২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ০৬:৫৯:১১ পূর্বাহ্ন


রাজশাহীতে যৌন নিগ্রহের শিকার কিশোরী গৃহকর্মী
নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০১-২০২৩
রাজশাহীতে যৌন নিগ্রহের শিকার  কিশোরী গৃহকর্মী রাজশাহীতে যৌন নিগ্রহের শিকার কিশোরী গৃহকর্মী


রাজশাহীতে যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছে এক কিশোরী গৃহকর্মী। যৌন নিগ্রহের শিকার হয়ে কিশোরী মেয়েটি (১৩) এখন হাসপাতালের বেড়ে কাতরাচ্ছে। নিরুপায় হয়ে আশ্রয় চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে জেলা প্রশাসকের কাছে। ভুক্তভোগী এই মেয়েটির বাবা নতুন সংসার পেতেছেন চট্টগ্রামে, আর মায়ের নতুন সংসার ফরিদপুর জেলায়। পৃথক সংসারজীবনে ব্যস্ত বাবা-মা আশ্রয় দিতে রাজি নয়। এমনকি নানা-নানিও তাকে আশ্রয় দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে বলে জানা গেছে। 

সূত্র জানায়, রাজশাহী নগরীর একটি বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতো কিশোরী মেয়েটি। গৃহকর্তার যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে সে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। গৃহকর্তা তাকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। কিন্তু সে আর সেখানে ফিরতে চায় না। নিরুপায় হয়ে তখন সে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কাছে আশ্রয় চেয়ে চিঠি পাঠায়। মেয়েটি এখন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসাধীন। তার মেডিকেল প্রতিবেদনে লেখা রয়েছে ‘রিপিটেড সেক্সুয়াল অ্যাসল্ট।’

গত ৯ জানুয়ারি কিশোরীর পাঠানো চিঠি পান রাজশাহী জেলা প্রশাসক। এরপর তিনি সেটা রাজশাহী সমাজসেবা অধিদফতরের উপ-পরিচালক হাসিনা মমতাজের কাছে পাঠান। চিঠির ওপরে লিখে দেন, ‘জরুরি আলোচনা প্রয়োজন।’ 

চিঠি পেয়েই রাজশাহী সমাজসেবা অধিদফতরের উপ-পরিচালক হাসিনা মমতাজ জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা করেন। এরপর তিনি মেয়েটিকে হাসপাতালের সাধারণ ওয়ার্ড থেকে ওসিসিতে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন।

ভুক্তভোগী কিশোরীর বাড়ি নওগাঁয়। বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পর অনেকদিন নানির বাড়িতেই থেকেছে এই কিশোরী। গত বছরের ১২ আগস্ট রাজশাহী নগরীর এক বাড়িতে তাকে গৃহকর্মীর কাজে রেখে যান তার নানি। এই গৃহকর্তার বিরুদ্ধেই যৌন নির্যাতনের অভিযোগ এনেছে ওই কিশোরী। অভিযুক্ত গৃহকর্তা (৮০) একটি সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। 

ভুক্তভোগী কিশোরী তার চিঠিতে লিখেছে, তার বাড়ি নওগাঁর নিয়ামতপুরে। ১০ বছর আগে তার বাবা-মা উভয়ের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়। তখন সে ছোট ছিল। তারা উভয়েই এখন নতুন করে সংসার শুরু করেছেন। মার নতুন সংসার ফরিদপুর আর বাবার নতুন সংসার চট্টগ্রামে। তারা কেউ আমাকে (কিশোরী) আশ্রয় দিতে রাজি নয়। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে নানির বাসায় থাকছিলাম। কিন্তু ৫ মাস পূর্বে আমার নানি গোলাম কবির নামে একজনের বাসায় কাজের জন্য আমাকে রেখে যায়। সেখানে আমাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়। আমাকে প্রায় সময় ইজ্জতহানীর চেষ্টা ও গায়ে হাত দেয়া হয়। বর্তমানে অসুস্থ হয়ে আমি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডেও ১৭ নম্বর বেডে ভর্তি আছি। আমাকে আবার তার বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য জোরপূর্বক চেষ্টা করছে। আমি গোলাম কবিরের বাড়িতে যেতে চাই না। যদি জোরপূর্বক নিয়ে যায়, তাহলে আমার জীবন হুমকির মুখে পড়বে। এ অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল হতে নিরাপদস্থানে আশ্রয় দেওয়ার জন্য আপনার কাছে বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ জানাচ্ছি।

তবে জানতে চাইলে ওই গৃহকর্তার পুত্রবধূ দাবি করেন, মেয়েটিকে শারীরিক নির্যাতন বা যৌন নিগ্রহের অভিযোগ সঠিক নয়। এ ধরণের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, কিশোরী মেয়েটিকে তারা মেয়ের মতো আদর করতেন। এসব অভিযোগ শুনে তারা অবাক হচ্ছেন।

এ বিষয়ে রাজশাহী সমাজসেবা অধিদফতরের উপ-পরিচালক হাসিনা মমতাজ গণমাধ্যমকে বলেন, ওই কিশোরী যে বাসায় থেকে গৃহকর্মীর কাজ করত, সে বাসায় একজন নার্স ভাড়া থাকতেন। তিনিই নির্যাতনের শিকার এই কিশোরীকে উদ্ধার করে গত ৫ জানুয়ারি রামেক হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে দেন। এরপর গৃহকর্তা তাকে বাসায় আনার চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছুতেই ওই কিশোরী তার সঙ্গে যায়নি। আমরা খবর পেয়ে রামেক হাসপাতালে ছুটে যাই। দেরি হলে হয়তো মেয়েটাকে তারা নিয়ে চলে যেতো। আমরা আসায় তারা মেয়েটিকে নিয়ে যেতে পারেনি। তাকে সাধারণ ওয়ার্ড থেকে বর্তমানে ওসিসিতে ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে।  

তিনি আরো বলেন, সে (কিশোরী) মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের যুববিষয়ক ক্লাবের এক সদস্যের মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের কাছে আশ্রয় চেয়ে চিঠি দেয়। সে জানায়, গোলাম কবির নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে কাজের মেয়ে হিসেবে থাকতো। গোলাম কবির নগরীর একটি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বলে শুনেছি। সে আর গোলাম কবিরের বাড়িতে যেতে চায় না। মেয়েটি আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।  

হাসিনা মমতাজ বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে মেয়েটিকে আমাদের হেফাজতে নেওয়া হবে। পরে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।