১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৯:০২:২৭ অপরাহ্ন


নিউ ইয়র্কে ফের 'ভুল ব্যালটে' বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন!
ইমা এলিস, নিউ ইয়র্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-০৯-২০২২
নিউ ইয়র্কে ফের 'ভুল ব্যালটে' বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন! ফাইল ফটো


ভুলে ভরা প্রার্থীর নামে তৈরি  ব্যালট দিয়েই আবারও নিউ ইয়র্কের প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রাণপ্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বেশ কয়েক দফা স্থগিত হওয়া বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষনা দিয়েছেন নির্বাচন কমিশন। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুটি প্যানেলের প্রার্থীরা এখন প্রচার-প্রচারণা নিয়ে ব্যস্ত দিন কাটাচ্ছেন। 

আগেও মত নির্বাচনী প্রাণচাঞ্চল্যতা নেই এবারের নির্বাচনে। কারন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় মামলা মোকাদ্দমার ফলে সাধারন ভোটার আর কোন আগ্রহই নেই এ নির্বাচনে। ভোটার দের সাফ কথা নির্বাচন হলেই কি আর না হলেই কি?

বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে হাজারো অভিযোগ রয়েছে। কারও অভিযোগের তোয়াক্কা না করে ভুলে ভরা প্রার্থীর নাম ও ব্যালট দিয়েই আবারও নির্বাচন হচ্ছে বলে জানা গেছে। অভিযোগে জানা যায় নির্বাচন কমিশন অত্যন্ত সুকৌশলে রব-রুহুল পরিষদের সভাপতি প্রার্থী মোঃ রব মিয়াকে ব্যালট পেপারে ‘এ লাইনের সুবিধা নেওয়ার জন্য’ তথাকথিত হলফনামার নামে আবদুর রব মিয়া হিসাবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। বাংলাদেশ সোসাইটির ভোটার তালিকায় তার নাম পরিস্কারভাবে মোঃ রব মিয়া লিপিবদ্ধ রয়েছে। তাছাড়া তিনি নোয়াখালী সমিতির নির্বাচনেও মোঃ রব মিয়া নামে নির্বাচন করেছেন এবং তার বৈধ পরিচয় পত্র আবদুর রব মিয়া নামে কোন নাম নেই। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন অন্তত দুইজন সতন্ত্র প্রার্থীর নমিনেশন পেপার অসম্পূর্ণ ছিল। তাদের পাসপোর্ট জমা দিতে পারেন নেই। এই দু'জনকে সেই ব্রুকলিন থেকে পাসপোর্ট এনে মনোনয়নপত্র সম্পূর্ণ করার সুযোগ করে দিয়েছিলে এই নির্বাচন কমিশনার। সাবেক নির্বাচন কমিশনার তপন জামান এ বিষয়টি স্বীকার করে প্রকাশ্যেই বলেছেন, আমি দ্বায়িত্ব থাকা কালীন সময় এমন ঘটনা ঘটেছে, আমাদের সামাজিক সংগঠন হিসেবে এই সকল ছোট খাটো ভুল সংশোধন করার সুযোগ দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দিয়েছি। যেন ভোটারই তাদের চূড়ান্ত রায় প্রদান করেন।

নয়ন-আলী পরিষদের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয় বাংলাদেশ সোসাইটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচন প্রক্রিয়ায় স্পষ্ট লিপিবদ্ধ রয়েছে নির্বাচনে যে কোন প্রার্থী স্বতন্ত্র অথবা প্যানেলভুক্ত হয়ে নির্বাচনে করতে পারবেন। সেই অনুযায়ী নয়ন-আলী নামে একটি প্যানেল হয়েছে। সেখানে দুই জন সদস্য প্রার্থী জেড এ চোধুরী এবং আকবর আলী দুজন প্রার্থী নিয়ম মেনেই বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন কমিশনের নিকট মনোনয়য়ন জমা দেন এবং কমিশন সব কিছু দেখেই যথারীতি তা গ্রহণ করেন। পরিবর্তিতে নির্বাচন কমিশন প্রভাবিত হয়ে সামান্য ভুল দেখিয়ে মনগড়া সিদ্ধান্তেই তাদের মনোনয়য়ন বাতিল ঘোষনা করেন। কারণ হিসেবে বলেন যে, একজন সদস্যে শুধুমাত্র প্রস্তাবকারী স্বাক্ষর নেই অপর জনের প্রস্তাববকারী ও সমর্থন কারীর স্বাক্ষর নেই, এছাড়া অন্যান্য সকল তথ্য সঠিক ছিল বলে উল্লেখ করা হয়।

পরবর্তীতে বাদ পড়া সদস্যগণ গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের নিকট প্রার্থীতা বহাল রাখার আবেদন করেন, আবেদন তারা উল্লেখ করেন যে, আমরা দুজনই প্রথমবারের মত নির্বাচনে অংশগ্রহন করার সিদ্দান্ত নিয়েছি, আমাদের এ অনিচ্ছাকৃত ভুল ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখে আমাদের নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করার সুযোগ দেওয়া হোক, এছাড়া গঠনতন্ত্রের ‘ইলেকশন বাই লজ ফাইলিং নমিনেশন পেপারস আর্টিকেল টু’ এ ধারায় কোথায় প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারীর স্বাক্ষর থাকার কথা স্পষ্ট করে উল্লেখ নেই। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় নির্বাচন কমিশন তাদের এই আবেদনে কর্ণপাত করেন নেই। তারা সোসাইটির গঠনতন্ত্রের ধারা অনুযায়ী প্রার্থীপদ ফিরিয়ে দেওয়ার জন ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মোঃ আজিজ এবং তৎকালীন সভাপতি মরহুম কামাল আহমেদের এর বরাবর পত্র প্রেরণ করেন। ট্রাস্টি বোর্ডের একটি সভারও আহবানন করেন। সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, ট্রাস্টি বোর্ড ও র্বাচন কমিশন আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে এই বিষয়ে সমাধানের জন আলোচনা করবেন। এ সময় ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানের জরুরি বাংলাদেশের যাবার প্রয়োজন দেখা দিলে ট্রাস্টি বোর্ডেও সবচেয়ে প্রবীণ সদস্য কাজী আজহারুল হক মিলনকে সভার সার্বিক দায়িত্ব প্রদান করেন। কাজী মিলন-এ ব্যাপারে যখন কার্যকরি পরিষদের সভাপতিকে ফোন করেন তখন তিনি জানান যে নির্বাচন কমিশন এই সভায় আসবে না, তারপরও মিলন যথারীতি সময় অনুযায়ী সোসাইটির কার্যালয়ে সভা করার জন আসলে তখন অফিসে তালা দেখতে পান এবং কাউকে সেখানে দেখতে না পেয়ে চলে যান। কেন নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে বসতে চাইলেন না তা ব্যাখ্যা আজও জানা যায়নি। আলোচনায় বসলে কি ক্ষতি হতো?এ প্রশ্ন এখনো সাধারণ মানুষের কাছে মুখে মুখে। প্রার্থী দুজন সোসাইটির সকল বিধি বিধানকে সম্মান প্রদর্শন করেও, কোন রকম সহযোগিতা বা সমাধান না পেয়ে সোসাইটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী (আর্টিকেল ৪, সেকশন ৭) নির্বাচনে অংশগ্রহনে সুযোগ প্রদানের জন্য আদালতের শরনাপন্ন হন। আদালত দুই পক্ষের শুনানী শেষে নির্বাচন স্থগিতসহ কেন দুজন প্রার্থীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে একটি আদেশ জারি করেন। দেন। বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সভাপতি মরহুম কামাল আহমেদ, সহ-সভাপতি মরহুম আবু খায়ের খালেক ও মরহুম আজাদ বাকেরসহ মহামারীতে মৃত্যুবরণকারী সকলের আত্মার মাগফেরাত করা হয়।

আভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ সোসাইটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ৭ জন কামিশনার নির্বাচন পরিচালনা করবেন এর মধ্যে ১জন নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান থাকবেন। সোসাইটির কার্যকরি পরিষদ ৭ জনকেই মনোনীত করেছেন। ৭জনের মধ্যে একজন কমিশনার ছিলেন মহিউদ্দিন দেওয়ান, তিনি মনোনয়ন পেয়ে যথারীতি নির্বাচন কমিশনের নীতি-নির্দ্ধারনী সভায় অংশগ্রহণও করেন। তাছাড়া বাইলজ সহ সকল প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেছেন। ওই সময় তার স্বাক্ষরিত নির্বাচনী তফসিল স্থানীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়। হয়েছে। হঠাৎ করেই তিনি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করার জন্য ইসি পদ থেকে পদত্যাগ করে রব-রুহুল পরিষদের পক্ষে মনোনয়ন পত্র জমা দেন। গঠনতন্ত্রের র্টিকেল ১৬ সেকশন ৪ ক্লাউজ এ-বি’তে উল্লেখ আছে যে, নির্বাচন কমিশকনের কোন সদস্য নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। এমন কি ভোটও প্রদান করতে পারবে না। নির্বাচন কমিশন কি ভাবে কোন আইনের ভিত্তিতে তাকে নির্বাচনে অংশ গ্রহনের বৈধতা ঘোষণা করেন তা কারোই জানা নেই।

বাংলাদেশ সোসাইটি একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। যারা এখানে নির্বাচন করতে আসে তারা মানুষের সেবা করার জন্য আসেন। নির্বাচন কমিশন কোন প্রার্থীকে বাসা থেকে কাগজপত্র (পাসর্পোট) এনে মনোনয়নপত্র ফরম বৈধতার সুযোগ করে দেন, কারো আবার গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচন করার সুযোগ না থাকা সত্বেও প্রার্থীপদ বৈধতা দিয়ে যে মহানুবতার পরিচয় দিলেন সেক্ষেত্রে নয়ন-আলী পরিষদের দুজন শুধুমাত্র সদ্স্যপদ প্রার্থীকে কেন সুযোগ না দিয়ে এই বিমাতা সূলভ অচরণ করছেন। নির্বাচন কমিশন যদি একটু সহনুভুতির পরিচয় দিতেন তাহলে নিশ্চিত সোসাইটি লক্ষ লক্ষ ডলারের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেত। নয়ন-আলী, রব রুহুল পরিষদসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও আর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষা পেত। তাই সকলে মনে করি নির্বাচন কমিশনের এ ধরনের পক্ষপাতিত্বমূলক আচরনের কারণের সোসাইটির আজ এ চরম বেহাল অবস্থা।

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয় ২০২১ সালের নভেম্বরের ১৪ তারিখে সোসাইটির নির্বাচন হওয়ার কথা ছিলো সেই নির্বাচন নীরা এস নীরু নামে জনৈকা প্রবাসীর মামলার ফলে আদালতের নির্দেশে নির্বাচন ২য় বারের মত স্থগিত হয়ে যায়। নির্বাচন বন্ধ হওয়ায় আমাদের হৃদয়ের গভীরে কি পরিমান রক্তক্ষ্রণ হয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। যিনি এই মামলা করেছেন সোসাইটিতে তার কি অবদান আছে? তিনি সোসাইটিতে কখনো নির্বাচনে অংশ নেন নেই এবং এমনকি কোন দায়িত্বও পালন করেন নাই। বাংলাদেশ সোসাইটিকে ধ্বংস করাই তার আসল উদ্দেশ্য। তার এই হীন চেষ্টা কখনো সফল হবে না। নয়ন-আলী পরিষদ সকলকে নিয়ে তার মামলাবাজির অপচেষ্টাকে রুখে দেবে বলে উল্লেখ করা হয়। ২য় বার সোসাইটির নির্বাচন বন্ধের জন্য কে মামলা করেছে তা দিবালোকের মত পরিস্কার হওয়ার পরও রব-রুহুল পরিষদের কয়েকজন প্রার্থী মামলার আগে ও পরে নয়ন-আলী পরিষদের যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মহামারীর মধ্যে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার শুরু করে দেয় হয়। তারা এখানেই ক্ষান্ত হয় নাই, গত ১২ নভেম্বর শুক্রবার সোসাইটির অফিসে জরুরি সভা চলাকালীন তাদের দলবলসহ প্রবেশ করে সোসাইটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষকে সরাসরি মামলা বাজ বলে হেয় করার হীন চেষ্টা করেন। যা সোসাইটির সকলকে অপমান করার সামিল। এ ব্যাপারেও সোসাইটির কার্যকরি পরিষদ থেকে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

১২ নভেম্বর ২০২১ কোর্টের নির্দেশে নির্বাচন বন্ধ হওয়ার খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে নয়ন-আলী পরিষদ সারাদিন উদ্গ্রীব হয়ে নির্বাচন কমিশনারদের সাথে যোগাযোগ করে সঠিক তথ্য জানার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। নয়ন-আলী পরিষদের সভাপতি প্রার্থী কাজী নয়ন নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান জামাল আহমদ জনীকে ফোন করে কোর্টের স্থগিতাদেশের সার্টিফাইড কপি চাইলে তিনি তা পরে দিবেন বলে জানান। তিনি সেই অর্ডার পরের দিন রাত ২টার সময় ই-মেইলে পাঠান। সেই কপিতে কোর্টের কোন সার্টিফাইড সীল ছিল না। অথাৎ সেই অর্ডার রবিবার পযর্ন্ত কোর্টের কোন সিস্টেমেও পাওয়া যায়নি।

নয়ন-আলী পরিষদের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয় নীরা এস নীরুর মামলার কপি ৮ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনের নিকট হস্তগত হয়েছে, তা চেয়ারম্যান নিজেই ̄স্বীকার করেছেন। তাহলে তিনি সেই মামলার বিষয়ে কি কার্যকরী ভুমিকা নিয়েছেন? কার্যকরী পরিষদ ও ট্রাস্টি বোর্ডকে অবহিত করেছিলেন কিনা? ১২ই নভেম্বর ওসমান চৌধুরীর মামলায় চেয়ারম্যানসহ কমিশনের অ্যাটর্নি মোঃ আজিজ কোর্টে উপস্থিত ছিলেন এবং একই দিনে নীরা এস নীরু নিরু কোর্টে নির্বাচন স্থগিত চেয়ে মামলা করেছেন। তখন কমিশনের চেয়ারম্যান ও অ্যাটর্নি কি ভূমিকা পালন করেছেন? কেন তারা শুনানি করতে পারলেন না? বা স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ দিতে পারলেন না? এ ব্যাপারে কার্যকরী পরিষদ ও ট্রাস্টি বোর্ড কমিশনের নিকট কোন লিখিত ব্যাখ্যা চেয়েছেন কিনা? কার্যকরী পরিষদ, নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনকালীন সময় কোন রকম আইনি বাধা আসলে তা মোকাবেলা করার জন্য অতিরক্ত অর্থ বরাদ্দ করার ফলেও তা কার্যত ব্যর্থতায় পরিনত হয়েছে।