২৯ এপ্রিল ২০২৪, সোমবার, ০৫:২৪:৩০ পূর্বাহ্ন


কাঁচা মরিচে ফের নাভিশ্বাস, দাম বেড়েছে মসলারও
অনলাইন ডেস্ক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-০৬-২০২৩
কাঁচা মরিচে ফের নাভিশ্বাস, দাম বেড়েছে মসলারও বাজারে ঊর্ধ্বমুখী কাঁচা মরিচ ও মসলার দাম। ছবি: সময় সংবাদ


ঘনিয়ে আসছে ঈদুল আজহা। কোরবানির ঈদ কেন্দ্র করে বাড়ছে মসলাজাতীয় পণ্যের দাম। এদিকে আবারও ঊর্ধ্বমুখী কাঁচা মরিচের দাম। এতে দিশেহারা ভোক্তারা।

শুক্রবার (২৩ জুন) কেরানীগঞ্জের জিনজিরা, কালীগঞ্জ, আগানগর কাঁচাবাজার ও পুরান ঢাকার শ্যামবাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
 
বেশ কয়েক মাস ধরে ঊর্ধ্বমুখী নিত্যপণ্যের বাজারে এবার লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে কাঁচা মরিচের দাম। কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৪০ টাকায়। গত সপ্তাহ যা ছিল ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা। সপ্তাহ ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত।
 
ক্রেতারা জানান, প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে মরিচের দাম। দুই সপ্তাহ আগেও কাঁচা মরিচের কেজি ছিল ১০০ টাকা। গত সপ্তাহে সেটি বিক্রি হয়েছে ১৬০ টাকায়। আর এ সপ্তাহে মরিচের দাম দাঁড়িয়েছে প্রায় আড়াইশ টাকায়।
 
ফাহিম শাহরিয়ার নামে এক ক্রেতা সময় সংবাদকে বলেন, বাজারে সবকিছুর দামই বাড়তি। তবে মরিচের দাম বাড়ছে অস্বাভাবিকভাবে। দেখার কেউই নেই। এতে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে যাচ্ছে।
 
আর বিক্রেতাদের দাবি, সরবরাহ ঘাটতি ও পরিবহন সংকটের কারণে বাড়ছে কাঁচা মরিচের দাম। আলামিন হোসেন নামে এক বিক্রেতা বলেন,
ঈদ উপলক্ষে ট্রাকগুলো গরু আনা-নেয়া করায় পরিবহন সংকট দেখা দিয়েছে। এতে বাজারে সরবরাহ কমে গেছে। তাই দাম একটু বাড়তি।
 
আনিস নামে আরেক বিক্রেতা বলেন, বাজারে কাঁচা মরিচের দাম আগের সপ্তাহের চেয়ে বেড়েছে। তবে ঈদের পর সরবরাহ স্বাভাবিক হলে দাম কমে যাবে।
 
এদিকে সরেজমিন বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে অন্যান্য শাকসবজির দাম। প্রতিকেজি টমেটো ৬০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০ টাকা, শসা ৬০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, কচুর লতি ৬০ টাকা, আলু ৪০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, পটোল ৪০ টাকা, কাঁচা আম ৪৫ টাকা ও গাজর বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়।

কোরবানির ঈদের বাকি আর মাত্র হাতে গোনা কয়েক দিন। এর মধ্যেই রাজধানীতে বসতে শুরু করেছে পশুর হাট। আর এতেই চড়া হতে শুরু করেছে মসলার বাজার। প্রতিকেজি জিরার দাম ঠেকেছে ৯০০ টাকা পর্যন্ত।
 
কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জ বাজারের মিজান জেনারেল স্টোরের ব্যবসায়ী ইউসুফ জানান, বাজরে জিরা বিক্রি হচ্ছে ৮৮০ থেকে ৯০০ টাকা কেজি। সপ্তাহ ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৭০ টাকা। গত রোজার ঈদেও জিরার কেজি ছিল ৫০০ টাকা। তবে রোজার ঈদের পর থেকেই বাড়তে শুরু করেছে জিরার দাম।

এ ছাড়া অন্যান্য মসলার দামও বাড়তি বলে জানান ইউসুফ। তিনি বলেন, দারুচিনি ৪৪০ থেকে ৪৫০ টাকা, এলাচ প্রকারভেদে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা, গোলমরিচ ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা, লবঙ্গ ১ হাজার ৭০০ টাকা, আলুবোখারা ৮০০ টাকা, কাজুবাদাম ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা ও ধনিয়া ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
 
তবে ঈদ উপলক্ষে মসলার বেচাকেনা এখনও তেমন বাড়েনি বলে জানান ব্যবসায়ীরা। কেরানীগঞ্জের জিনজিরা বাজারের ব্যবসায়ী নূর ইসলাম বলেন,
ঈদ এসে গেছে; কিন্তু কাস্টমার নাই। সবকিছুর দাম বাড়তি। এর জন্য চাহিদাও কম।
 
এদিকে কেজিতে ৫ টাকা কমেছে দেশি পেঁয়াজের দাম। বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। এ ছাড়া ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। তবে বাড়তি আদা ও রসুনের দাম। প্রতিকেজি আদা প্রকারভেদে ২৮০ থেকে ৩৬০ টাকা ও রসুন প্রকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা।
 
কেরানীগঞ্জের আগানগর কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী সোলেয়মান জানান, ঈদ উপলক্ষে চাহিদা বাড়ায় সামান্য বেড়েছে আদা-রসুনের দাম। আমদানি অব্যাহত রয়েছে। আর আদা ও রসুন পচনশীল কাঁচামাল। এসব মজুত করে লাভ নেই। আমদানি বাড়লেই দাম কমে যাবে।
 
তবে বাজারে সপ্তাহ ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কমেছে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা। বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায়। গত সপ্তাহে যা ছিল ২০০ থেকে ২১০ টাকা। এ ছাড়া সোনালি ২৬০ থেকে ২৭০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা।

বিক্রেতারা জানান, ব্রয়লারের দাম গত সপ্তাহের চেয়ে কমেছে। মূলত বাজারে মুরগির সরবরাহ বাড়ায় ও চাহিদা কম থাকায় দাম কমতির দিকে। আকবর আলী নামে এক বিক্রেতা বলেন,

কোরবানির ঈদ এলে মুরগির চাহিদা কমে যায়। পাশাপাশি প্রচুর জোগান রয়েছে। এতে কমছে দাম।
 
বাজারে প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায়। আর খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়। বিক্রেতারা বলছেন, রোজার ঈদের পর এখনও বাড়েনি গরু ও খাসির মাংসের দাম। এ ছাড়া বাজারে প্রতি ডজন সাদা ডিম ১৩০ টাকা ও লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪৪ টাকায়।

এদিকে বাজারে দেশি মাছের দাম কিছুটা বাড়তি হলেও স্থিতিশীল রয়েছে চাষের ও সামুদ্রিক মাছের দাম। বাজারে প্রতিকেজি দেশি মাগুর ১ হাজার ৩০০ টাকা, দেশি শিং ১ হাজার ৪০০ টাকা, শোল ১ হাজার টাকা, নদীর আইড় ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা এবং নদীর পাঙাশ ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
 
এ ছাড়া প্রতিকেজি টেংরা ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, রুই ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, কাতল ৩৮০ থেকে ৪৩০ টাকা, টুনা ২৫০ টাকা, রূপচাঁদা ৭০০ টাকা, পাবদা ৬০০ থেকে ৮০০, চিংড়ি ৮০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, তেলাপিয়া ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর আকারভেদে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়।
 
নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানিয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই। ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় না। এতে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পায়।
 
আর বিক্রেতারা বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছে করে দাম বাড়াচ্ছে। বাজারে নিয়মিত অভিযান চালালে অসাধুদের দৌরাত্ম্য কমবে।