২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ০৭:৩৩:০২ অপরাহ্ন


এখনও আছে গুনাহ মাফের সময়!
ধর্ম ডেস্ক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০৪-২০২৩
এখনও আছে গুনাহ মাফের সময়! ফাইল ফটো


রমজানের অধিকাংশ সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে। ঘনিয়ে আসছে মাহে রমজানের শেষের প্রহর। আমরা কী এর যথাযথ মূল্যায়ন করতে পেরেছি? এর উত্তর হয় যদি ‘না’, তাহলে বলি, এখনও কয়েকদিন বাকি আছে। তওবা করে নিজেকে পাপমুক্ত করার ও আত্মসংশোধনের সুযোগ এখনও বিদ্যমান। খাঁটি তওবা হলে মুহূর্তেই সব মাফ করে দেন আল্লাহ। বিগত দিনগুলোর ক্ষতি কাটিয়ে নিজেকে পরিশুদ্ধ করার সুযোগ এখনও আছে। মনে রাখতে হবে, সময়ের কাঁটা কারও জন্য অপেক্ষা করে না।

পাপ মোচনের শ্রেষ্ঠ মুহূর্তগুলো শেষ হয়ে যাচ্ছে। যাপিত জীবনের পাপ মোচনের আগেই যদি রমজানের বেলা হেলায়-খেলায় ফুরিয়ে যায়, তাহলে এ জীবন ব্যর্থ। অথচ রমজান গুনাহ মাফের মাস। ক্ষমা পাওয়ার মধ্য দিয়ে চিরশান্তি ও চিরমুক্তির একটি সুবর্ণ সুযোগ এনে দেয় রমজান। কিন্তু যে ব্যক্তি এ সুযোগ কাজে না লাগায়, তার ধ্বংস অনিবার্য। তার বিপদ অবশ্যম্ভাবী। হাদিসের বর্ণনাই তার প্রমাণ-

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিম্বরে উঠলেন এবং (তিনবার) বললেন, ‌‘আমিন, আমিন, আমিন।’ বলা (জানত চাওয়া) হলো, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনি মিম্বরে উঠলেন এবং বললেন, ‘আমিন, আমিন, আমিন। কিন্তু কেন?’

তিনি বললেন, নিশ্চয়ই জিবরিল আমার কাছে এসেছিলেন। তিনি বললেন, ‘যে রমজান পেল, অথচ তাকে ক্ষমা করাতে পারলো না, সে জাহান্নামে যাবে এবং আল্লাহ তাকে দূরে সরিয়ে দেবেন, বলুন আমিন।’ আমি বললাম, ‘আমিন।’

এরপর বললেন, ‘যে তার মা-বাবা উভয়কে পেল অথবা তাদের একজনকে পেল; অথচ তাদের মাধ্যমে সে পুণ্যের অধিকারী হতে পারল না এবং সে মারা গেল, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে এবং আল্লাহ তাকে দূরে সরিয়ে দেবেন, বলুন আমিন।’ আমি বললাম, ‘আমিন।’

এরপর বললেন, ‘যার কাছে আপনার নাম উচ্চারিত হলো, অথচ সে আপনার প্রতি দরুদ পাঠ করলো না এবং মারা গেল, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে এবং আল্লাহ তাকে দূরে সরিয়ে দেবেন, বলুন আমিন।’ আমি আমিন বললাম। (ইবনে হিব্বান ১৮৮)

অন্য এক হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি রমজান পেয়েও নিজের পাপ মোচন করাতে পারলো না, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে ধিক্কার দিয়ে বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তির নাক ধুলায় ধূসরিত হোক, যার কাছে রমজান মাস এসে চলে গেল, অথচ তার পাপগুলো ক্ষমা করা হয়নি।’ (আদাবুল মুফরাদ ৫০২)

মনে রাখতে হবে

যে দোয়ায় স্বয়ং নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘আমিন’ বলেছেন, সে দোয়া কখনও বিফলে যেতে পারে না। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যার জন্য ধ্বংসের দোয়া করেছেন, তার ধ্বংস অবশ্যম্ভাবী। তাই রমজানের শেষ মুহূর্তে সবার সতর্ক হওয়া জরুরি। রমজান শেষ হওয়ার আগেই ভেবে দেখা দরকার, আত্মশুদ্ধি অর্জনে প্রত্যেকে নিজেদের কতটুকু পরিপূর্ণ করতে পেরেছে।

আল্লাহ তাআলা রমজান মাসে রোজার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেছেন, ‘হে মুমিনরা! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যেন তোমরা তাকওয়া (আল্লাহভীতি) অর্জন করতে পারো।’ (সুরা বাকারা: আয়াত ১৮৩)

আর আল্লাহভীতির মূলকথা হলো, গুনাহ ও পাপ থেকে বেঁচে থাকা। এ জন্যই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও তদানুযায়ী আমল করা বর্জন করেনি, তার এই পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ (বুখারি ১৯০৩)

অন্য হাদিসে এসেছে, ‘অনেক রোজাদার এমন আছে, যাদের রোজা পালনের সারকথা হলো, তৃষ্ণার্ত আর ক্ষুধার্ত থাকা।’ (ইবনে মাজাহ ১৬৯০)

রমজান মাস ক্ষমা পাওয়ার শ্রেষ্ঠ সুযোগ। তাই উঠতে-বসতে সর্বাবস্থায় বেশি বেশি ইসতেগফার পাঠ করা-

أَسْتَغْفِرُ الله رَبِّ مِنْ كُلِّ ذَنْبٍ وَاَتُوْبُ اِلَيْهِ

উচ্চারণ: ‘আসতাগফিরুল্লাহা রাব্বি মিন কুল্লি যামবিও ওয়া আতুবু ইলাইহি।’

অর্থ : ‘আমি আমার রব আল্লাহর কাছে আমার সমুদয় পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন করছি।’

পাশাপাশি নিজেকে সব ধরনের গুনাহ মুক্ত রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা। কেননা, যাবতীয় পাপ-পঙ্কিলতা, অন্যায়, অপরাধমূলক চিন্তাভাবনা এবং অসৎ কাজকর্ম থেকে বিরত থেকে রোজা রাখাও পাপ মার্জনা ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাধ্যম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজান মাসের রোজা পালন করবে, আল্লাহ তার অতীত জীবনের সব গুনাহ মাফ করে দেবেন।’ (বুখারি ১৯০১)

পবিত্র রমজান মাসে আল্লাহ তাআলা তার বান্দার দোয়া কবুল করেন এবং পাপ মার্জনা করেন। রোজাবস্থায় আল্লাহর কাছে বেশি বেশি প্রার্থনা করা এবং অতীত পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না-

১. ন্যায়পরায়ণ শাসক;

২. রোজাদার, যতক্ষণ না সে ইফতার করে;

৩. মজলুম ব্যক্তির দোয়া।’ (ইবনে মাজাহ ১৭৫২)

এখনও সময় আছে, আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে গুনাহ মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করা। রমজানের শেষ দশকে জাহান্নামের আগুন থেকে নাজাতের জন্য মুক্তি চাওয়া। আল্লাহ তাআলা সবাইকে গুনাহমুক্ত করে দিন। আমিন।