১৯ মে ২০২৪, রবিবার, ০৬:৪১:৪৪ অপরাহ্ন


নেক আমলে জীবনসঙ্গীর সহযোগী হোন
ধর্ম ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-১০-২০২৩
নেক আমলে জীবনসঙ্গীর সহযোগী হোন ফাইল ফটো


আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ সেই পুরুষের ওপর রহম করুন যে রাতে উঠে নামাজ পড়ে এবং তার স্ত্রীকেও জাগায়, তারপর সেও নামাজ পড়ে। স্ত্রী না উঠতে চাইলে তার চেহারায় পানি ছিটিয়ে দেয়। আল্লাহ ওই নারীর ওপর রহম করুন, যে রাতে উঠে নামাজ পড়ে এবং তার স্বামীকেও জাগায়, আর সেও নামাজ পড়ে। স্বামী না উঠতে চাইলে সে তার চেহারায় পানি ছিটিয়ে দেয়। (সুনানে ইবনে মাজা, মুসনাদে আহমদ)

এ হাদিস থেকে যে শিক্ষাগুলো আমরা পাই

১. স্বামী যদি রাতে নামাজের জন্য জাগে, তাহলে স্ত্রীকে জাগানো মুস্তাহাব। স্ত্রী যদি জাগে, তাহলে তার জন্যও স্বামীকে জাগানো মুস্তাহাব। সাহাবি ও তাবেঈদের অনেকে খুব আগ্রহ নিয়ে এ আমল করতেন। আবু উসমান নাহদি বলেন, আমি সাত দিন আবু হোরায়রার (রা.) বাড়িতে মেহমান ছিলাম। তিনি, তার স্ত্রী ও তার খাদেম তিন ভাগে ভাগ করে রাতে ইবাদত করতেন। একজন নামাজ শেষ করে আরেকজনকে জাগিয়ে দিতেন। (সহিহ বুখারি) আবু আব্দুর রহমান ইবনে যুবাইদ ইবনে হারেস বলেন, আমার বাবা যুবাইদ ইবনে হারেস (রহ.) রাত তিন ভাগে ভাগ করতেন। এক ভাগে নামাজ পড়ার দায়িত্ব থাকতো তার ওপর, এক ভাগে আমার ওপর, এক ভাগে আমার ভাইয়ের ওপর। তিনি রাতের এক তৃতীয়াংশ সময় নামাজ পড়ে আমাকে ডাকতেন, যদি দেখতেন আমি উঠতে অলসতা করছি, তিনি বলতেন, ঘুমাও, তোমার অংশে আমি নামাজ পড়বো। তারপর কিছুক্ষণ নামাজ পড়ার পর আমার ভাইকে ডাকতেন, সেও যদি উঠতে অলসতা করতো, তাহলে তিনি বলতেন, ঘুমাও, তোমার অংশেও আমি নামাজ পড়বো। এভাবে সকাল পর্যন্ত তিনি নামাজে দাঁড়িয়ে থাকতেন। (সিফাতুস-সাফওয়া)

২. রাসুল (সা.) আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন, আমরা যেন শুধু নিজেরা নেক আমল না করি, অন্যকেও নেক আমল করার ব্যাপারে উৎসাহ দেই, নেক আমলে পরস্পরের সহযোগী হই। মানুষের সবচেয়ে কাছের মানুষ তার জীবনসঙ্গী, স্বামী বা স্ত্রী। হাদিসে বলা হয়েছে তাদের একজন জেগে নামাজ পড়লে যেন আরেকজনকেও জাগিয়ে দেয়। সেও যেন তার সাথে নামাজ পড়ে ও দোয়ায় শরিক হয়। আল্লাহ বলেছেন,

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا قُوۡۤا اَنۡفُسَکُمۡ وَ اَهۡلِیۡکُمۡ نَارًا وَّ قُوۡدُهَا النَّاسُ وَالۡحِجَارَۃُ عَلَیۡهَا مَلٰٓئِکَۃٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَّا یَعۡصُوۡنَ اللّٰهَ مَاۤ اَمَرَهُمۡ وَ یَفۡعَلُوۡنَ مَا یُؤۡمَرُوۡنَ

হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজেদের ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে আগুন থেকে বাঁচাও যার জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর; যেখানে রয়েছে নির্মম ও কঠোর ফেরেশতারা, আল্লাহ তাদেরকে যে নির্দেশ দিয়েছেন তারা সে ব্যাপারে তার অবাধ্য হয় না। আর তারা তা-ই করে যা তাদেরকে আদেশ করা হয়। (সুরা তাহরিম: ৬)

৩. পরিবারকে ভালো কাজে সাহায্য করার সুফল দুনিয়া ও আখেরাতে পাওয়া যাবে। আল্লাহ বলেছেন,

وَ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ وَ الۡمُؤۡمِنٰتُ بَعۡضُهُمۡ اَوۡلِیَآءُ بَعۡضٍ ۘ یَاۡمُرُوۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ یَنۡهَوۡنَ عَنِ الۡمُنۡکَرِ وَ یُقِیۡمُوۡنَ الصَّلٰوۃَ وَ یُؤۡتُوۡنَ الزَّکٰوۃَ وَ یُطِیۡعُوۡنَ اللّٰهَ وَ رَسُوۡلَهٗ ؕ اُولٰٓئِکَ سَیَرۡحَمُهُمُ اللّٰهُ اِنَّ اللّٰهَ عَزِیۡزٌ حَکِیۡمٌ

আর মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীরা একে অপরের বন্ধু, তারা ভাল কাজের আদেশ দেয় আর অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করে, তারা নামাজ কায়েম করে, জাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য করে। এদেরকে আল্লাহ শীঘ্রই রহম করবেন, নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সুরা তাওবা: ৭১)

এ আয়াতেও আল্লাহ মুমিন নারী পুরুষদের পরস্পরের সহযোগী বলেছেন এবং তার রহমতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। উল্লিখিত হাদিসটি এ আয়াতেরই অনুরণন।