০২ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৭:১৩:০৮ অপরাহ্ন


তিন বছর সংসারের পর স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-১০-২০২৩
তিন বছর সংসারের পর স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা বিয়ের দিন কনের সঙ্গে বর মামুন নবী খান। ছবি: সংগৃহীত


সরকারি চাকরিজীবী মামুন নবী খান (৩৪) বিয়ে করেন ২০২০ সালের ৩ জুলাই। তিনি সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কালিয়া গ্রামের বাসিন্দা। মেয়ে সাগরিকার (ছদ্মনাম) বাড়ি পার্শ্ববর্তী কান্দাপাড়ায়। ২০২০ সালের ৩ জুলাই বিয়ে করলেও মেয়েকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘরে তুলে নেন ২০২২ সালের ১৪ জানুয়ারি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিয়ের তিন বছরের মাথায় মেয়ে বাবার বাড়ি চলে যায়। এরপর ফিরে না আসায় মামুন তাকে ডিভোর্স লেটার পাঠান। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করে মেয়ের পরিবার।

বিয়ের পর থেকে মেয়ে অন্য এক ছেলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে বলে অভিযোগ মামুনের। তিনি বলেন, বিয়ের আগে থেকেই অন্য এক ছেলের সঙ্গে মেয়ের সম্পর্ক ছিল। সেটা গোপন করে আমার সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের পরও সে গোপনে ওই ছেলের সঙ্গে কথা চালিয়ে যেতে থাকে। এক পর্যায়ে আমি বিষয়টি টের পেয়ে তার মা-বাবাকে অবহিত করি। তারা বিষয়টি স্বীকারও করেন। এরপর হঠাৎ গত ১ জানুয়ারি তারা আমার বাড়ি এসে মেয়েকে নিয়ে চলে যান। এরপর আর আমার বাড়িতে মেয়েকে পাঠাননি।

মামুন বলেন, ‘আমি বিষয়টি পারিবারিকভাবে মীমাংসার চেষ্টা করেছি অনেকবার। এ নিয়ে স্থানীয় মাতব্বরদের নিয়ে বেশ কয়েকবার সালিশ হয়েছে। কিন্তু মেয়ের পরিবার কোনোভাবেই মীমাংসা করতে রাজি হয়নি। এভাবে ছয় মাস গেলে আমি ডিভোর্স দেওয়ার সিদ্ধান্তে নিই। গত ৬ জুন মেয়ের বাড়ি ডিভোর্স লেটার পাঠাই। এরপর ২৭ জুলাই তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ধর্ষণ মামলা দেয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি সরকারি চাকরি করি। মেয়ের বয়স ১৮ পূর্ণ না হওয়ায় কাবিননামা করার সুযোগ ছিল না। এ সুযোগে মেয়ের বাবা-মা এবং চাচা স্থানীয় ইউপি সদস্য হওয়ায় আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার চেষ্টা করছে। তাদের উদ্দেশ্য আমি যেন চাকরি করতে না পারি।’

ছেলের পরিবার সূত্রে জানা যায়, আনুষ্ঠানিকভাবে মেয়েকে আংটি পরানো থেকে শুরু করে বিয়ের অনুষ্ঠান ও বাসরঘরের ছবিও রয়েছে। শুধু তাই নয়, বিয়েতে স্থানীয় দুই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. আকতার শেখ বলেন, ২০২০ সালে তাদের বিয়ে হলেও শুনেছি মেয়ের পরিবার মামুনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দিয়েছে। বিয়ের পর স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করা যায় কি না আমার জানা নেই। তবে মেয়ের পরিবারের উদ্দেশ্য ছেলেটা যেন চাকরি করতে না পারে।

মামুন নবী খানের মা বলেন, বিয়ের পর থেকে মেয়ে অন্য একটা ছেলের সঙ্গে ফোনে কথা বলতো। সে আমার ছেলের সঙ্গে প্রায়ই ঝগড়া করতো। সংসারের প্রতি তার মনোযোগ ছিল না। আমাদের সঙ্গেও তেমন কথা বলতো না। এ বিষয়ে তার মা-বাবাকে বারবার জানানো হলেও কোনো কাজে আসেনি। উল্টো তারা এসে মেয়েকে নিয়ে আর ফেরত পাঠায়নি।

ছেলের বাবা আবু মুছা খান বলেন, মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার পর আর ফেরত পাঠায়নি। ছয় মাস পার হলে আমার ছেলে তাকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দেয়। পরে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে আমার ছেলের বিরুদ্ধে মিথ্যা ধর্ষণ মামলা করে। আমরা বিষয়টি মীমাংসার জন্য অনেকবার চেষ্টা করেছি কিন্তু মেয়ের চাচা স্থানীয় মেম্বার হওয়ায় তারা আমাদের নানাভাবে হয়রানি করছে।

এ বিষয়ে মেয়ের বাবা আল-আমিন মন্ডল বলেন, মেয়েকে ডিভোর্স দেওয়ার পর আমার ভাইয়ের (ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম মন্ডল) পরামর্শে মামলা করা হয়েছে। এসব বিষয়ে ভাই ভালো বলতে পারবে, আমি আর কিছু বলতে পারবো না।

মেয়ের চাচা স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম মন্ডল বলেন, বিষয়টি নিয়ে মামলা চলছে। এ অবস্থায় কিছু বলতে পারবো না।

কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সাইফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি মীমাংসার জন্য প্রায় এক মাস আগে আমরা মুরব্বিদের নিয়ে বসেছিলাম। বিয়ের সময় মেয়ের পরিবার ছেলেকে তিন লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়েছিল। বিয়ের দেনমোহর ছিল ৭ লাখ টাকা। এজন্য আমরা ছেলেপক্ষকে ৭ লাখ টাকা দিতে বলেছিলাম। কিন্তু মেয়েপক্ষ সেটা মানেনি। লোকমুখে শুনেছি তারা নাকি ওই ছেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করেছে।

এ প্রসঙ্গে কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সবুর বলেন, ওই মেয়েকে ডিভোর্স দেওয়ার পর ছেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করেছে শুনেছি। তবে তাদের বিষয়টি নিয়ে উভয়পক্ষের দফায় দফায় বসা হলেও আমি উপস্থিত ছিলাম না।

তাদের বিয়ে পড়ান স্থানীয় মসজিদের ইমাম ও কান্দাপাড়া হাটখোলার বিসমিল্লাহ ফার্মেসির স্বত্বাধিকারী হোমিও চিকিৎসক হাসান আলী। তিনি বলেন, উভয় পরিবারের সম্মতিতেই বিয়ে হয়েছিল। আমি নিজে বিয়ের কালেমা পড়িয়েছি। কিন্তু মেয়ের বয়স কম হওয়ায় ওই সময় কাবিন হয়নি। শুনেছি ওই ছেলের বিরুদ্ধে নাকি মেয়ের পরিবার মিথ্যা মামলা দিয়েছে।

সিরাজগঞ্জ জেলা জজ আদালতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন এ বিষয়ে বলেন, বাংলাদেশে বাল্যবিয়ে নিষিদ্ধ হলেও বিশেষ ক্ষেত্রে ‘সর্বোত্তম স্বার্থে’ আদালতের নির্দেশে ও বাবা-মায়ের সম্মতিতে যে কোনো অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের বিয়ে হতে পারে। আইনের এই ফাঁকটিই ব্যবহার করছেন অভিভাবকরা। কারণ আমাদের সমাজে এখনো ১১ থেকে ১২ বছর বয়সের বিয়েটাকেই বাল্যবিয়ে বলে মনে করা হয়। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী ১৬ বছর পর্যন্ত শিশু। অথচ জাতিসংঘের হিসাবে ১৮ বছর পর্যন্ত। আবার বিয়ে হলে ১৩ বছর বয়সের স্ত্রীর সঙ্গে বাধ্যতামূলক যৌন সম্পর্ক করাটা বৈধ। আইনে বলা হচ্ছে, বিবাহিত সম্পর্কের মধ্যে কোনো স্বামী যদি ১৩ বছরের কোনো মেয়েকে নিজের স্ত্রী হিসেবে জোর করে যৌন সম্পর্কে বাধ্য করে, তবে সেই মেয়েটি ধর্ষণের কোনো মামলা করতে পারবে না।