২৮ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৩:০৩:৩৫ অপরাহ্ন


অনুসন্ধানে গ্যাস মেলেনি, উধাও কয়েকশ’ কোটি টাকা
অর্থনীতি ডেস্ক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-০৯-২০২২
অনুসন্ধানে গ্যাস মেলেনি, উধাও কয়েকশ’ কোটি টাকা ফাইল ফটো


পাওয়া যাবে গ্যাস তাই নির্দ্বিধায় টাকা দিয়েছিল সরকার। কিন্তু অনুসন্ধানে পাওয়া যায়নি কিছুই। তবে হাওয়ায় মিলিয়ে যায় কয়েকশ’ কোটি টাকা। খোদ বাপেক্সের তদন্তে উঠে আসে নিজেদের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে থ্রিডি সাইসমিক প্রকল্পে হওয়া এমন দুর্নীতির তথ্য। গা বাঁচাতে তড়িঘড়ি করে এই লুটপাটে অভিযুক্ত এক কর্মকর্তা বাপেক্স থেকে প্রেষণে বদলি হয়েছেন পেট্রোবাংলায়।

এরপর ঘটনার বিস্তারিত জানতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় পেট্রোবাংলার ডাটা ম্যানেজমেন্ট বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক মেহেরুল হাসানের সঙ্গে। কিন্তু তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।


মাত্র এক মাস আগে বাপেক্স থেকে তিনি প্রেষণে বদলি হয়েছেন পেট্রোবাংলায় । মোবাইল ফোনে না পেয়ে আমরা গেলাম তার দফতরে, সেখানেও পাওয়া গেল না তাকে। কিন্তু কেন, গোপনে ধারণ করা ভিডিওতে তা খোলাসা করলেন পেট্রোবাংলারই এক কর্মকর্তা।

তিনি জানান, স্যারের নামে দুদকে একটা মামলা হওয়ার পর থেকে তিনি এখন অফিসে কম থাকে।

সাবেক এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে খোদ বাপেক্সের তদন্ত কমিটি। সময় সংবাদের হাতে আসা ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্যাস অনুসন্ধানে থ্রিডি সাইসমিক প্রকল্পের আওতায় ২৪৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা খরচে দেশের ৯টি স্থানে জরিপ করে বাপেক্স। কিন্তু তা কোনো কাজেই আসেনি। বলা হয়েছে, প্রকল্পে বিনা টেন্ডারে কাজ পাইয়ে দেয়া, শ্রমিক নিয়োগ ও যন্ত্রপাতি ক্রয়ের মাধ্যমে ২৪৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন থ্রিডি সাইসমিক প্রকল্পের পরিচালক মেহেরুল হাসান ও তার সিন্ডিকেট অথচ এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা এখনো নেয়নি বাপেক্স।

বাপেক্স এমডি মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘যে কোনো অনিয়মই খতিয়ে দেখা দরকার। তখন যারা দায়িত্বে ছিল তারা বিষয়টি গুরুত্ব দেয়নি। এখন তিনি প্রেষণে পেট্রোবাংলায় বদলি হয়েছেন। কোন অনিয়ম থাকলে তার শাস্তি হবে, ছাড় পাওয়ার সুযোগ নেই।’
প্রকল্পের জরিপ এলাকার কোনোটি বড়, কোনোটি ছোট হলেও প্রত্যেকটিতেই লেগেছে সমপরিমাণ যন্ত্রপাতি আর শ্রমিক। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে টেন্ডার ছাড়াই আর্ণিব এন্টারপ্রাইজ নামের একটি কোম্পানিকে বিপুল অঙ্কের টাকার কাজ পাইয়ে দিয়েছেন বাপেক্স কর্মকর্তারা। অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করে প্রতিষ্ঠানটির দাবি, দক্ষ বলেই কাজ পেয়েছেন তারা।

প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘অপপ্রচার হচ্ছে, যেগুলো সত্য সেগুলো বলার মতো যদি আপনার সাহস থাকে তাহলে আপনি আগে মোহাম্মদ আলীকে (বাপেক্স কর্মকর্তা) ইন্টারভিউ করে আনবেন। তারপর আমাকে প্রশ্ন করবেন, আমি উত্তর দেব।’
 
বিশ্লেষকরা বলছেন, অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির ফল পুরো জ্বালানি খাতকেই টানতে হয় লম্বা সময় ধরে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. এজাজ হোসেন বলেন, যে কোম্পানিগুলোকে আমাদের সবচেয়ে বেশি নির্ভর করা দরকার, সেখানেই যদি এমন হয় তাহলে আমরা আরও সংকটে পড়ে যাব। বাপেক্স দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়লে সামনে গ্যাস সংকট প্রকট হবে বলেই মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ। তার মতে, এসব অপকর্ম বন্ধ না হলে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়বে জ্বালানি খাত।
 
এসব অভিযোগ তদন্তে মাঠে নেমেছে দুদকও। বিভিন্ন সময়ে এই প্রকল্পে যুক্ত থাকা বাপেক্সের দশজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে করা হয়েছে তলব। প্রকল্পের অডিট রিপোর্টের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ তদন্তে পাওয়া তথ্য দুদকে হস্তান্তর করতে বাপেক্সের এমডিকে চিঠিও দিয়েছে সংস্থাটি। 


রাজশাহীর সময় / এএম