২৩ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ০৯:৩০:৫৮ পূর্বাহ্ন


তুলে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণ, পুলিশ প্রতিবেদনে দাম্পত্য কলহ!
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-০৮-২০২২
তুলে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণ, পুলিশ প্রতিবেদনে দাম্পত্য কলহ! ফাইল ফটো


কক্সবাজার আদালত চত্বর থেকে গত ১৪ মার্চ এক নারীকে তুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ফজল কাদের নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে আটকে রেখে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ এনে পরের দিন সদর মডেল থানায় মামলা করেন ওই নারী।

সম্প্রতি ওই মামলায় আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) নাছির উদ্দিন মজুমদার।

প্রতিবেদনে বাদী এবং প্রধান আসামি ফিরোজ আহমদকে (৪৭) স্বামী-স্ত্রী হিসেবে দেখানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওইদিন আদালত চত্বরে অপহরণের কোনো ঘটনাই ঘটেনি বরং দাম্পত্য কলহ নিরসনে অন্য আসামিরা সহযোগিতা করেছেন। তাদের সবাইকে মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে।

এই প্রতিবেদনকে 'মনগড়া' আখ্যা দিয়ে বাদী বলেছেন, আসামিপক্ষের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা খেয়ে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। গত বুধবার তিনি কপবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নারাজি দিয়েছেন।

দলবদ্ধ ধর্ষণ মামলায় আসামিরা হলেন- ফিরোজ আহমদ (৪৭), রাসেল উদ্দিন (৩৮), মো. শরীফ (৪৮), নুরুল ইসলাম (৪৮) ও অজ্ঞাত আরও পাঁচজন। গত ২৫ জুলাই আদালতে জমা দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনে অব্যাহতি চাওয়া হলেও অন্য মামলা থাকায় ফিরোজ আহমদ, মো. শরীফ ও নুরুল ইসলাম সহসা মুক্তি পাচ্ছেন না।

পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধান আসামি ফিরোজ আহমদ বাদীর স্বামী। ২০২০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর রেজিস্ট্রার্ড কাবিননামায় তারা বিয়ে করেন। এরপর দাম্পত্য কলহ দেখা দেয়। মামলার অন্য আসামিরা ফিরোজের বন্ধু ও নিকটাত্মীয়। গত ১৪ মার্চ আদালত চত্বরে স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া থামানোর চেষ্টা করেন তারা। তদন্তে সাক্ষ্যপ্রমাণ, সিসিটিভির ফুটেজ ও শারীরিক পরীক্ষার প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে বাদীর অভিযোগের সত্যতা মেলেনি। কুচক্রী মহলের পরামর্শে স্বামী ও তার বন্ধুদের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে মামলা করা হয়। এমনকি বাদী অভিযোগের পক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ হাজির করতে পারেননি।

এ বিষয়ে নাছির উদ্দিন মজুমদার বলেন, তদন্তে যা পেয়েছি, লিখে আদালতে জমা দিয়েছি। পরবর্তী সিদ্ধান্ত দেবেন আদালত।

নারাজিতে বাদী উল্লেখ করেছেন, তদন্ত কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেননি। সাক্ষী ও ঘটনাস্থলের আশপাশের কারও বক্তব্য না নিয়ে মিথ্যা ও মনগড়া প্রতিবেদন দিয়েছেন।

ভুক্তভোগীর দাবি, দীর্ঘদিনেও তদন্ত শুরু না হওয়ায় নাছির উদ্দিনের অফিসে গিয়ে মিনতি জানালে তিনি বিষয়টি মীমাংসার জন্য বলেন। অন্যথায় মিথ্যা প্রতিবেদন দেওয়ার হুমকি দেন। আর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সেটিই হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা টাকা খেয়ে অফিসে বসে এই প্রতিবেদন করেছেন। সঠিক তদন্ত হলে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে। এ জন্য নারাজি দিয়ে তদন্ত প্রতিবেদনটি বাতিল ও অন্য সংস্থাকে তদন্তভার দেওয়ার আবেদন করেছি।

বাদীর আইনজীবী আব্দুল শুক্কুর জানান, নারাজি আবেদনের ওপর শুনানির দিন ধার্য হলে বিস্তারিত তুলে ধরবেন তারা।

আসামিপক্ষের আইনজীবী ও জেলা বারের সহসাধারণ সম্পাদক সাহাব উদ্দীন বলেন, বাদী এজাহারে স্বামীকে স্বীকৃতি দেননি। তথ্য গোপন করে মিথ্যা ও সাজানো মামলা করেছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরাও জবানবন্দিতে আদালতে অপহরণের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলেছেন। প্রতিবেদনে সত্যই উঠে এসেছে এবং আদালতে মামলাটি চূড়ান্তভাবে মিথ্যা প্রমাণিত হবে।