানের প্ররোচনায় নিজের জানা-অজানা, যোগ্যতা ও বর্তমান কাজে অসন্তোষ প্রকাশ করার সুযোগ নেই।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে অহেতুক না বোঝার কারণে দুনিয়াকে অনর্থক ভেবে সব কিছু ছেড়ে দেওয়া থেকে হেফাজত করুন। শয়তানের প্ররোচনা ও ফেতনা থেকে মুক্ত রাখুন। আমিন।

রাজশাহীর সময় / এফ কে