০১ মে ২০২৪, বুধবার, ০৬:০১:৪৩ অপরাহ্ন


কার্বনডাই অক্সাইডের চাদর জড়িয়ে আছে পৃথিবী !
এম সিয়াম:
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-০৬-২০২৩
কার্বনডাই অক্সাইডের চাদর জড়িয়ে আছে পৃথিবী ! কার্বনডাই অক্সাইডের চাদর জড়িয়ে আছে পৃথিবী !


যে ছবি দেখছেন সেটা পৃথিবীরই। দেখে মনে হচ্ছে গ্যাসপিণ্ড। নাসা গ্লোবাল মডেলিং তাদের কম্পিউটার অ্যালগোরিদমে দূষণে জর্জরিত পৃথিবীর এমন ছবি তৈরি করেছে। বিষ-বাষ্পে ভরে যাচ্ছে পৃথিবী। গ্রিন হাউসের গ্যাসের ঘনত্ব এতটাই যা পৃথিবীর স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরকেও ভেদ করে যাচ্ছে। পৃথিবীর সুরক্ষা কবচ ওজোন স্তরে ছিদ্র হয়েছে বহুদিনই। তা দিন দিন বাড়ছে। পৃথিবীকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরছে কার্বন-ডাই অক্সাইড, কার্বন-মনোক্সাইডের বিষাক্ত বাতাস। বাতাসে যে পরিমাণ কার্বন বাড়ছে তা রীতিমতো উদ্বেগজনক। নাসার কম্পিউটার অ্যালগোরিদম দেখিয়েছে, বিষাক্ত বাষ্পের ঘন চাদর কীভাবে ধীরে ধীরে ঢেকে দিচ্ছে আমাদের নীল গ্রহকে। 

গ্লোবাল মডেলিং তাদের কম্পিউটারে ভিসুয়াইলেজন ইমেজ বানিয়েছে। তবে নাসার বিজ্ঞানীরা বলছেন, উন্নত প্রযুক্তির কম্পিউটার অ্যালগোরিদম বৈজ্ঞানিকভাবেই এই ছবি তৈরি করেছে। বাতাসে বিষাক্ত কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ কতটা এবং কীভাবে তা বায়ুমণ্ডলের স্তরগুলিতে ছড়িয়ে পড়ছে–সবকিছু বিশ্লেষণ করেই এমন ছবি তৈরি হয়েছে।

গবেষকরা বলছেন, মানুষের তৈরি দূষণের কারণেই পরিবেশে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বাড়ছে। বিষ-বাষ্পে ভারী হচ্ছে বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তর। এই স্তরই ছাতার মতো আগলে রাখে পৃথিবীকে। সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মির তেজ থেকে রক্ষা করে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, দূষিত কণা জমতে জমতে কুঁচকে ছোট হয়ে যাচ্ছে বায়ুর এই স্তর। যার প্রভাব পড়ছে ওজোনের চাদরে। কারণে ওজোন স্তরের প্রায় ৯০ শতাংশই বায়ুমণ্ডলের এই স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার লেয়ারের মধ্যে পড়ে।

বাতাসে ভাসমান দূষিত কণা বা অ্যারোসল জমা হচ্ছে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে। যেহেতু বিষাক্ত গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির নির্গমন থেকেই অ্যারোসলের জন্ম হয়, তাই অ্যারোসলের মাধ্যমে দূষণ কণা প্রচুর পরিমাণে পৌঁছে যাচ্ছে ট্রোপোস্ফিয়ার থেকে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে। গাড়ির ধোঁয়া, কারখানার দূষণ, জীবাশ্ম জ্বালি থেকে নির্গত গ্রিনহাউস গ্যাসের কারণে অ্যারোসল কণাগুলি ঘনত্বও বাড়ছে। আর সে কারণেই স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তর এমনভাবে কুঁচকে ছোট হয়ে যাচ্ছে যে ২০৮০ সালের মধ্যে এই স্তরের পরিধি প্রায় ১.৩ কিলোমিটার কমে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, যদি তেমন হয় তাহলে এর সাঙ্ঘাতিক প্রভাব পড়বে ওজোনের চাদরে। সেই সময় পৃথিবীকে দেখলে এমনই মনে হবে। বিষাক্ত গ্যাসের মেঘ জড়িয়ে ধরবে চারদিক থেকে। 

সমীক্ষা বলছে, করোনা আবহে লকডাউনের সময় বাতাসে বিষাক্ত গ্যাসের পরিমাণ অনেকটাই কমে গিয়েছিল। কিন্তু লকডাউনের রাশ আলগা হওয়ার পর থেকে ফের কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা বেড়েছে। বিশ্বজুড়ে বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বেড়েছে ৫০ শতাংশ। গত ২০০ বছরে যেখানে বাতাসে বিষাক্ত কার্বনের মাত্রা বেড়েছিল মাত্র ২৫ শতাংশ, সেখানে মাত্র ৩০ বছরেই বিষাক্ত বাষ্পের মাত্রা দ্বিগুণ হয়েছে। 

১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে পদার্থবিদ জন টিন্ডাল পরিবেশের অন্যতম প্রধান শত্রু কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসকে চিহ্নিত করেছিলেন। তিনি পরীক্ষা করে দেখিয়েছিলেন, সূর্যের আলো এবং তাপ বায়ুমণ্ডল ভেদ করে পৌঁছয় পৃথিবীর মাটিতে। মাটি উত্তপ্ত হয়। এবং তাপ ছাড়ে। সে তাপ ফেরত যেতে পারে না মহাশূন্যে। বাতাসে উপস্থিত কার্বন ডাই-অক্সাইড তা শুষে নেয়। ফলে বাতাস গরম হয়ে ওঠে। সেই তাপ আবার ফেরত যায় মাটিতে। এটাই গ্রিনহাউস এফেক্ট। এই কারণেই বিশ্ব উষ্ণায়ণে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করেছে। গবেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, পৃথিবীর বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইডের যা পরিমাণ, সেটা বেড়ে দ্বিগুণ হলে পৃথিবীর উষ্ণতা বাড়বে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জলবায়ু বদলের ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়বে জীবজগতের ওপরে।