‘দেশে বহু রাস্তা হলো, কিন্তু এটি আজও ঠিক হলো না। আমরা ঠিকমতো মালপত্র পরিবহন করতে পারি না। এতে আমাদেরও কষ্ট, গেরস্তদেরও কষ্ট। ভ্যান চালিয়ে যে টাকা কামাই করি, তার অর্ধেক চলে যায় গাড়ি সারাতে।’ কথাগুলো বলছিলেন ভ্যানচালক আবুল হাশেম। অটোবাইকচালক জয়দর আলী ও মোতালেব হোসেনের ভাষ্য, তারা কষ্টের টাকায় গাড়ি কিনেছেন। কিন্তু সড়ক খারাপ হওয়ায় নষ্ট হয়ে যায়। কয়েক দিন পরপর মেরামত করতে হচ্ছে।
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার বনগ্রাম হাট-কুমিরগাড়ী সংযোগ সড়কের অধিকাংশ স্থান খানাখন্দে ভরে গেছে। নির্মাণের পর গত ২১ বছর সংস্কার না করায় সড়কটির অবস্থা বেহাল। এতে অন্তত ১০টি গ্রামের মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, আর-আতাইকুলা ইউনিয়নের বনগ্রাম হাট থেকে কুমিরগাড়ী পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার সড়ক ২০০২ সালে পাকা করা হয়।
সরেজমিন ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় সড়কটির বেশির ভাগ স্থানে কার্পেটিং উঠে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ইট-বালু আলাদা হয়ে অনেক স্থানের মাটিও বের হয়ে গেছে। একটি গাড়ি আরেকটিকে অতিক্রম করতে পারে না। হেলেদুলে চলে ভ্যান ও অন্যান্য যানবাহন। এতে কুমিরগাড়ী, বিশ্বাসপাড়া, দাসপাড়া, দীঘলাপাড়া, ফকিরপাড়া, মধ্যপাড়া, পদ্মবিলা, মোল্লাপাড়া, দহেরপাড়া, কামারদুলিয়াসহ ১০ গ্রামের মানুষের চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, কৃষক, ভ্যান ও অটোবাইক চালকরাও।
পদ্মবিলা গ্রামের হারুনর রশীদ হারু বলেন, কৃষিপ্রধান এলাকার কৃষিপণ্য হাটে নিতে কষ্ট হয়। সড়কটি দিয়ে চলাচলের সময় প্রায়ই ভ্যান ও অটোবাইক উল্টে যায়। খানাখন্দে ভরা সড়কে বৃষ্টি হলে পানি জমে। তখন যাতায়াতের আর উপায় থাকে না। মিনাজ উদ্দিন, আবুল কালামসহ কয়েকজন কৃষক জানান, তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বিক্রির জন্য এ পথ দিয়েই বনগ্রাম হাটে যেতে হয়। কিন্তু ভাঙাচোরা সড়কের কারণে ভ্যানচালকরা যেতে চান না। গেলেও অনেক কষ্ট হয়। দ্রুত সড়কটি সংস্কার করা দরকার।
এলাকার বহু ছাত্রছাত্রী মিয়াপুর হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ, দাখিল মাদ্রাসা, বনগ্রাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে বলে জানান পদ্মবিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহীদুল ইসলাম। তাঁর ভাষ্য, শিক্ষকসহ ছাত্রছাত্রীদের চলাচলে কষ্ট হচ্ছে। এ রাস্তা দিয়ে হেঁটেও যাওয়া যায় না। ভ্যান-অটোবাইকে উঠলে ঝাঁকি খেতে খেতে পেটে ব্যথা হয়ে যায়।
আর-আতাইকুলা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শাহীন খান বলেন, তিনি সড়ক সংস্কারের দাবি করতে করতে হয়রান হয়ে গেছেন। এখন স্থানীয়দের নিয়ে রাস্তায় নেমে আসা ছাড়া পথ নেই।
এলজিইডির সাঁথিয়া উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ বলেন, সড়কটি নির্মাণের পর সংস্কার না করায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে। এটি পরিদর্শন করেছেন। প্রাক্কলন তৈরি করে অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হবে।