০৪ মে ২০২৪, শনিবার, ০৫:১০:৫০ অপরাহ্ন


প্রধান শিক্ষক শূন্য ২১ বিদ্যালয়! টেনেটুনে চলছে বিদ্যালয়গুলো
কংকনা রায়, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০৩-২০২৩
প্রধান শিক্ষক শূন্য ২১ বিদ্যালয়! টেনেটুনে চলছে বিদ্যালয়গুলো ছবি: সংগৃহীত


২১ বিদ্যালয় চলছে প্রধান শিক্ষক ছাড়াই। প্রধান শিক্ষকের পদশূন্য থাকায় সহকারী শিক্ষকদের দিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করিয়ে কার্যক্রম চলছে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার ওই ২১ প্রাথমিক বিদ্যালয়। দায়িত্বপ্রাপ্ত ওইসব শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষদের দায়িত্ব পালন করায় সঠিকভাবে করতে পারছেন না নিজেদের পাঠদান। 

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ১০৯ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ২১টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। সরাসরি নিয়োগ না হওয়ায় দীর্ঘদন থেকে পদগুলো শূন্য রয়েছে। ২১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদশূন্য থাকায় বিদ্যালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ সহকারি শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে।

সরেজমিনে প্রধান শিক্ষকের পদশূন্য থাকা এবং ভারপ্রাপ্ত দিয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা করা কয়েকটি বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালনকারি সহকারি শিক্ষকরা নিজের পাঠদানের দায়িত্বের পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে বিদ্যালয় পরিচালনার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। এতে কোনো না কোনোভাবে সার্বিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন সহকারি শিক্ষক বলেন, কোনো বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষকের পদশূন্য হলেই সেই প্রধান শিক্ষককে তার নিজে দাপ্তরিক কাজের পাশাপাশি ওই সহকারি শিক্ষকের ক্লাস নিতে হচ্ছে। তেমনি কোন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদশূন্য হলে ওই বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষকে নিজের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে। ফলে পাঠদান বিভিন্ন কারণে ব্যাহত হচ্ছে। 

উপজেলার পুখুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কাজল রেখা বলেন, বিদালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ ৬ জন সহকারি শিক্ষকের পদ অনুমোদিত থাকলেও প্রধান শিক্ষকসহ একজন সহকারি শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। ২০১৯ সাল থেকে নিজ দায়িত্বের পাশাপাশি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিদ্যালয়ে ১৩০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। নিজ দায়িত্বের পাশাপাশি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। 

উপজেলার চৌরাইট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নুরতাজ উল্লাহ বলেন, ২০২১ সালের ১৪ জুন থেকে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পূর্বের শিক্ষার্থী সংখ্যা ২০০ জনের সঙ্গে নতুন শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী যোগ হয়েছে আরো ১৬০ জন। এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীদের পাঠদান করতে হয়ে কর্মরত শিক্ষকরা হিমশিম খাচ্ছেন। নিজের রুটিং অনুযায়ী ক্লাসে পাঠদান করতে গিয়ে দাপ্তরিক কাজ ঠিকমতো করা যাচ্ছে না। দাপ্তরিক কাজ ঠিকমতো করতে গেলে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। 

এ বিষয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য আব্দুল কাইয়ুম বলেন, বিদ্যালয়গুলোতে প্রধান শিক্ষকের কাজের চাপ অনেক বেশি। প্রধান শিক্ষকের পদশূন্য থাকলে এবং সহকারি শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক করে দায়িত্ব পালন করালে অবশ্যই বিদ্যালয়ের পাঠদান ব্যাহত হবে। শিক্ষার্থীদের পাঠদান নিশ্চিত করতে শূন্য পদগুলোতে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া খুবই জরুরি।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোসাম্মৎ হাছিনা ভূঁইয়া বলেন, শিক্ষকদের অবসর, এলপিআর (অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটি) মাতৃত্বকালীন ছুটি, মৃত্যুসহ নানা কারণে শিক্ষকের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে উপজেলার ১০৯ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ২১টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদশূন্য রয়েছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কর্মরত জ্যেষ্ঠ সরকারী শিক্ষকদের মধ্যে থেকে পদোন্নতি দিয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ পূরণ করা হবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি করা হবে। শিক্ষক নিয়োগ হলেই এই সংকট কেটে যাবে এবং শিক্ষা ও পাঠদানের অনুকূল পরিবেশ ফিরে আসবে।