১৯ মে ২০২৪, রবিবার, ০৯:৩৭:০৬ পূর্বাহ্ন


ফিতরা দেওয়ার নির্দেশ ও ফজিলত
ধর্ম ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০৪-২০২৩
ফিতরা দেওয়ার নির্দেশ ও ফজিলত ফাইল ফটো


ঈদুল ফিতরের আগেই সাদকায়ে ফিতর দেয়া জরুরি। রমজানের রোজা পালন শেষে গরিবের মুখে হাসি ফোটানোর অন্যতম মাধ্যম সাদকাতুল ফিতর। এ অর্থ দিয়েই তো গরিব-অসহায়রা পরিবারের জন্য ব্যয় করবে। ধনীর সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করবে।

এমন অনেকেই আছেন, যারা সাদকায়ে ফিতর সম্পর্কে ধারণা রাখেন না। সাদকায়ে ফিতরের পরিচয়ও জানেন না। তাদের জন্য সাদকায়ে ফিতরের পরিচয়, ফজিলত, ফিতর আদায়ে করণীয় ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরা হলো-

সাদকায়ে ফিতর

সাদকায়ে ফিতর হলো- রোজা খোলার সাদকা বা দান। সাদকায়ে ফিতর এমন দানকে বলা হয়, যা পুরো রমজান মাস রোজা রাখার পর ঈদের দিন সব সামর্থ্যবানদের জন্য আদায় করা আবশ্যক। এ বিশেষ দান দিয়েই গরিব-অসহায় মানুষ ঈদের আনন্দে মেতে ওঠবে।

সাদকায়ে ফিতর আদায়ের নির্দেশ ও ফজিলত

> সাকদায়ে ফিতর দ্বারা কোরআনুল কারিমে পরিশুদ্ধ হওয়ার কথা বুঝানো হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

'নিশ্চয় সাফল্য লাভ করবে সে, যে পরিশুদ্ধ হয় ৷' (সুরা আলা : আয়াত ১৪) মুফাসসিরিনের কেরামের মতে, এ পরিশুদ্ধ দ্বারা সাদকায়ে ফিতরকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। অর্থাৎ যারা সাদকায়ে ফিতর আদায় করবেন তারাই লাভ করবেন সফলতা।

> হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

فَرَضَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صَدَقَةَ الْفِطْرِ صَاعًا مِنْ شَعِيرٍ أَوْ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ عَلَى الصَّغِيرِ وَالْكَبِيرِ وَالْحُرِّ وَالْمَمْلُوكِ

‘গোলাম, স্বাধীন, পুরুষ, নারী, ছোট, বড় সব মুসলিমের ওপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ‘সা’ খেজুর, অথবা অর্ধ ‘সা’ গম জাকাতুল ফিতর ফরজ করেছেন এবং (ঈদের) নামাজের আগে তা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন।' (বুখারি ১৫১২)

> হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন-

فَرَضَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم زَكَاةَ الْفِطْرِ طُهْرَةً لِلصَّائِمِ مِنَ اللَّغْوِ وَالرَّفَثِ وَطُعْمَةً لِلْمَسَاكِينِ مَنْ أَدَّاهَا قَبْلَ الصَّلَاةِ فَهِيَ زَكَاةٌ مَقْبُولَةٌ وَمَنْ أَدَّاهَا بَعْدَ الصَّلَاةِ فَهِيَ صَدَقَةٌ مِنَ الصَّدَقَاتِ

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাদাকাতুল ফিতর ফরজ করেছেন- অশ্লীল কথা ও বেহুদা কাজ থেকে রমজানের রোজাকে পবিত্র করতে এবং মিসকিনদের খাদ্যের ব্যবস্থার জন্য। যে ব্যক্তি (ঈদের) নামাজের আগে তা আদায় করে সেটা কবুল সাদাকা হিসেবে গণ্য হবে। আর যে ব্যক্তি নামাজের পরে আদায় করে, তা সাধারন দান হিসেবে গৃহীত হবে।’ (আবু দাউদ ১৬০৯)

> হজরত জারির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, রামজানের রোজা সাদকাতুল ফিতর আদায় করার আগ পর্যন্ত আসমান-জমিনের মাঝে ঝুলন্ত থাকে।' (তারগিব ওয়াত তারহিব)

> হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একজন ঘোষক দিয়ে মক্কার পথে পথে এ ঘোষণা দেওয়ালেন যে, জেনে রেখো! প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, গোলাম-স্বাধীন, ছোট-বড় সকলের ওপর সাদাক্বায়ে ফিতর অপরিহার্য। দুই মুদ (আধা সা) গম কিংবা এক সা অন্য খাদ্যবস্তু।' (তিরমিজি)

হাদিসের আলোকে সাদকায়ে ফিতরের গুরুত্ব

> সাদকায়ে ফিতর আদায় করা মুমিনের জন্য আল্লাহ কর্তৃক অত্যাবশ্যকীয় বিধান ৷

> হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী- 'তুহরাতুল্লিস সায়িম' অর্থাৎ একমাস সিয়াম সাধনায় মুমিনের অনাকাঙ্খিত ত্রুটি-বিচ্যুতির কাফফারা হলো সাদকায়ে ফিতর।

> হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী- 'তুমাতুল্লিলমাসাকিন' অর্থাৎ সমাজের অসহায়, দুঃস্থ-দরিদ্র, রিক্তহস্ত জনগোষ্ঠি যাতে বছরান্তে একটি দিন অন্তত খেয়ে-পরে আনন্দ উদযাপন করতে পারে ৷

> দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পরে আল্লাহ তাআলা কর্তৃক পানাহারের অনুমতি মিলায় তার কৃতজ্ঞতা স্বরূপ সাদকায়ে ফিতর আদায় করা ৷

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সাদকায়ে ফিতর আদায়ের নির্দেশ মেনে চলার তাওফিক দান করুন। রমজানের রোজার ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে মুক্তি পাওয়ার তাওফিক দান করুন। সাদকায়ে ফিতরের ফজিলত অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন।