২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ১২:১৬:২৮ পূর্বাহ্ন


ক্রিকেটের জন্য ছেলে সেজেছিলো সেই মেয়েই ‘বিশ্বকাপের রানি
ক্রিড়া ডেস্ক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩১-০১-২০২৩
ক্রিকেটের জন্য ছেলে সেজেছিলো সেই মেয়েই ‘বিশ্বকাপের রানি ক্রিকেটের জন্য ছেলে সেজেছিলো সেই মেয়েই ‘বিশ্বকাপের রানি


চুঁচুড়ার তিতাস সাধু যেন ‘দিল বোলে হাড়িপ্পা’ সিনেমার রানি মুখোপাধ্যায়। সেই বিখ্যাত সিনেমার ওই গল্পের কথা মনে রয়েছে? ওই সিনেমায় রানি একগাল দাড়ি নিয়ে ছেলে সেজে ক্রিকেট খেলতে নেমে বাজিমাত করেছিলেন। ছেলেদের সঙ্গে খেলে আত্মবিশ্বাসের চূড়োয় পৌঁছে গিয়েছিলেন। 

সেরকমই একজন বিশ্বকাপজয়ী তারকার জীবনের কাহিনি যেন সিনেমার গল্পকেও হার মানাবে। তিতাস সাধুর জীবন নিয়েই ভাল একটা সিনেমা হতে পারে। এমন গল্পে চিত্রনাট্যকারদের হাত নিশপিশ করবে, সন্দেহ নেই। 

অনূর্ধ্ব ১৯ মহিলা বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনালে বাংলার এই ক্রিকেটারের স্বপ্নের বোলিং বিপক্ষকে তছনছ করে দিয়েছে। চার ওভার হাত ঘুরিয়ে মাত্র ছয় রানে দুই উইকেট তুলে নেন তিতাস। ম্যাচ সেরার পুরস্কারও দখল করেন তিনি।

তিতাসের বাবা ছিলেন ভাল অ্যাথলিট। রাজ্য স্তরেও সফল হয়েছিলেন। তিনিও চেয়েছিলেন মেয়ে যেন তাঁর মতোই অ্যাথলিট হয়। কিন্তু তিতাস অ্যাথলিট দিয়ে জীবন শুরু করলেও পরবর্তীকালে সাঁতারেও নাম করেছিলেন। বাবা অবশ্য লক্ষ্য করেন মেয়ের শখ ক্রিকেটার হওয়ার। কিন্তু স্থানীয় ক্লাবে মহিলাদের প্র্যাকটিসের কোনও সুযোগ ছিল না। তাই ক্রিকেটের জন্য তিতাসকে বাধ্য হয়ে ছেলে সাজতে হয়। 

ওভাবেই দিনের পর দিন খেলে গিয়েছেন তিতাস। ১৩ থেকে ১৭ বছর পর্যন্ত ডুবেছিলেন ক্রিকেটেই। স্বচ্ছল পরিবারে জন্মালেও প্রতিপদে লড়াই করেই এগোতে হয়েছে তাঁকে। পরামর্শ পেয়েছেন ঝুলন গোস্বামীরও।  

তিতাসের বাবা রণদীপ সাধু এদিনও বলেছেন, ‘‘আমার মেয়ে বলে বলছি না, কিন্তু অসম্ভব মনের জেদ ওকে অনেকটা এগিয়ে দিয়েছে। ছোটবেলা থেকেই ভাল অ্যাথলিট ছিল তিতাস। ভাল সাঁতারও কাটত। কিন্তু ছেলেদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলে মনের জোরটা বেড়েছে। প্রথমে তো ওকে নিতে চাইত না, পরে ছেলে সেজে জেলা লিগেও খেলেছে।’’

তিতাসের বাবা রণদীপ আরও বলেন, ‘‘চুঁচুড়া ক্রিকেট সংস্থার সব কর্তাই জানে কী ভাবে দিনের পর দিন কঠোর পরিশ্রম করেছে আমার মেয়ে। সেই পরিশ্রমের ফল পেয়েছে। আগামী দিনেও আরও কঠিন পরিশ্রম করে যেতে হবে। খেলোয়াড়দের জীবন এরকমই হয়। একদিন ছয় মারে, আর এক দিন শূন্য রানে আউট হয়। তাই ভাল সময়ের পাশাপাশি খারাপ সময়েও পাশে থাকুক সবাই, এটাই চাই।’’  

তিতাসের মা ভ্রমর সাধু বলেন, ‘‘আমি খুশি তিতাসের সাফল্যে। তবে সবে শুরু করেছে। আগামীতে এখনও অনেক পথ বাকি। মাটিতে পা রেখে যেন সামনে এগিয়ে চলতে পারে, সেই আশীর্বাদ করতে চাই।’’

এদিন তিতাসের বাড়িতে গিয়ে তাঁর বাবা মায়ের হাতে ফুলের স্তবক তুলে দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছে হুগলি জেলা তৃণমূল। বাড়িতে যান ধনেখালির বিধায়ক তৃণমূল চেয়ারপার্সন অসীমা পাত্র, চাঁপদানীর বিধায়ক তথা তৃণমূল জেলা সভাপতি অরিন্দম গুঁই, চুঁচুড়ার বিধায়ক অসিত মজুমদার, হুগলি জেলা মহিলা তৃণমূল শিল্পী চট্টোপাধ্যায়, জেলা যুব তৃণমূল সভানেত্রী রুনা খাতুন, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ মনোজ চক্রবর্তী, চুঁচুড়া পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান গৌরীকান্ত মুখোপাধ্যায়।