০৩ মে ২০২৪, শুক্রবার, ০৭:২০:২৭ অপরাহ্ন


রাজশাহী মহানগরীতে পুকুর ভরাট করে হচ্ছে দুই কর্মকর্তার আবাসিক কোয়ার্টার
অনলাইন ডেস্ক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-১০-২০২৩
রাজশাহী মহানগরীতে পুকুর ভরাট করে হচ্ছে দুই কর্মকর্তার আবাসিক কোয়ার্টার রাজশাহী মহানগরীতে পুকুর ভরাট করে হচ্ছে দুই কর্মকর্তার আবাসিক কোয়ার্টার


উচ্চ আদালতের নিষেধজ্ঞা অমান্য করে রাজশাহী নগরীর শালাবাগান এলাকায়পুকুর ভরাট করে সড়ক ও জনপথ বিভাগের দুই কর্মকর্তার জন্য কোয়ার্টার নির্মাণ করা হচ্ছে। এর জন্য ব্যয় করা হচ্ছে আড়াই কোটি টাকা। গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে সেখানে দোতলা ডুপ্লেক্স দুটি বাসভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। তবে ওই ভবন নির্মাণের জন্য রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কোনো অনুমোদনও নেওয়া হয়নি। এমনকি পুকুর ভরাট করে জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্যেও অনুমোদন নেওয়া হয়নি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগ, অনেকটা গায়ের জোরে সড়ক ও জনপথ অধিপ্তরের রাজশাহী জোনের প্রথম সারির কারখানা ও আবাসিক এলাকার মধ্যে লোকচক্ষুর আড়ালে ওই পুকুরটি গোপনে ভরাট করা হয়েছে। এর পর সেখানে জমির শ্রেণি পরির্তন ছাড়ায় গড়ে তোলা হচ্ছে আবাসিক দুটি ভবন। এর জন্য পুকুর পাড়ে নারিকেল, কাঁঠাল, আমসহ বিভিন্ন প্রজাতির শতাধিক গাছও কেটে ফেলা হয়েছে। এসব নিয়ে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দু’জন উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর জন্য কোয়ার্টার দুটি নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তুভরাটকৃত পুকুরের পাশেই উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীদের জন্য আগে থেকেই সরকারী কোয়ার্টার রয়েছে। কর্মকর্তারা সেখানে না থাকায় অধিকাংশ সময় কোয়ার্টারগুলো ফাঁকা পড়ে থাকে। ফলে নিয়মে না থাকলেও এসব কোয়ার্টারে একজন গাড়িচালক এবং একজন কর্মচারীর জামাতা থাকেন। উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীদের পরিবর্তে তাঁরা এখানে থাকার কারণে প্রতি বছর মোটা অংকের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। এখন উল্টো দুই কর্মকর্তার জন্য দুটি কোয়ার্টার নির্মাণ করতে ব্যয় করা হচ্ছে প্রায় আড়াই কোটি টাকা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শালবাগান এলাকায় সওজের একটি অফিসের পাশাপাশি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য রয়েছে আবাসিক এলাকা। এর উত্তর পাশে বিশাল এলাকাজুড়ে রয়েছে মসজিদ, নির্বাহী প্রকৌশলীর বাসভবন এবং গ্যারেজ। গ্যারেজের উত্তর-পূর্ব কোণে থাকা প্রায় এক বিঘা আয়তনের পুকুরটি মাস দুয়েক আগে গোপনে বালু দিয়ে ভরাট করে ফেলা হয়েছে। এখন সেখানে কোয়ার্টার নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। নির্মাণকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকেরা ও একই এলাকার মানিক ও রাসেল নামের দুজন ঠিকাদার এই কাজ করছেন। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সওজের এক কর্মচারী জানান, কোয়ার্টার দুটি নির্মাণে বিপুল টাকা ব্যয় ধরা করা হচ্ছে। কিন্তু পুকুর ভরাট করে ভবন গড়ে তুলা কাজের জন্য পিলার করা হচ্ছে না। ফলে ভবনটি হবে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। অল্প একটু মাটি খুঁড়ে ইট দিয়ে এর দেয়াল তোলা হচ্ছে।

জানতে চাইলে সওজের রাজশাহীর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হাকিম বলেন, ‘কোয়ার্টার নির্মাণের জন্য আরডিএ থেকে প্ল্যান পাস করানো হয়েছে কি না তা আমার জানা নেই। আবার পুকুর ভরাটের কারণে ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করা হয়েছে কি না সেটিও বলতে পারব না। তবে মনে হয় অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। আমার আগেই এ কাজের জন্য বরাদ্দ নেওয়া হয়েছিল। এখন সেটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দুটি কোয়ার্টার নির্মাণেই ব্যয় হচ্ছে প্রায় আড়াই কোটি টাকা।’

নগরীর বোয়ালিয়া রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহীন মিয়া বলেন, ‘আইনে পুকুর ভরাট নিষিদ্ধ। সরকারী সংস্থা পুকুর ভরাট করে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করলেও জেলা প্রশাসনে আবেদন করতে হবে। এ ধরনের কোন আবেদন সওজ করে থাকলে তদন্তের জন্য আমার কাছে আসতো। আমি কিছু জানি না। নায়েবকে পাঠিয়ে বিষয়টি দেখছি।’

জানতে চাইলে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) অথরাইজড অফিসার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আবাসিক ভবন নির্মাণের জন্য সওজ কোন প্ল্যান পাস করেছে বলে জানা নাই। তারা পুকুর ভরাট করে কীভাবে ভবন নির্মাণ করছে সেটা খোঁজ নেওয়া হবে। নগরীতে পুকুর ভরাটের কোনো সুযোগ নাই। আবার জমির শ্রেণি পরবির্তনের কোনো সুযোগ নাই।

উল্লেখ্য, রাজশাহী শহরে থাকা ১৬৫টি পুকুরে যেন দখল বা মাটি ভরাট না করা হয় তা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। 

২০২২ সালের ৮ আগস্ট দেওয়া এমন রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের খবর সোমবার (৩১ জুলাই ২০২৩) জানিয়েছেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

রাজশাহীতে পুকুর ভরাট ও দখল নিয়ে ২০১৪ সালে সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় জনস্বার্থে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে একটি রিট দায়ের করা হয়। 

ওই রিটের দীর্ঘ শুনানি শেষে রুল যথাযথ ঘোষণা করে গত বছরের ৮ আগস্ট রায় দেওয় হয়।

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানান, রায়ে ৪ দফা নির্দেশনা হাইকোর্ট। এক.অবিলম্বে এবং ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করে ১৬৫টি পুকুরের একটি পুকুরের একটিও যেন দখলমাটি ভরাট না করা হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।

দুই. পুকুরগুলোকে তাদের আসল প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বজায় রাখা নিশ্চিত করতে হবে।

তিন. এটি চলমান মামলা থাকবে যেন পুনরায় ভবিষ্যতে পুকুর দখলমাটি ভরাট না করা হয়।

চার. অবিলম্বে এবং ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করে বিখ্যাত সুকান দিঘিকে তার আদি প্রকৃতিতে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে এবং দিঘির দখলকৃত অংশ পুনরুদ্ধার করতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।