১৮ মে ২০২৪, শনিবার, ০৫:৩৭:০৯ পূর্বাহ্ন


২৫০ মিটার ড্রেন নির্মাণের অযুহাতে দুই কিমি সড়কের গাছ কেটে সাবাড়!
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-০৫-২০২৪
২৫০ মিটার ড্রেন নির্মাণের অযুহাতে দুই কিমি সড়কের গাছ কেটে সাবাড়! ছবি: সংগৃহীত


আমনুরা বাজারটিতে ছাঁয়া দিত সড়কের গাছগুলো। গাছের ছাঁয়ায় দুদণ্ড জিরিয়ে নিতেন পথের পথিক, শ্রমিক-দিনমজুর। বাজারটি ঠিকই আছে। তবে ছাঁয়া নেই। ছাঁয়াদানকারী গাছগুলো কেটে সাবাড় করায় ছাঁয়াঘেরা আমনুরা বাজারটি এখন খাঁ খাঁ করছে।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা সদর থেকে যে সড়কটি বেরিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হয়ে নাচোল উপজেলা চিরে নওগাঁর সাপাহার উপজেলা সদরে গিয়ে শেষ হয়েছে। ওই সড়কের চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর অংশে আমনুরা বাজার। মূলত সদরের কেন্দুল থেকে আমনুরা বাইপাস রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত সড়কের দুই ধারের যে গাছগুলো ছাঁয়া দিয়ে প্রাণ-প্রকৃতি ঠিক রেখেছিল, সেসব গাছই বলির শিকার হয়েছে। অথচ চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশন সংলগ্ন কেন্দুইল বাজার থেকে গোদাগাড়ি-নাচোল সড়কের উৎসমুখে ২৫০ মিটার দীর্ঘ ড্রেন নির্মাণ কাজ শুরু করেছে সড়ক জনপথ বিভাগ (সওজ)। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাত্র ২৫০ মিটার দীর্ঘ ড্রেন নির্মাণের অজুহাত দেখিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের কেন্দুল থেকে আমনুরা বাইপাস রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত অন্তত ২ কিলোমিটার সড়কের দুই ধারের শত শত গাছ কাটছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদ। ঠিকাদারের লোকজন ১২ দিন ধরে এসব গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মেহেদী হাসান শুক্রবার (৩ মে) মোবাইল ফোনে জানান, সদরের কেন্দুইল বাজার থেকে আমনুরা বাজার অভিমুখে মাত্র প্রায় ২৭ লাখ টাকা ব্যায়ে ২৫০ মিটার দীর্ঘ ড্রেন নির্মাণ করছেন তারা। ইতিমধ্যে কাজও শুরু হয়েছে। 

তিনি বলেন, ‘বছরখানেক আগে ড্রেনটি নির্মাণের প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। সেসময় গোদাগাড়ি-নাচোল সড়কের পূর্বাংশে কেন্দুইল বাজার এলাকায় মাত্র ৩ থেকে ৪টি গাছ কাটা পড়ার কথা ছিল। সে অনুযায়ী জেলা পরিষদকে চিঠি দিয়ে গাছ অপসারণ করতে বলা হয়।’ কিন্তু সড়কের দুই পাশের শত শত গাছ কেন কাটা হচ্ছে সে ব্যপারে তারা কিছু জানেন না।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কেন্দুল বাজার থেকে আমনুরা বাজার অভিমুখে ২৫০ মিটার ড্রেন নির্মাণের কাজ শুরু করেছে সওজ। এখান থেকে আমনুরা বাইপাস রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার সড়কের দুই ধারের শিমুল, কড়াই, শিশু, বাবলা, মেহগনিসহ নানা প্রজাতির শত শত গাছ কেটে সাবাড় করা হয়েছে। গাছ কাটার পর থেকে ফাঁকা সড়কে উত্তপ্ত সূর্যের তাপে খাঁ খাঁ করছে পুরো এলাকা। কেটে ফেলা গাছের গুঁড়ি সড়কে পড়ে আছে। একটু পর পর ভ্যান এসে নিয়ে যাচ্ছে নিষ্প্রাণ গাচের গুঁড়িগুলো।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদ বলছে, গোদাগাড়ি-নাচোল সড়কের দুই ধারের ২৫০টি গাছ বিক্রি করা হয় প্রায় ২৬ লাখ টাকায়। ঠিকাদারের লোকজন তাজা গাছগুলো কেটে সরিয়ে নিচ্ছে। মূলত সওজের দেওয়া চিঠির প্রেক্ষিতে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে তাজা গাছগুলো কেটে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, কাগজে কলমে যে ২৫০টি গাছ বিক্রি করেছে জেলা পরিষদ, তা অযৌক্তিক। ৩ থেকে ৪টি গাছ অপসারণ করলেই সওজের ড্রেন নির্মাণ করা যেত। কিন্তু সওজের ওপর দায় চাপিয়ে ২৫০টি গাছ বিক্রির কথা বলে সড়কের দুই পাশের শত শত গাছ নির্বিচারে কেটে ফেলা হচ্ছে। 

অতিরিক্ত গাছ কাটার অভিযোগ অস্বীকার ঠিকাদারের প্রতিনিধি কবির হোসেন বলেন, ‘নির্ধারিত ২৫০টি গাছই কাটছেন তারা। ১০ দিন ধরে গাছ কাটছেন তারা। ২৫০টি গাছ কাটা শেষ হতে আরও ১০ দিন সময় লাগবে।’

আমনুরা বাজারের ব্যবসায়ী আবদুস সালাম বলেন, ‘গাছের ছাঁয়ায় বাজার শীতল থাকতো। পাখির কিঁচিরমিচির ডাকে মুখর থাকতো পরিবশে। কিন্তু পরিবেশ প্রকৃতির কথা চিন্তা না করে তরতাজা শত শত গাছ কেটে নিচ্ছে জেলা পরিষদ। গাছ কাটার পর থেকে আমনুরা বাজারটি খাঁ খাঁ করছে। বাজারে কমছে মানুষের উপস্থিতি। এখন আর কামলারাও বাজারে বসে গা জিরাচ্ছে না।’ 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আফাজ উদ্দিন বলেন, ‘সড়ক ঘেঁষে সড়ক ও জনপথ বিভাগ ড্রেন নির্মাণ করছে। এ কারণে তারা সড়কের দুই পাশের ২৫০টি গাছ বিক্রি করেছেন তারা। অতিরিক্ত গাছ কাটার সুযোগ নেই।’