১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ০২:৪৪:৪৭ পূর্বাহ্ন


বিদ্যালয়ে ঢুকে চার নারী শিক্ষককে অশ্লীল গালাগালি করে শোক দিবসের কর্মসূচি পণ্ড করলেন ইউপি সদস্য
স্টাফ রির্পোটার
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০৮-২০২২
বিদ্যালয়ে ঢুকে চার নারী শিক্ষককে অশ্লীল গালাগালি করে শোক দিবসের কর্মসূচি পণ্ড করলেন ইউপি সদস্য ফাইল ফটো


রাজশাহীর চারঘাটে এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে সদলবল একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভেতরে ঢুকে প্রধান শিক্ষকসহ চার নারী শিক্ষককে অশ্লীল গালাগালির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী এর প্রতিবাদ করলে বিদ্যালয়ের অফিসের ভেতরে ঢুকে তাঁকে চড়থাপ্পড় মারা হয়। প্রধান শিক্ষক মুঠোফোনে এ ঘটনার ছবি তুললে তাঁর সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে মুঠোফোন কেড়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে ওই শিক্ষক আহত হয়েছেন।

উপজেলার তাতারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আজ সোমবার জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে এ ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহাবুর রহমানসহ আট থেকে নয়জনের নাম উল্লেখ করে প্রধান শিক্ষক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগে বলা হয়, তাতারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চারজন শিক্ষক কর্মরত। প্রধান শিক্ষকসহ চারজনই নারী শিক্ষক। তাঁরা আজ জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠান উপলক্ষে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে স্থানীয় শলুয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শাহাবুর রহমানের নেতৃত্বে আট থেকে নয়জন বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন। তাঁরা বিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ভবনের কাজ নিম্নমানের হচ্ছে দাবি করে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন এবং ভবনের পিলার ও গাঁথুনি ভেঙে ফেলেন। তখন প্রধান শিক্ষক বিষয়টি নিয়ে প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। তবে ইউপি সদস্য ও তাঁর দলবল প্রধান শিক্ষকসহ অন্য শিক্ষকদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি করতে শুরু করেন।

বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী মামুনুর রশিদ এর প্রতিবাদ করলে বিদ্যালয়ের অফিসের ভেতরে ঢুকে তাঁকে চড়থাপ্পড় মারেন ওই ব্যক্তিরা। প্রধান শিক্ষক তাঁর মুঠোফোনে এ ঘটনার ছবি তোলেন। সঙ্গে সঙ্গে ইউপি সদস্য তাঁর দলবল নিয়ে মুঠোফোন কেড়ে নিতে তাঁর সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে লিপ্ত হন। এ ঘটনাকে প্রধান শিক্ষক লিখিত অভিযোগে ‘অত্যন্ত নগ্নভাবে শারীরিক নির্যাতন’ বলে উল্লেখ করেছেন।

বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী মামুনুর রশিদ এর প্রতিবাদ করলে বিদ্যালয়ের অফিসের ভেতরে ঢুকে তাঁকে চড়থাপ্পড় মারেন ওই ব্যক্তিরা। প্রধান শিক্ষক তাঁর মুঠোফোনে এ ঘটনার ছবি তোলেন।

ঘটনার সময় বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতিসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ঘটনার পরে ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের তত্ত্বাবধানে শিক্ষকেরা বিদ্যালয় ত্যাগ করেন। তাঁরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক রাহেলা পারভীন প্রথম আলোক বলেন, তিনি মুঠোফোনে লাউডস্পিকার দিয়ে দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলীর বক্তব্য শোনাচ্ছিলেন। প্রকৌশলী বলছিলেন, বিদ্যালয়ের কাজ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও শিক্ষকেরা বুঝে নেবেন। বাইরের লোকদের এ ব্যাপারে কিছু করার নেই। এ কথা শুনে ইউপি সদস্য আরও ক্ষিপ্ত হয়ে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করতে থাকেন। তাঁরা মুঠোফোনে ধারণ করা ছবি মুছে ফেলার জন্য দলবলে জোর করে তাঁর হাত থেকে এমনভাবে মুঠোফোনটি কেড়ে নেন যে আঘাত পেয়ে তাঁর হাত ফুলে গেছে।

নৈশপ্রহরী মামুনুর রশিদ প্রথম আলোক বলেন, বিদ্যালয়ের অফিসের ভেতরে ঢুকে তাঁকে মারধর করা হয়। তাঁরা শিক্ষকদের যে ভাষায় গালাগালি করেছেন, তা মুখে উচ্চারণ করা যায় না। তাঁদের হাতে অস্ত্র থাকার কারণে তিনি অসহায়ের মতো মার খেয়েছেন।

বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি তারিকুল ইসলাম ঘটনাটি স্বীকার করে বলেন, ভবন নির্মাণ নিয়ে ইউপি সদস্য ও তাঁর লোকজন শিক্ষকদের গালাগালি করেছেন। তিনি শিক্ষকদের নিরাপদে বিদ্যালয় থেকে বের করে নিয়ে এসেছেন বলেও জানান। তবে অস্ত্র নিয়ে হামলার বিষয়টি নাকচ করেন তিনি।

অভিযোগের ব্যাপারে কথা বলার জন্য ইউপি সদস্য শাহাবুর রহমানের দুটি ফোন নম্বরে একাধিকবার কল করে নম্বর দুটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চারঘাট ইউএনও সোহরাব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে দিয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।