২৯ এপ্রিল ২০২৪, সোমবার, ১০:০৮:৩৫ পূর্বাহ্ন


পদ্মা সেতু বিশ্বব্যাংকের ধারণা পাল্টে বছরে আয় ৮০০ কোটি টাকা
অনলাইন ডেস্ক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-০৬-২০২৩
পদ্মা সেতু বিশ্বব্যাংকের ধারণা পাল্টে বছরে আয় ৮০০ কোটি টাকা স্বপ্নজয়ের এক বছরে টোল আদায় হয়েছে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। ছবি: সময় সংবাদ


স্বপ্নের সঙ্গে বাস্তবতার এক অভূতপূর্ব সমন্বয়ের নাম পদ্মা সেতু। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থারই উন্নয়ন ঘটায়নি, বেড়েছে এসব অঞ্চলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। স্বপ্নজয়ের এক বছরে টোল আদায় হয়েছে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। আর এ আয় থেকে ৬৩২ কোটি ৯৩ লাখ টাকার ঋণ পরিশোধ করেছে সেতু কর্তৃপক্ষ।

সামনে আয়ের পরিমাণ আরও বাড়বে। আর সেতুর প্রভাবে দেশের অর্থনীতিতে যে গতি এসেছে তা আরও সম্প্রসারিত হবে। পদ্মা সেতুর এক বছরপূর্তি নিয়ে সম্প্রতি সময় সংবাদের সঙ্গে কথা হয়েছে সেতু সংশ্লিষ্টদের।

২০২২ এর ২৫ জুন, ইতিহাসে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা বাংলাদেশে। স্বপ্নযাত্রা এসে মিশে স্বপ্নজয়ে। নানা চড়াই-উতরাই পার করে এ অসম্ভবকে সম্ভব করা হয় বাঙালির নিজের টাকায়। আর একদিন ছাড়া ২৬ জুন বাণিজ্যিক চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয় স্বপ্নের সেতুতে। 
 
প্রাথমিকভাবে বিশ্বব্যাংকের ধারণায় এই সেতুতে প্রতিদিন গড়ে ৭ হাজার যান চলাচলের ধারণ করা হলেও বাস্তবে এখন প্রতিদিন ১২ থেকে ১৪ হাজার গাড়ি প্রতিদিন চলাচল করছে। অর্থাৎ গত এক বছরে এই সেতু পাড়ি দিয়েছে ৫৬ লাখ ৫৪ হাজারের বেশি বাহন, যা থেকে এক বছরে আয় হয়েছে ৭৯৪ কোটি টাকারও বেশি।
 
সেতু সচিব মনজুর হোসেন বলেন, এক বছরে চারটি করে কিস্তি হবে, মোট ৩৫ বছরে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে। প্রথম বছরে যে ঋণ পরিশোধ করার ছিল, সেটা আমরা এদিন (২৫ জুন) আসার আগেই পরিশোধ করে দিয়েছি। প্রত্যাশা যেটা ছিল, যেটা আতঙ্ক ছড়ানো হয়েছিল তার চেয়ে কিন্তু বাস্তবে অনেক বেশি উপকার দিচ্ছে পদ্মা সেতু।  
 
তবে অপ্রতিরোধ্য এ অগ্রযাত্রা এখন তো কেবলই শুরু। প্রতিদিনই এই পথে যানবাহনের সংখ্যা বড়ছে। যার কারণ হিসেবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে নতুন নতুন শিল্পায়ন ও নানা রকম অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকেই সামনে আনছেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে শুধু সেতুর আয় নয়, এরই মধ্যে বেড়েছে ওইসব অঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থাও।
 
সাবেক সেতু সচিব বেলায়েত হোসেন বলেন, আমাদের জিডিপিতে ওয়ান পয়েন্ট টু পারসেন্ট অ্যাড করবে, সেটা আমি মনে করি। প্রত্যাশা এবং প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির সেটা সম্মিলন ঘটেছে পদ্মা সেতু। অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমাদের যে প্রত্যাশা ছিল, আমি মনে করি, প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তি এটার মধ্যে একটা সুন্দর সম্মিলন ঘটেছে।  
 
এখনো সেতু এলাকায় প্রমত্যা পদ্মা বশে আনতে নদীশাসনের বেশকিছু কাজ বাকি। তবে এরই মধ্যে আরও এক দফায় এক হাজার ৫২৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা বাড়ানো হয়েছে এই সেতুর নির্মাণ ব্যয়ে। যা মূলত ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণেই হয়েছে বলে জানান প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা।
 
পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, মূল সেতুর কাজের টার্গেট জুন ২০২৩। আমরা কাজ শেষ করব। যে কাজটা বাদ থাকবে সেটা হয়তো পয়েন্ট টু বা থ্রি পারসেন্ট।
 
কোটি বাঙালির গর্বের প্রতীক স্বপ্ন সংযোগ পদ্মা সেতুর নেয়া শতবছর বলা হলেও আধুনিক স্থপত্য নির্মাণশৈলীর কারণে দেড়শ’ বছরেও এ সেতুর কিছু হবে না বলেই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
 
পদ্মা সেতুর নির্মাণ
 
বাংলাদেশের ইতিহাসে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ ছিল সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং কাজ। দুইস্তর বিশিষ্ট ইস্পাত ও কংক্রিট নির্মিত এই সেতুর ওপরের স্তরে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরে একটি একক রেলপথ রয়েছে। পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর অববাহিকায় তৈরি সেতুটি ৪১টি স্প্যান নিয়ে গঠিত, প্রতিটি স্প্যান লম্বায় ১৫০ দশমিক ১২ মিটার বা ৪৯২ দশমিক ৫ ফুট এবং চওড়ায় ২২ দশমিক ৫ মিটার বা ৭৪ ফুট। সেতুটির মোট দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার বা ৩ দশমিক ৮২ মাইল। এটি বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু। ১২০ মিটার বা ৩৯০ ফুট গভীরতাযুক্ত বিশ্বের গভীরতম পাইলের সেতু এটি।
 
 পদ্মা সেতুর ঋণ পরিশোধ
 
পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের জন্য নেয়া ঋণের ৩য় ও ৪র্থ কিস্তির ৩১৬ কোটি ২ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩ টাকা পরিশোধ করেছে সেতু কর্তৃপক্ষ। ১৯ জুন (সোমবার) সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিনের কাছে এ টাকা তুলে দেন সেতু সচিব মো. মনজুর হোসেন।

এর আগে, গত ৫ এপ্রিল  ১ম ও ২য় কিস্তির মোট ৩১৬ কোটি ৯০ লাখ ৯৭ হাজার ৫০ টাকা পরিশোধ করা হয়। এর ফলে প্রথম বছরে সর্বমোট ৬৩২ কোটি ৯৩ লাখ ৬৬ হাজার ১৪৩ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।

পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। নির্মাণ ব্যয়ের প্রায় পুরো অর্থ বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষকে ঋণ হিসেবে দিয়েছে অর্থ বিভাগ।