২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ০৮:১৯:৩৭ পূর্বাহ্ন


চারঘাটে মসজিদ কমিটির আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের সংঘর্ষ: নিহত ১, আহত ১৫জন, আটক- ১৮
চারঘাট (রাজশাহী) প্রতিনিধি:
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০৪-২০২২
চারঘাটে  মসজিদ কমিটির আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে  দুপক্ষের সংঘর্ষ: নিহত ১, আহত ১৫জন, আটক- ১৮ চারঘাটে মসজিদ কমিটির আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের সংঘর্ষ: নিহত ১, আহত ১৫জন, আটক- ১৮


রাজশাহীর চারঘাটে মসজিদ কমিটির আধিপত্য বিস্তার ও ইফতার নিয়ে কটুক্তি করাকে কেন্দ্র করে মসজিদ কমিটির বর্তমান সভাপতি ও সাবেক  সভাপতি গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়া এবং সংঘর্ষের ঘটনায়  খোকন আলী (৩০) নামের এক ব্যাক্তি নিহতের ঘটনায় চারঘাট মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

বর্তমান সভাপতি এএইচএম কামরুজ্জামান ওরফে মুকুল হোসেনকে প্রধান আসামী করে ৩৮ জনের নাম উল্লেখ এবং ১০/১২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে হত্যা মামলাটি দায়ের করেছেন নিহত খোকনের স্ত্রী রুপা বেগম। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ১৮ জনকে আটক করা হয়েছে। মুল আসামী মুকুলসহ অন্য আসামীরা পলাতক রয়েছে। 

শনিবার সকালে সরজমিনে জোতকার্ত্তিক এলাকায় গিয়ে দেখা যায় এলাকাটি অনেকটা পুরুষ শুণ্য হয়ে পড়েছে। গ্রেফতার আতঙ্কে এলাকায় 

অনেকেই আত্মগোপনে রয়েছেন। 

স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার নিমপাড়া ইউনিয়নের জোতকার্ত্তিক জামে মসজিদ কমিটির বর্তমান সভাপতি কামরুজ্জামান ওরফে মুকুল হোসেন পক্ষের সঙ্গে সাবেক সভাপতি আসাদুল ইসলাম সেলিম পক্ষের কমিটির আধিপত্য বিস্তার এবং মসজিদের ইমাম সাহেবকে বাদ দেয়া নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল।

বিরোধ নিস্পত্তির জন্য স্থানীয় ভাবে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও মুকুল পক্ষ বরাবরই উগ্র হয়ে উঠায় তা আর নিস্পত্তি হয়ে উঠেনি। এক পর্যায়ে সেলিম পক্ষের লোকজন বিরোধপুর্ণ মসজিদে নামাজ আদায় থেকে বিরত থেকে ওই এলাকার একটি আম বাগানে অস্থায়ী ভিত্তিতে মসজিদ নির্মান করে নামাজ আদায় করে আসছিল।

শুক্রবার বিকেলে আম বাগানে নির্মিত নতুন মসজিদে সেলিম পক্ষের লোকজন ইফতারের আয়োজনে রান্না বান্না করার সময় মুকুল পক্ষের লোকজন ইফতার নিয়ে যাত্রা পালার খাবারের আয়োজন করছে এমন কটুক্তি করলে সেলিম পক্ষের লোকজন মুকুল পক্ষের লোকজনকে ধাওয়া দেয়। পরে ধাওয়া খেয়ে তারা পালিয়ে গিয়ে সেলিম পক্ষের হান্নান আলী নামের এক ব্যাক্তিকে মারপিট করে। এসময় হান্নান আলীর স্ত্রী ও মেয়ে এগিয়ে গেলে তাদেরও মারপিট করে আহত করা হয়। 

এ সংবাদ সেলিম পক্ষের লোকজন জানতে পেরে হান্নানকে উদ্ধারেএগিয়ে গেলে দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। 

এতে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ১৫জন আহত হয়। আহতদের উদ্ধার করে চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সেলিম পক্ষের খোকন আলীকে মৃত ঘোষনা করেন এবং আহতদের মধ্যে ৭জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। অন্যদের চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। 

এ দিকে সরজমিনে ঘটনাস্থল জোতকার্তিক এলাকায় গেলে স্থানীয় তরিকুল ইসলাম ও সাহাবুর রহমানসহ একাধিক ব্যাক্তি জানান, ২০২০ সালের জুন মাসে সাবেক সভাপতি আসাদুল ইসলাম সেলিম দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার পরে ওই বছরের নভেম্বর মাসে বিরোধপুর্ণ মসজিদের ইমামকে বাদ দেয় বর্তমান সভাপতি মুকুল হোসেন। এ বিষয়টি সাবেক সভাপতিসহ ওই এলাকার অনেকেই মেনে নিতে পারেননি। এতে দুপক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছিল। বিষয়টি নিস্পত্তির জন্য সাবেক সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ উপজেলা চেয়ারম্যানকে লিখিত ভাবে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। কিন্তু এতেও সমস্যার সমাধান হয়নি। ফলে বিরোধ আরোও জটিল হতে থাকে। এক পর্যায়ে শুক্রবার সংঘর্ষের ঘটনায় একচজন মারা গেলেন। 

বিষয়টি সম্পর্কে উপজেলা চেয়ারম্যান ফকরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি নিস্পত্তির জন্য নিমপাড়া ইউপির 

চেয়ারম্যানকে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া জন্য বলা হলে তৎকালিন সময়ের ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান নোটিশের মাধ্যমে দুপক্ষকে পরিষদে ডাকলেও মুকুল পক্ষ বরাবরই ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে পরিষদে উপস্থিত থেকে বিরত থাকতেন। 

ফলে বিষয়ীট নিস্পত্তি করা সম্ভব হয়নি। এ দিকে নিহতের স্ত্রী রুপা বেগম বলেন, আমার স্বামী যারা হত্যা করেছে আমি তাদের ফাসি চাই। আমার এক মাত্র সন্তানকে পিতাহারা করেছে সেই খুনি মুকুলের ফাসি চাই বলে এক মাত্র সন্তানকে বুকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

নিহতের স্ত্রী ছাড়াও ওই এলাকার সাধারন মানুষের দাবি খুনের ঘটনার দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি নিশ্চিত হোক। 

মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, সংঘর্ষের ঘটনার সংবাদ পেয়ে দ্রুত পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়। এ ঘটনায় 

খোকন আলী নামের একজন ব্যাক্তি নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। রাতভর অভিযান চালিয়ে প্রাথমিক ভাবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ১৮জনকে আটক করা হয়েছে। মুল আসামী মুকুলসহ অন্যদের আটক করতে 

অভিযান চলমান রয়েছে। লাশ ময়না তদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। আসামীদের আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। 

রাজশাহীর সময় / এম আর